০৩:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৩২)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 20

শ্রী নিখিলনাথ রায়

তিনি একজন সাধুপ্রকৃতি ইংরেজ ছিলেন। আমরা তাঁহার লিখিত বর্ণনাই উদ্ধৃত করিতেছি। তিনি এইরূপ লিখিয়াছেন,-“৪ঠা আগষ্ট শুক্রবার সন্ধ্যাকালে আমি মহারাজের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাই। তিনি আমাকে অভ্যর্থনা করিয়া এরূপ ভাবে কথোপকথন আরম্ভ করিলেন যে, আমি আশ্চর্যান্বিত হইয়া ভাবিতে লাগিলাম, কল্য এ জগৎ হইতে যে তাঁহাকে চিরবিদায় লইতে হইবে, তাহা কি তিনি অবগত নহেন? আমি অবশেষে দ্বিভাষীর দ্বারা তাঁহাকে অবগত করাই যে আমি অম্ল তাঁহাকে শেষ অভিবাদন করিতে আসিয়াছি।

‘কল্য সেই শোচনীয় ব্যাপারে মহারাজের যেরূপ সুবিধা হয়, তজ্জন্য আমার কর্তব্যানুরোধে আমাকে সমস্তই প্রতিপালন করিতে হইবে। আপনার যে সমস্ত অন্তিম বাসনা আছে, তাহা পূর্ণ করিতে আমি চেষ্টা পাইব। আপনার শিবিকা ও বাহকগণ নিয়মিত সময়ে আপনার গৃহসম্মুখে অপেক্ষা করিবে এবং আপনার যে সমস্ত বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিবেন, তাঁহাদিগকেও রক্ষা করিতে যত্ন পাইব।

মহারাজ উত্তর দিলেন-আমার সাক্ষাতের জন্য তিনি আপ্যায়িত হইয়াছেন এবং তজ্জন্য আমাকে ধন্যবাদ দিতেছেন। পরে তিনি কপালে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া বলিলেন, বিধাতার ইচ্ছা অবশ্যই সম্পন্ন হইবে। তিনি ক্লেভারিং, মন্দন ও ফ্রান্সিসকে সম্মান প্রদর্শন করিয়া, রাজা গুরুদাসের তত্ত্বাবধানের জন্য ও তাঁহাকে ব্রাহ্মণসমাজের নেতা বলিয়া মনে করিবার জন্য অনুরোধ করেন।

সেই সময়ে তাঁহার শান্তভাব অতীব বিস্ময়জনক। তিনি একটিও দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করেন নাই; তাঁহার কথায় কোনরূপ পরিবর্তন বা চাপল্যভাব ছিল না। আমি জ্ঞাত হইয়াছিলাম যে, কিছু পূর্ব্বে তিনি তাঁহার জামাতা রায় রাধাচরণের নিকট হইতে চিরবিদায় লইয়াছিলেন। তাঁহার অদ্বিতীয় দৃঢ়তার নিকট আমরা কিছুই নহি মনে করিয়া, আমি তথা হইতে বিদায় গ্রহণ করিলাম। নীচে আসিলে জেলরক্ষক আমাকে বলিল যে, তাঁহার আত্মীয় স্বজন বিদায় গ্রহণ করিলে, তিনি নিজ হিসাব পরিদর্শন ও মন্তব্যাদি লিখিতেছিলেন।

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৩২)

১১:০০:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

তিনি একজন সাধুপ্রকৃতি ইংরেজ ছিলেন। আমরা তাঁহার লিখিত বর্ণনাই উদ্ধৃত করিতেছি। তিনি এইরূপ লিখিয়াছেন,-“৪ঠা আগষ্ট শুক্রবার সন্ধ্যাকালে আমি মহারাজের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাই। তিনি আমাকে অভ্যর্থনা করিয়া এরূপ ভাবে কথোপকথন আরম্ভ করিলেন যে, আমি আশ্চর্যান্বিত হইয়া ভাবিতে লাগিলাম, কল্য এ জগৎ হইতে যে তাঁহাকে চিরবিদায় লইতে হইবে, তাহা কি তিনি অবগত নহেন? আমি অবশেষে দ্বিভাষীর দ্বারা তাঁহাকে অবগত করাই যে আমি অম্ল তাঁহাকে শেষ অভিবাদন করিতে আসিয়াছি।

‘কল্য সেই শোচনীয় ব্যাপারে মহারাজের যেরূপ সুবিধা হয়, তজ্জন্য আমার কর্তব্যানুরোধে আমাকে সমস্তই প্রতিপালন করিতে হইবে। আপনার যে সমস্ত অন্তিম বাসনা আছে, তাহা পূর্ণ করিতে আমি চেষ্টা পাইব। আপনার শিবিকা ও বাহকগণ নিয়মিত সময়ে আপনার গৃহসম্মুখে অপেক্ষা করিবে এবং আপনার যে সমস্ত বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিবেন, তাঁহাদিগকেও রক্ষা করিতে যত্ন পাইব।

মহারাজ উত্তর দিলেন-আমার সাক্ষাতের জন্য তিনি আপ্যায়িত হইয়াছেন এবং তজ্জন্য আমাকে ধন্যবাদ দিতেছেন। পরে তিনি কপালে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া বলিলেন, বিধাতার ইচ্ছা অবশ্যই সম্পন্ন হইবে। তিনি ক্লেভারিং, মন্দন ও ফ্রান্সিসকে সম্মান প্রদর্শন করিয়া, রাজা গুরুদাসের তত্ত্বাবধানের জন্য ও তাঁহাকে ব্রাহ্মণসমাজের নেতা বলিয়া মনে করিবার জন্য অনুরোধ করেন।

সেই সময়ে তাঁহার শান্তভাব অতীব বিস্ময়জনক। তিনি একটিও দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করেন নাই; তাঁহার কথায় কোনরূপ পরিবর্তন বা চাপল্যভাব ছিল না। আমি জ্ঞাত হইয়াছিলাম যে, কিছু পূর্ব্বে তিনি তাঁহার জামাতা রায় রাধাচরণের নিকট হইতে চিরবিদায় লইয়াছিলেন। তাঁহার অদ্বিতীয় দৃঢ়তার নিকট আমরা কিছুই নহি মনে করিয়া, আমি তথা হইতে বিদায় গ্রহণ করিলাম। নীচে আসিলে জেলরক্ষক আমাকে বলিল যে, তাঁহার আত্মীয় স্বজন বিদায় গ্রহণ করিলে, তিনি নিজ হিসাব পরিদর্শন ও মন্তব্যাদি লিখিতেছিলেন।