০৭:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
চিতা-বাঘের শেষ আলোঝলক ঢাকা শহরের বাস সেবা: আধুনিকায়নের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগন্নাথ মন্দির আর প্রসাদ বিতরণ নিয়ে কেন রাজনৈতিক বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গে? মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ও গঙ্গা জলচুক্তি নবায়ন নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: বাংলাদেশের বড় একটি ভুল, প্রতিশোধ বনাম সংস্কার সাকিব আল হাসান: বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক অমর কিংবদন্তি বাংলা নাটকের সুপারস্টার অপূর্বের জন্মদিন আজ শিবসা নদী: শতবর্ষী এক প্রাণপ্রবাহ ও তার সুন্দরবনের প্রভাব ইরান যুদ্ধ ও ‘ট্রাম্প নীতি’ চীনের বহুমুখী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে ঘোলাটে করে দিচ্ছে

তিন ‘কৌশলে’ চিন্ময়ের আইনজীবীদের দাঁড়াতে না দেয়ার অভিযোগ

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৪২:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 14

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গনে আইনজীবীদের মিছিল

হারুন উর রশীদ স্বপন 

চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের পক্ষে চট্টগ্রামের আদালতে একজন আইনজীবীও দাঁড়াননি। সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের অভিযোগ – মামলা, হামলা এবং হুমকি দিয়ে আদালতে কোনো আইনজীবীকে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে প্রেপ্তার চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে আদালতে নেয়া হয়নি। তার এবং তার আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতেই জামিনের শুনানির পরবর্তী তারিখ (২ জানুয়ারি) নির্ধারণ করেন চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালত৷

সনাতনী জাগরণ জোট এক বিবৃতিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে কোনো আইনজীবীকে জামিন আবেদনের জন্য দাঁড়াতে না দেয়ার অভিযোগ করেছে৷ বিবৃতিতে বলা হয়, “ইতিমধ্যে যেসব আইনজীবী চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৭০ জনকে মামলার আসামি করা হয়েছে। অন্য যারা আছেন, তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে।” বিষয়টিকে আইনের শাসন ও মানবাধিকারের পরিপন্থি হিসেবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরো দাবি করা হয়,” অদৃশ্য চাপে আদালত তার জামিন শুনানিতে দেরি করছেন। আদালত ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছেন।”

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের প্রশ্ন, ‘‘তাহলে সরকার কী চায়? বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা কি স্বাধীন? এভাবে চললে বাংলাদেশের সনাতনীসহ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?”

সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ দাস প্রভু ডয়চে ভেলেকে বলেন,” আসলে আমাদের ৭০ জনের বেশি হিন্দু আইনজীবীকে মামলায় আসামি করায় তারা কেউ আদালতে যেতে পারেননি। তারপরও আমরা ঢাকা থেকে আইনজীবী আনার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু একদিন আগে থেকেই ‘তারা‘ হুমকি দিতে থাকে। সকালে আদালত এলাকায় ‘ওই আইনজীবীরা’ মিছিল বের করে, ফলে আমাদের পক্ষে আইনজীবী দেয়া সম্ভব হয়নি।” এ সময় দুজন আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে তার ওপর হামলা এবং অন্য জনের ভয়ে আত্মগোপনে থাকার কথাও বলেন গৌরাঙ্গ দাস প্রভু,  ‘‘এর আগে আইনজীবী রিগ্যান আচার্যের চেম্বারে হামলা হয়েছে। তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে আহত করা হয়। আইনজীবী শুভাশীষ ভয়ে আত্মগোপনে আছেন।”

তারা বৈষম্যের শিকার- এমন অভিযোগও উঠে আসে তার কথায়, “৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভুত্থানের মূল বিষয় হলো বেষম্যহীন রাষ্ট্র । অথচ আমরা এখন বৈষম্যের শিকার।”

‘আইনজীবীদের ওপর তো হামলা হয়’

তবে চট্টগ্রাম মহানগর জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর(পিপি) অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভুঁইয়া মনে করেন, ‘‘কোনো আইনজীবীকে আসতে দেয়া হয়নি এই অভিযোগ ঠিক নয়।” তিনি বলেন, ‘‘চিন্ময় দাশের পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী আসেননি। জামিন আবেদনের জন্য মামলাটি এক নাম্বারে ছিল। কিন্তু আদালত বার বার ডাকার পরও চিন্ময় দাশের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি।”

মফিজুল হক ভুঁইয়ার দাবি, “আদালত এলাকায় যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল। আমি নিজেও কোতোয়ালী থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার ব্যাপারে আগেই নিশ্চিত হয়েছি। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ছিল। কিন্তু চিন্ময় দাসের পক্ষে কোনো আইনজীবী না আসলে কী করা যাবে?”

চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষের কোনো আইনজীবী না এলেও মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গনে অনেক আইনজীবী মিছিল করেছেন৷ সেই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভুঁইয়া বলেন,” আদালত এলাকায় তো আইনজীবীরা মিছিল করেন। এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে মিছিল করে। এটা অতীতেও হয়েছে।”

সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ দাস প্রভুর বক্তব্যে উঠে আসা আহত আইনজীবীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন,” আইনজীবীদের ওপর তো হামলা হয়। আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে তো হত্যাই করা হলো।”

তার জোর দাবি, ” মঙ্গলবার আদালতে নিরাপত্তার অভাব ছিলনা। আর নিরাপত্তা না থাকলে  বিচার হবে কীভাবে? আদালতে তো মারামারি হয় না।  চিন্ময় দাশের আইনজীবী না থাকায় আদালত তার জামিন বাতিল না করে আবার নতুন করে জামিন শুনানির দিন ধার্য করেছেন। কেউ জামিনের আবেদন না করলে তো আর আদালত তাকে জামিন দিতে পারেন না। তার পক্ষে কোনো জামিনের আবেদন ছিল না।” চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে কোনো আইনজীবী না দাঁড়ানোর বিষয়ে তার বক্তব্য, ‘‘আইজীবী কারুর বিরুদ্ধে মামলা থাকায় তিনি যদি আদালতে না আসেন তাহলে তো আদালতের কিছু করার নেই।”

তবে এখনো মামলার শিকার হননি এমন একজন আইনজীবী মঙ্গলবার আদালতে গিয়েছিলেন চিন্ময় দাশের পক্ষে জামিন আবেদন জানাতে৷ নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই আইনজীবী ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমাকে মামলার আসামি করা হয়নি। ফলে আমি গিয়েছি। কিন্তু সকালে আদালতে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে আমি ওকালত নামায় সই করে জামিন আবেদন করার সাহস পাইনি। সেখানে জামিন আবেদন যাতে কেউ না করে এমন হুমকি দেয়া হচ্ছিল। ফলে আমি নিরাপত্তার কারণে আদালত থেকে চলে আসি।”

মঙ্গলবার চিন্ময়ের জামিন শুনানির তারিখ থাকায় সকাল থেকেই চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় ছিল কঠোর নিরাপত্তা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য আদালত এলাকার বিভিন্ন অংশে অবস্থান নেন। আইনজীবী সমিতির নেতা ও সাধারণ আইনজীবীদের একাংশকে সকালে আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করতে দেখা যায়।

গত ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলায় জামিনের আবেদন নাকচ করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম কাজী শরীফুল ইসলাম। ওই দিন চট্টগ্রামে ব্যাপক সহিংসতা হয়। নিহত হন আইজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ।

ওই দিন চিন্ময় দাসের আইনজীবী রিগ্যান আচার্যের ওপর হামলা হয় বলে জানান তার ভাই ক্লিনটন আচার্য। তিনি বলেন, ” প্রথমে আমার ভাইয়ে চেম্বারে হামলা হয়। এরপর তার ওপর হামলা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।  তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত করা হয়েছে। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।”

চট্টগ্রামের আদালতের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল কোতোয়ালি থানা পুলিশ। ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমরা অভাবনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলাম। আদালত এলাকা এবং আদালাতের বাইরে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়। এমনকি আদালতের সিঁড়ি এবং এজলাসের বাইরেও নিরাপত্তা ছিল। কোনো হুমকির ঘটনা ঘটেনি। তবে নিহত  আইনজীবী সাইফুলের পক্ষের আইনজীবীরা মিছিল করেছেন।”

“আর  কোনো মামলার আসামি যদি কোনো আইনজীবী হয়, তারা ভয়ে আদালতে না-ই আসতে পারেন। এখানে নিরাপত্তার কোনো প্রশ্ন নাই,” বলেন তিনি।

গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে জনসভার চারদিন পর (৩০ অক্টোবর) চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়, সেখানে চিন্ময় দাশকেও আসামি করা হয়।

মামলা হওয়ার প্রায় এক মাস পর গত ২৫ নভেম্বর বিকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে আটক করা হয়। সেদিন রাতেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে পরের দিন আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

ডিডাব্লিউ ডটকম

 

চিতা-বাঘের শেষ আলোঝলক

তিন ‘কৌশলে’ চিন্ময়ের আইনজীবীদের দাঁড়াতে না দেয়ার অভিযোগ

০৩:৪২:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

হারুন উর রশীদ স্বপন 

চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের পক্ষে চট্টগ্রামের আদালতে একজন আইনজীবীও দাঁড়াননি। সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের অভিযোগ – মামলা, হামলা এবং হুমকি দিয়ে আদালতে কোনো আইনজীবীকে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে প্রেপ্তার চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে আদালতে নেয়া হয়নি। তার এবং তার আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতেই জামিনের শুনানির পরবর্তী তারিখ (২ জানুয়ারি) নির্ধারণ করেন চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালত৷

সনাতনী জাগরণ জোট এক বিবৃতিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে কোনো আইনজীবীকে জামিন আবেদনের জন্য দাঁড়াতে না দেয়ার অভিযোগ করেছে৷ বিবৃতিতে বলা হয়, “ইতিমধ্যে যেসব আইনজীবী চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৭০ জনকে মামলার আসামি করা হয়েছে। অন্য যারা আছেন, তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে।” বিষয়টিকে আইনের শাসন ও মানবাধিকারের পরিপন্থি হিসেবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরো দাবি করা হয়,” অদৃশ্য চাপে আদালত তার জামিন শুনানিতে দেরি করছেন। আদালত ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছেন।”

বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের প্রশ্ন, ‘‘তাহলে সরকার কী চায়? বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা কি স্বাধীন? এভাবে চললে বাংলাদেশের সনাতনীসহ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?”

সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ দাস প্রভু ডয়চে ভেলেকে বলেন,” আসলে আমাদের ৭০ জনের বেশি হিন্দু আইনজীবীকে মামলায় আসামি করায় তারা কেউ আদালতে যেতে পারেননি। তারপরও আমরা ঢাকা থেকে আইনজীবী আনার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু একদিন আগে থেকেই ‘তারা‘ হুমকি দিতে থাকে। সকালে আদালত এলাকায় ‘ওই আইনজীবীরা’ মিছিল বের করে, ফলে আমাদের পক্ষে আইনজীবী দেয়া সম্ভব হয়নি।” এ সময় দুজন আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে তার ওপর হামলা এবং অন্য জনের ভয়ে আত্মগোপনে থাকার কথাও বলেন গৌরাঙ্গ দাস প্রভু,  ‘‘এর আগে আইনজীবী রিগ্যান আচার্যের চেম্বারে হামলা হয়েছে। তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে আহত করা হয়। আইনজীবী শুভাশীষ ভয়ে আত্মগোপনে আছেন।”

তারা বৈষম্যের শিকার- এমন অভিযোগও উঠে আসে তার কথায়, “৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভুত্থানের মূল বিষয় হলো বেষম্যহীন রাষ্ট্র । অথচ আমরা এখন বৈষম্যের শিকার।”

‘আইনজীবীদের ওপর তো হামলা হয়’

তবে চট্টগ্রাম মহানগর জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর(পিপি) অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভুঁইয়া মনে করেন, ‘‘কোনো আইনজীবীকে আসতে দেয়া হয়নি এই অভিযোগ ঠিক নয়।” তিনি বলেন, ‘‘চিন্ময় দাশের পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী আসেননি। জামিন আবেদনের জন্য মামলাটি এক নাম্বারে ছিল। কিন্তু আদালত বার বার ডাকার পরও চিন্ময় দাশের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি।”

মফিজুল হক ভুঁইয়ার দাবি, “আদালত এলাকায় যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল। আমি নিজেও কোতোয়ালী থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার ব্যাপারে আগেই নিশ্চিত হয়েছি। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ছিল। কিন্তু চিন্ময় দাসের পক্ষে কোনো আইনজীবী না আসলে কী করা যাবে?”

চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষের কোনো আইনজীবী না এলেও মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গনে অনেক আইনজীবী মিছিল করেছেন৷ সেই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভুঁইয়া বলেন,” আদালত এলাকায় তো আইনজীবীরা মিছিল করেন। এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে মিছিল করে। এটা অতীতেও হয়েছে।”

সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ দাস প্রভুর বক্তব্যে উঠে আসা আহত আইনজীবীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন,” আইনজীবীদের ওপর তো হামলা হয়। আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে তো হত্যাই করা হলো।”

তার জোর দাবি, ” মঙ্গলবার আদালতে নিরাপত্তার অভাব ছিলনা। আর নিরাপত্তা না থাকলে  বিচার হবে কীভাবে? আদালতে তো মারামারি হয় না।  চিন্ময় দাশের আইনজীবী না থাকায় আদালত তার জামিন বাতিল না করে আবার নতুন করে জামিন শুনানির দিন ধার্য করেছেন। কেউ জামিনের আবেদন না করলে তো আর আদালত তাকে জামিন দিতে পারেন না। তার পক্ষে কোনো জামিনের আবেদন ছিল না।” চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে কোনো আইনজীবী না দাঁড়ানোর বিষয়ে তার বক্তব্য, ‘‘আইজীবী কারুর বিরুদ্ধে মামলা থাকায় তিনি যদি আদালতে না আসেন তাহলে তো আদালতের কিছু করার নেই।”

তবে এখনো মামলার শিকার হননি এমন একজন আইনজীবী মঙ্গলবার আদালতে গিয়েছিলেন চিন্ময় দাশের পক্ষে জামিন আবেদন জানাতে৷ নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই আইনজীবী ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমাকে মামলার আসামি করা হয়নি। ফলে আমি গিয়েছি। কিন্তু সকালে আদালতে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে আমি ওকালত নামায় সই করে জামিন আবেদন করার সাহস পাইনি। সেখানে জামিন আবেদন যাতে কেউ না করে এমন হুমকি দেয়া হচ্ছিল। ফলে আমি নিরাপত্তার কারণে আদালত থেকে চলে আসি।”

মঙ্গলবার চিন্ময়ের জামিন শুনানির তারিখ থাকায় সকাল থেকেই চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় ছিল কঠোর নিরাপত্তা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য আদালত এলাকার বিভিন্ন অংশে অবস্থান নেন। আইনজীবী সমিতির নেতা ও সাধারণ আইনজীবীদের একাংশকে সকালে আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করতে দেখা যায়।

গত ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলায় জামিনের আবেদন নাকচ করে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম কাজী শরীফুল ইসলাম। ওই দিন চট্টগ্রামে ব্যাপক সহিংসতা হয়। নিহত হন আইজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ।

ওই দিন চিন্ময় দাসের আইনজীবী রিগ্যান আচার্যের ওপর হামলা হয় বলে জানান তার ভাই ক্লিনটন আচার্য। তিনি বলেন, ” প্রথমে আমার ভাইয়ে চেম্বারে হামলা হয়। এরপর তার ওপর হামলা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।  তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত করা হয়েছে। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।”

চট্টগ্রামের আদালতের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল কোতোয়ালি থানা পুলিশ। ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমরা অভাবনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলাম। আদালত এলাকা এবং আদালাতের বাইরে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়। এমনকি আদালতের সিঁড়ি এবং এজলাসের বাইরেও নিরাপত্তা ছিল। কোনো হুমকির ঘটনা ঘটেনি। তবে নিহত  আইনজীবী সাইফুলের পক্ষের আইনজীবীরা মিছিল করেছেন।”

“আর  কোনো মামলার আসামি যদি কোনো আইনজীবী হয়, তারা ভয়ে আদালতে না-ই আসতে পারেন। এখানে নিরাপত্তার কোনো প্রশ্ন নাই,” বলেন তিনি।

গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে জনসভার চারদিন পর (৩০ অক্টোবর) চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়, সেখানে চিন্ময় দাশকেও আসামি করা হয়।

মামলা হওয়ার প্রায় এক মাস পর গত ২৫ নভেম্বর বিকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে আটক করা হয়। সেদিন রাতেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে পরের দিন আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

ডিডাব্লিউ ডটকম