০২:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৩১)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 18

শ্রী নিখিলনাথ রায়

সে গৃহে আর কেহ থাকিত না; তথায় -মহারাজ বন্ধুবান্ধবগণের সহিত কথোপকথনে ও শাস্ত্রালাপে মৃত্যু-সময় পর্যন্ত অতিবাহিত করিয়াছিলেন। প্রাণদণ্ডাজ্ঞার পর দ্বাবিংশতি দিবস তিনি পাপময়ী পৃথিবীতে অবস্থান করিতে পারিয়াছিলেন। সেই কয় দিবস তাঁহার হৃদয়মধ্যে যে কিরূপ তরঙ্গ উত্থিত হইত, তাহা বুদ্ধিমানমাত্রেই বুঝিতে পারেন; কিন্তু তিনি সে ভাব কাহারও নিকট প্রকাশ করিতেন না।

ক্রমে ক্রমে তিনি হৃদয়কে দৃঢ় করিয়া মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হন এবং নির্ভীকচিত্তে সেই অন্তিম সময়ের অপেক্ষা করিতেছিলেন। এই সময়ে তিনি নিজড়ীষহীনতার কথা উল্লেখ করিয়া ফ্রান্সিস ও ক্লেভারিংকে একখানি পত্র লেখেন। তাঁহারা মহারাজকে বাঁচাইবার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই।

নবাব মোবারক উদ্দৌলাও কাউন্সিলে এইরূপ পত্র লিখিয়াছিলেন যে, যতদিন পর্য্যন্ত ইংলণ্ডাধিপের এ সম্বন্ধে মতামত না আইসে, ততদিন অবধি মহারাজের প্রাণদণ্ডের আদেশ প্রতিপালন না করা হয়; কিন্তু তাহাতেও কোন ফলোদয় হয় নাই। আমরা পূর্ব্বে উল্লেখ করিয়াছি যে, হেষ্টিংস, প্রভৃতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ উপস্থিত, হয়, তাহার দিন জালকরা মোকদ্দমার দের ধার্য্য হইয়াছিল। হেষ্টিংসের বিরুদ্ধে কাহারও দোষের প্রমাণ হয় নাই। কিন্তু বারওয়েলের বিরুদ্ধে ফাউক ও নন্দকুমার দোষী ও রাধাচরণ নির্দোষ হন বলিয়া দেখিতে পাওয়া যায়।

সে অভিযোগে নন্দকুমার প্রকৃত দোষী হইয়াছিলেন কি না, এ বিষয়েও অনেকে সন্দিহান হইয়া থাকেন।  ক্রমে মহারাজের মৃত্যুদিন অগ্রসর হইয়া আসিল। তাঁহার জীবনের শেষ দুই দিনের চিত্র অতীব শোকাবহ; কিন্তু তাহা হইতে মহারাজ নন্দকুমারের স্থিরচিত্ততারও প্রমাণ পাওয়া যায়। কলিকাতার তদানী- স্তন সেরিফ ম্যাক্রেবী সাহেব এই দুই দিনের ঘটনা লিখিয়া গিয়াছেন।

 

 

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৩১)

১১:০০:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

সে গৃহে আর কেহ থাকিত না; তথায় -মহারাজ বন্ধুবান্ধবগণের সহিত কথোপকথনে ও শাস্ত্রালাপে মৃত্যু-সময় পর্যন্ত অতিবাহিত করিয়াছিলেন। প্রাণদণ্ডাজ্ঞার পর দ্বাবিংশতি দিবস তিনি পাপময়ী পৃথিবীতে অবস্থান করিতে পারিয়াছিলেন। সেই কয় দিবস তাঁহার হৃদয়মধ্যে যে কিরূপ তরঙ্গ উত্থিত হইত, তাহা বুদ্ধিমানমাত্রেই বুঝিতে পারেন; কিন্তু তিনি সে ভাব কাহারও নিকট প্রকাশ করিতেন না।

ক্রমে ক্রমে তিনি হৃদয়কে দৃঢ় করিয়া মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হন এবং নির্ভীকচিত্তে সেই অন্তিম সময়ের অপেক্ষা করিতেছিলেন। এই সময়ে তিনি নিজড়ীষহীনতার কথা উল্লেখ করিয়া ফ্রান্সিস ও ক্লেভারিংকে একখানি পত্র লেখেন। তাঁহারা মহারাজকে বাঁচাইবার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই।

নবাব মোবারক উদ্দৌলাও কাউন্সিলে এইরূপ পত্র লিখিয়াছিলেন যে, যতদিন পর্য্যন্ত ইংলণ্ডাধিপের এ সম্বন্ধে মতামত না আইসে, ততদিন অবধি মহারাজের প্রাণদণ্ডের আদেশ প্রতিপালন না করা হয়; কিন্তু তাহাতেও কোন ফলোদয় হয় নাই। আমরা পূর্ব্বে উল্লেখ করিয়াছি যে, হেষ্টিংস, প্রভৃতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ উপস্থিত, হয়, তাহার দিন জালকরা মোকদ্দমার দের ধার্য্য হইয়াছিল। হেষ্টিংসের বিরুদ্ধে কাহারও দোষের প্রমাণ হয় নাই। কিন্তু বারওয়েলের বিরুদ্ধে ফাউক ও নন্দকুমার দোষী ও রাধাচরণ নির্দোষ হন বলিয়া দেখিতে পাওয়া যায়।

সে অভিযোগে নন্দকুমার প্রকৃত দোষী হইয়াছিলেন কি না, এ বিষয়েও অনেকে সন্দিহান হইয়া থাকেন।  ক্রমে মহারাজের মৃত্যুদিন অগ্রসর হইয়া আসিল। তাঁহার জীবনের শেষ দুই দিনের চিত্র অতীব শোকাবহ; কিন্তু তাহা হইতে মহারাজ নন্দকুমারের স্থিরচিত্ততারও প্রমাণ পাওয়া যায়। কলিকাতার তদানী- স্তন সেরিফ ম্যাক্রেবী সাহেব এই দুই দিনের ঘটনা লিখিয়া গিয়াছেন।