০৩:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-৮২)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 18

চৈত্র-পুজা

চারিদিকের জমাট-অন্ধকারের উপর তাহাদের ধূপতির আগুন নানারকমের নকশা আঁকিয়া নিবিয়া যাইতেছিল। শ্মশানঘাটের এই ভীতিবহুল সমাবেশে তাহাদের ধূপতিনাচ মনে এক অভূতপূর্ব ভাবের সমাবেশ করিতেছিল। এই ধূপতিনাচের লোক এখন আর দেখা যায় না। শ্রীঅজিত মুখার্জির সাহায্যে পরলোকগত গুরুসদয় দত্ত মহাশয় একবার ফরিদপুর জেলা হইতে একটি ধুপতিনাচের দল কলিকাতায় লইয়া গিয়াছিলেন। খুব সম্ভব গুরুসদয় বাবু এই নাচের একটি ফিল্মও তুলিয়া লইয়াছিলেন।

আজকাল যাঁহারা নৃত্যকলা লইয়া নতুন কিছু সৃষ্টি করিতে চান, তাঁহারা এই ধূপতিনাচের অনুসন্ধান লইতে পারেন। হয়তো নমঃশূদ্রবহুল গোপালগঞ্জ এলাকায় এখনও এই ধূপতিনাচের লোক পাওয়া যাইতে পারে।

লক্ষ্মীপুরের দল এবার হাজরা পূজা করিতে শ্মশানঘাটে আসিয়া পৌঁছিল। এবার যাদবের সঙ্গে মদন ঢুলির ঢাকবাদ্যের প্রতিযোগিতা। মদন যখন খুব দ্রুত-তালের একটি বাজনা বাজাইয়া ক্ষান্ত হইতেছিল, যাদব তখন আরও দ্রুত-তালে অপর একটি তাল বাজাইল।

তারপর বাজাইতে বাজাইতে ইচ্ছামতো তাল ভঙ্গ করিয়া আবার তালে আসিয়া বাজনা শেষ করিয়া দিল। মদন ঢুলিও কম গেল না। সেই দুই হাতে ঢাকের কাঠি ধরিয়া ঢাকের চামড়ার উপর হাতের কবজি ঘষিয়া এমনি একটি বাদ্য বাহির করিল যে আমরা ভাবিলাম, এবার বুঝি মদন চুলির কাছে যাদব হারিয়া যাইবে। কিন্তু যাদব ছাড়িবার পাত্র নয়। সে তার ঢাকটি ছোট ভাই জুড়ানের পিঠের উপর রাখিয়া তার ঢাককাঠির গোড়ালি দিয়া এমনি আর একটি বাজনা তুলিল, আমাদের মনে হইল, সেই বাজনার তালে তালে আকাশ-জমিন কাঁপিয়া উঠিতেছে।

শুনিয়াছি কোথায় এক হাজরা পূজা হইতেছিল। ঢাকি এমনই করিয়া ডাকবাদ্য করিয়াছিল যে তাহার তালে তালে বালা, সন্ন্যাসী সকলেই শূন্যে উড়িয়া গিয়াছিল। আজ এই দুই ঢুলির বাদ্য শুনিয়া আমার সে-কাহিনী সত্য বলিয়া মনে হইল। হাজরা পূজা শেষ হইলে আমরা সকলে যার যার বাড়ি চলিয়া গেলাম। যাইবার সময় সকলেই বলাবলি করিল, যাদব আর মদন দুইজনেই ভালো ঢাক বাজায়। কে কার চাইতে বড় বলা যায় না। যদিও ইহাদের বাংলা নাম কিন্তু ইহারা দুইজনই মুসলমান।

চলবে…

পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের স্মৃতিকথা (পর্ব-৮২)

১১:০০:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

চৈত্র-পুজা

চারিদিকের জমাট-অন্ধকারের উপর তাহাদের ধূপতির আগুন নানারকমের নকশা আঁকিয়া নিবিয়া যাইতেছিল। শ্মশানঘাটের এই ভীতিবহুল সমাবেশে তাহাদের ধূপতিনাচ মনে এক অভূতপূর্ব ভাবের সমাবেশ করিতেছিল। এই ধূপতিনাচের লোক এখন আর দেখা যায় না। শ্রীঅজিত মুখার্জির সাহায্যে পরলোকগত গুরুসদয় দত্ত মহাশয় একবার ফরিদপুর জেলা হইতে একটি ধুপতিনাচের দল কলিকাতায় লইয়া গিয়াছিলেন। খুব সম্ভব গুরুসদয় বাবু এই নাচের একটি ফিল্মও তুলিয়া লইয়াছিলেন।

আজকাল যাঁহারা নৃত্যকলা লইয়া নতুন কিছু সৃষ্টি করিতে চান, তাঁহারা এই ধূপতিনাচের অনুসন্ধান লইতে পারেন। হয়তো নমঃশূদ্রবহুল গোপালগঞ্জ এলাকায় এখনও এই ধূপতিনাচের লোক পাওয়া যাইতে পারে।

লক্ষ্মীপুরের দল এবার হাজরা পূজা করিতে শ্মশানঘাটে আসিয়া পৌঁছিল। এবার যাদবের সঙ্গে মদন ঢুলির ঢাকবাদ্যের প্রতিযোগিতা। মদন যখন খুব দ্রুত-তালের একটি বাজনা বাজাইয়া ক্ষান্ত হইতেছিল, যাদব তখন আরও দ্রুত-তালে অপর একটি তাল বাজাইল।

তারপর বাজাইতে বাজাইতে ইচ্ছামতো তাল ভঙ্গ করিয়া আবার তালে আসিয়া বাজনা শেষ করিয়া দিল। মদন ঢুলিও কম গেল না। সেই দুই হাতে ঢাকের কাঠি ধরিয়া ঢাকের চামড়ার উপর হাতের কবজি ঘষিয়া এমনি একটি বাদ্য বাহির করিল যে আমরা ভাবিলাম, এবার বুঝি মদন চুলির কাছে যাদব হারিয়া যাইবে। কিন্তু যাদব ছাড়িবার পাত্র নয়। সে তার ঢাকটি ছোট ভাই জুড়ানের পিঠের উপর রাখিয়া তার ঢাককাঠির গোড়ালি দিয়া এমনি আর একটি বাজনা তুলিল, আমাদের মনে হইল, সেই বাজনার তালে তালে আকাশ-জমিন কাঁপিয়া উঠিতেছে।

শুনিয়াছি কোথায় এক হাজরা পূজা হইতেছিল। ঢাকি এমনই করিয়া ডাকবাদ্য করিয়াছিল যে তাহার তালে তালে বালা, সন্ন্যাসী সকলেই শূন্যে উড়িয়া গিয়াছিল। আজ এই দুই ঢুলির বাদ্য শুনিয়া আমার সে-কাহিনী সত্য বলিয়া মনে হইল। হাজরা পূজা শেষ হইলে আমরা সকলে যার যার বাড়ি চলিয়া গেলাম। যাইবার সময় সকলেই বলাবলি করিল, যাদব আর মদন দুইজনেই ভালো ঢাক বাজায়। কে কার চাইতে বড় বলা যায় না। যদিও ইহাদের বাংলা নাম কিন্তু ইহারা দুইজনই মুসলমান।

চলবে…