১১:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

টলস্টয়ের স্মৃতি (পর্ব- ০৪)

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৫৬:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
  • 17

ম্যাকসিম গোর্কী

ছয়

“অল্পসংখ্যক মানুষে ভগবানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, কারণ, ভগবান ছাড়া তাদের আর সব কিছুই আছে। কিন্তু অধিকাংশ লোকে ভগবানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, কারণ, তাদের ভগবান ছাড়া আর কিছুই নেই।” আমি এই কথাটিকে অন্যভাবে বলতে চাইঃ অধিকাংশ লোকই ভগবানে বিশ্বাস করে, কারণ তারা ভীরু। সত্তার পূর্ণতার ফলে ভগবানে বিশ্বাস করে মাত্র কদাচিৎ কেউ।

তিনি চিন্তাজড়িত কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন, ‘এণ্ডারসেনের গল্পগুলি কি তোমার ভালো লাগে? মার্কো-ভাঙকের অনুবাদে যখন সেগুলি প্রথম প্রকাশিত হোলো, তখন আমি কিছু বুঝে উঠতে পারি নি। কিন্তু বছর দশেক পরে বইখানা নিয়ে আবার যখন পড়লাম, তখন অকস্মাৎ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করলাম, এণ্ডারসেন ছিলেন একা-ভারী একা। আমি তাঁর জীবন সম্বন্ধে কিছুই জানি না। কিন্তু আমার মনে হয়, তিনি উচ্ছৃংখলভাবে জীবন যাপন করেছিলেন এবং ভ্রমণ করেছিলেন প্রচুর পরিমাণে। কিন্তু একটি বিষয়ে আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে তিনি ছিলেন একা। আর একা ছিলেন ব’লেই তিনি ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সংগে আলাপ করতে চাইতেন। অবশ্য, বয়স্কদের চেয়ে ছোটোরা মানুষের দুঃখ বেশি বোঝে, একথা ভাবা যদিও ভুল। কিছুরই জন্য শিশুদের করুণা হয় না; কারণ করুণা কাকে বলে তাই তারা জানে না।

সাত

তিনি আমাকে বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্রগুলি পড়তে উপদেশ দেন। বৌদ্ধধর্ম এবং খৃস্ট সম্বন্ধে তিনি সর্বদাই গদগদ হ’য়ে ওঠেন। খৃস্ট সম্বন্ধে যখন তিনি কিছু বলেন, তখন তাঁর কথাগুলি অদ্ভুত একটি অকিঞ্চনতায় ভরে থাকে। শব্দগুলির মধ্যে উৎসাহ থাকে না, অনুভূতি থাকে না। সত্যিকারের আগুনের কোনো স্ফুলিংগ প্রকাশ পায় না। আমার মনে হয়, খৃস্টকে তিনি সহজ মানুষ রূপেই ভাবেন, তাঁর জন্য তিনি করুণাবোধ করেন। যদিও মাঝে মাঝে তিনি তাঁর প্রশংসা করেন,তথাপি তিনি তাঁকে কদাচিৎ ভালোবাসেন ব’লে মনে করি। মাঝে মাঝে তিনি যেন অধীর হয়ে উঠেন: খৃস্ট যদি রুশদেশের কোনো গ্রামে আসেন, তবে মেয়েরা হয়তো তাঁকে উপহাস করবে, বিদ্রূপ করবে, লাঞ্ছনা দেবে এই ভয়।

 

টলস্টয়ের স্মৃতি (পর্ব- ০৪)

০৩:৫৬:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

ম্যাকসিম গোর্কী

ছয়

“অল্পসংখ্যক মানুষে ভগবানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, কারণ, ভগবান ছাড়া তাদের আর সব কিছুই আছে। কিন্তু অধিকাংশ লোকে ভগবানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, কারণ, তাদের ভগবান ছাড়া আর কিছুই নেই।” আমি এই কথাটিকে অন্যভাবে বলতে চাইঃ অধিকাংশ লোকই ভগবানে বিশ্বাস করে, কারণ তারা ভীরু। সত্তার পূর্ণতার ফলে ভগবানে বিশ্বাস করে মাত্র কদাচিৎ কেউ।

তিনি চিন্তাজড়িত কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন, ‘এণ্ডারসেনের গল্পগুলি কি তোমার ভালো লাগে? মার্কো-ভাঙকের অনুবাদে যখন সেগুলি প্রথম প্রকাশিত হোলো, তখন আমি কিছু বুঝে উঠতে পারি নি। কিন্তু বছর দশেক পরে বইখানা নিয়ে আবার যখন পড়লাম, তখন অকস্মাৎ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করলাম, এণ্ডারসেন ছিলেন একা-ভারী একা। আমি তাঁর জীবন সম্বন্ধে কিছুই জানি না। কিন্তু আমার মনে হয়, তিনি উচ্ছৃংখলভাবে জীবন যাপন করেছিলেন এবং ভ্রমণ করেছিলেন প্রচুর পরিমাণে। কিন্তু একটি বিষয়ে আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে তিনি ছিলেন একা। আর একা ছিলেন ব’লেই তিনি ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সংগে আলাপ করতে চাইতেন। অবশ্য, বয়স্কদের চেয়ে ছোটোরা মানুষের দুঃখ বেশি বোঝে, একথা ভাবা যদিও ভুল। কিছুরই জন্য শিশুদের করুণা হয় না; কারণ করুণা কাকে বলে তাই তারা জানে না।

সাত

তিনি আমাকে বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্রগুলি পড়তে উপদেশ দেন। বৌদ্ধধর্ম এবং খৃস্ট সম্বন্ধে তিনি সর্বদাই গদগদ হ’য়ে ওঠেন। খৃস্ট সম্বন্ধে যখন তিনি কিছু বলেন, তখন তাঁর কথাগুলি অদ্ভুত একটি অকিঞ্চনতায় ভরে থাকে। শব্দগুলির মধ্যে উৎসাহ থাকে না, অনুভূতি থাকে না। সত্যিকারের আগুনের কোনো স্ফুলিংগ প্রকাশ পায় না। আমার মনে হয়, খৃস্টকে তিনি সহজ মানুষ রূপেই ভাবেন, তাঁর জন্য তিনি করুণাবোধ করেন। যদিও মাঝে মাঝে তিনি তাঁর প্রশংসা করেন,তথাপি তিনি তাঁকে কদাচিৎ ভালোবাসেন ব’লে মনে করি। মাঝে মাঝে তিনি যেন অধীর হয়ে উঠেন: খৃস্ট যদি রুশদেশের কোনো গ্রামে আসেন, তবে মেয়েরা হয়তো তাঁকে উপহাস করবে, বিদ্রূপ করবে, লাঞ্ছনা দেবে এই ভয়।