০৪:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
আদানিকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের সিদ্ধান্ত ইসলামাবাদ আদালতের বাইরে আত্মঘাতী হামলায় নিহত ১২, আহত ২৭ গ্লোবাল ফাইন্যান্সের মূল্যায়নে ‘সি’ গ্রেড পেলেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর পাকিস্তান ২৭তম সংশোধনী বিল অনুমোদিত, বাড়বে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতাও বিচার বিভাগে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ মোহাম্মদপুরে ছাত্রদল নেতার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানের জামিয়াতে উলেমা-ই-ইসলাম প্রধান মৌলানা ফজলুর রহমান মুদ্রাস্ফীতির সময় টিআইপিএস বন্ডের সীমাবদ্ধতা  আফগান-পাকিস্তান আলোচনায় অচলাবস্থা: সীমান্তে আবারও সংঘাতের আশঙ্কা দুবাই মেট্রোর ব্লু লাইন নির্মাণে নতুন ১০টির বেশি সড়ক পরিবর্তন ‘ঠান্ডায় খাও, জ্বরে উপোস’—প্রচলিত ধারণার পেছনের আসল সত্য

ইশকুল (পর্ব-৫৫)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
  • 25

আর্কাদি গাইদার

সপ্তম পরিচ্ছেদ

ক্লাসের মনিটর প্রার্থনা-বাক্য আউড়ে গেল। ছেলেরা দমান্দম ডেস্কের ঢাকা বন্ধ করে একের পর এক ছুটে বেরিয়ে গেল। ক্লাসরুম গেল ফাঁকা হয়ে। একা বসে রইলুম আমি।

অসহ্য কষ্ট হতে লাগল। ‘হা ভগবান! আরও তিন ঘণ্টা তিন-তিনটে আন্ত ঘণ্টা, ওদিকে বাবা বাড়িতে, আর সব কী রকম গোলমেলে…’

নিচে নেমে গেলুম। টিচার্স রুমের বাইরে একটা লম্বা সর্ বেঞ্চি পাতা, তাতে ছুরি দিয়ে নানারকম আঁকিবুকি কাটা। তিনটে ছেলে আগে থেকেই বসে আছে সেখানে। ওদের মধ্যে একজন প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। ক্লাসের অপর এক ছেলের গায়ে কাগজ চিবিয়ে গুলি পাকিয়ে ছড়ে মারার জন্যে তার এক ঘণ্টা আটক থাকার শান্তি। দ্বিতীয় জন আটক মারামারি করার দায়ে। আর তৃতীয় জন সি’ড়ির তেতলার চাতাল থেকে নিচের একজন ছাত্রের মাথায় টিপ করে থুথু ফেলার চেষ্টায় শান্তি ভোগ করছিল।

আমি বেঞ্চিটায় বসে গেলুম, ভাবনার বোঝা মাথায় নিয়ে। দারোয়ান সেমিওন চাবির গোছার ঝনা নাত্ আওয়াজ তুলে চলে গেল।

আটক ছাত্রদের ওপর নজর রাখার দায়িত্ব যে মাস্টারমশাইয়ের, এক সময়ে তিনি বাইরে এলেন। একটা হাই তুলে ফের অদৃশ্য হয়ে গেলেন তিনি।

নিঃশব্দে বেঞ্চি ছেড়ে উঠে টিচার্স’ রুমের দরজার ফাঁক দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালুম। অ্যাঁ? মাত্র আধঘণ্টা কেটেছে এতক্ষণে? অথচ আমি দিব্যি গেলে বলতে পারতুম অন্তত এক ঘণ্টা ওই বেঞ্চিতে বসে ছিলুম।

হঠাৎই একটা বজ্জাতি বুদ্ধি মাথায় খেলে গেল:

‘দূর হোক গে ছাই। আমি কি চোর? না, জেলে আটক আছি? বাড়িতে আমার বাবা এসেছেন, দু-বছর তাঁর সঙ্গে দেখা নেই, আর এখন আজগবি, রহস্যময় সব ব্যাপারস্যাপারের মধ্যে দিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে হচ্ছে। আর এদিকে আমাকে আবার জেলের কয়েদীর মতো এখানে বসে থাকতে হচ্ছে। কেন? না, ইনস্পেক্টর আর জার্মানভাষার শিক্ষিকার মাথায় পোকা নড়েছে যে আমায় জব্দ না করলে চলছে না!’

দাঁড়িয়ে উঠলুম। তবু, ইতস্তত করতে লাগলুম। যখন কাউকে আটক রাখা হয় তখন অনুমতি না নিয়ে চলে যাওয়ার মতো ঘৃণ্য অপরাধ ইশকুলের ছাত্রদের পক্ষে আর হয় না।

ঠিক করলুম, ‘নাঃ, বরং অপেক্ষা করাই ভালো।’ ফিরে এসে বেঞ্চিতে আবার বসলুম।

কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে এবটা অসহ্য রাগের ভাব আমাকে পেয়ে বসল। ‘কিসের পরোয়া? বাবা তো ফ্রন্ট থেকেই দিব্যি পালিয়ে চলে এসেছেন। আর আমি এখান থেকে পালাতে ভয় পাচ্ছি?’ তিক্ত হাসি হেসে ভাবলুম।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

আদানিকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের সিদ্ধান্ত

ইশকুল (পর্ব-৫৫)

০৮:০০:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

আর্কাদি গাইদার

সপ্তম পরিচ্ছেদ

ক্লাসের মনিটর প্রার্থনা-বাক্য আউড়ে গেল। ছেলেরা দমান্দম ডেস্কের ঢাকা বন্ধ করে একের পর এক ছুটে বেরিয়ে গেল। ক্লাসরুম গেল ফাঁকা হয়ে। একা বসে রইলুম আমি।

অসহ্য কষ্ট হতে লাগল। ‘হা ভগবান! আরও তিন ঘণ্টা তিন-তিনটে আন্ত ঘণ্টা, ওদিকে বাবা বাড়িতে, আর সব কী রকম গোলমেলে…’

নিচে নেমে গেলুম। টিচার্স রুমের বাইরে একটা লম্বা সর্ বেঞ্চি পাতা, তাতে ছুরি দিয়ে নানারকম আঁকিবুকি কাটা। তিনটে ছেলে আগে থেকেই বসে আছে সেখানে। ওদের মধ্যে একজন প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। ক্লাসের অপর এক ছেলের গায়ে কাগজ চিবিয়ে গুলি পাকিয়ে ছড়ে মারার জন্যে তার এক ঘণ্টা আটক থাকার শান্তি। দ্বিতীয় জন আটক মারামারি করার দায়ে। আর তৃতীয় জন সি’ড়ির তেতলার চাতাল থেকে নিচের একজন ছাত্রের মাথায় টিপ করে থুথু ফেলার চেষ্টায় শান্তি ভোগ করছিল।

আমি বেঞ্চিটায় বসে গেলুম, ভাবনার বোঝা মাথায় নিয়ে। দারোয়ান সেমিওন চাবির গোছার ঝনা নাত্ আওয়াজ তুলে চলে গেল।

আটক ছাত্রদের ওপর নজর রাখার দায়িত্ব যে মাস্টারমশাইয়ের, এক সময়ে তিনি বাইরে এলেন। একটা হাই তুলে ফের অদৃশ্য হয়ে গেলেন তিনি।

নিঃশব্দে বেঞ্চি ছেড়ে উঠে টিচার্স’ রুমের দরজার ফাঁক দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালুম। অ্যাঁ? মাত্র আধঘণ্টা কেটেছে এতক্ষণে? অথচ আমি দিব্যি গেলে বলতে পারতুম অন্তত এক ঘণ্টা ওই বেঞ্চিতে বসে ছিলুম।

হঠাৎই একটা বজ্জাতি বুদ্ধি মাথায় খেলে গেল:

‘দূর হোক গে ছাই। আমি কি চোর? না, জেলে আটক আছি? বাড়িতে আমার বাবা এসেছেন, দু-বছর তাঁর সঙ্গে দেখা নেই, আর এখন আজগবি, রহস্যময় সব ব্যাপারস্যাপারের মধ্যে দিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে হচ্ছে। আর এদিকে আমাকে আবার জেলের কয়েদীর মতো এখানে বসে থাকতে হচ্ছে। কেন? না, ইনস্পেক্টর আর জার্মানভাষার শিক্ষিকার মাথায় পোকা নড়েছে যে আমায় জব্দ না করলে চলছে না!’

দাঁড়িয়ে উঠলুম। তবু, ইতস্তত করতে লাগলুম। যখন কাউকে আটক রাখা হয় তখন অনুমতি না নিয়ে চলে যাওয়ার মতো ঘৃণ্য অপরাধ ইশকুলের ছাত্রদের পক্ষে আর হয় না।

ঠিক করলুম, ‘নাঃ, বরং অপেক্ষা করাই ভালো।’ ফিরে এসে বেঞ্চিতে আবার বসলুম।

কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে এবটা অসহ্য রাগের ভাব আমাকে পেয়ে বসল। ‘কিসের পরোয়া? বাবা তো ফ্রন্ট থেকেই দিব্যি পালিয়ে চলে এসেছেন। আর আমি এখান থেকে পালাতে ভয় পাচ্ছি?’ তিক্ত হাসি হেসে ভাবলুম।