০১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১১৫)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 22

শশাঙ্ক মণ্ডল

সাহিত্য

পঞ্চম অধ্যায়

ঊনিশ শতকেই দেবহাটা, বনগাঁ, ডায়মন্ডহারবার, হরিনাভী কবঞ্জলি, বারুইপুর, কেশবপুর নলচিত্রি দৌলতপুর প্রভৃতি স্থানে বিদ্যালয় গড়ে উঠল। ইতিপূর্বে ১৮৪২ খ্রীষ্টাব্দে বরিশাল জেলাস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরবর্তীকালে বিদ্যালয়টি সরকারি বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। বিখ্যাত মনীষী রামতনু লাহিড়ী প্রধান শিক্ষক হিসাবে ১৮৬০ খ্রীষ্টাব্দে যোগদান করেন। উনিশ শতকের শেষে বরিশালের ব্রজমোহন হাইস্কুল এর বিশাল খ্যাতি ছিল।

অশ্বিনীদত্ত প্রথম থেকে বিদ্যালয়টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন; বঙ্গ ভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে স্বাদেশিকতার বীজ উপ্ত হল তার প্রভাবে বরিশাল খুলনা যশোর প্রভৃতি এলাকায় অসংখ্য শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলার প্রচেষ্টা লক্ষ করা গেল; অশ্বিনী দত্তের নেতৃত্বে অসংখ্য স্বদেশি বিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল কিন্তু পরবর্তীকালে নানারকম অসুবিধার জন্য এ-বিদ্যালয়গুলি চালানো সম্ভব হয়নি। মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বিভিন্ন প্রান্তের দেশপ্রেমিক মানুষরা এগিয়ে এলেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তীকালের কর্ণধার আশুত্রেষ মুখোপাধ্যায়ের আহ্বান প্রতিগ্রামে একজন স্নাতক; জাতীয় আন্দোলনে বেগ সৃষ্টি করেছিল। মুসলমান প্রভাবিত এলাকায় আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ বিংশশতাব্দীর তৃতীয় দশকে বিশেষ করে লক্ষ করা যায়। ইংরেজ রাজত্বের শুরু থেকে পাশ্চাত্ত্য শিক্ষা গ্রহণের প্রতি মুসলমান অভিজাতদের মধ্যে দ্বিধা ছিল কিন্তু এ সময়ে লক্ষ করা গেল অনেক মুসলমান প্রভাবিত এলাকায় ধনী স্বদেশপ্রেমিক মানুষরা স্কুল গড়ার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন।

ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও শিক্ষা আন্দোলন পাশাপাশি হাত ধরে চলেছে- স্বাধীনতা আন্দোলনের উত্তাল মুহূর্তে শিক্ষা-আন্দোলন ঐ আন্দোলনকে পুষ্ট করেছে এবং শিক্ষা-আন্দোলন জাতীয় আন্দোলন থেকে রসদ সংগ্রহ করে নিয়েছে। অবশেষে ১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দে বহু-আকাঙ্খিত স্বাধীনতা এল। ইংরেজ আমাদের দেশে এসেছিল পাশ্চাত্তের চিত্তমুক্তির দূতহিসাবে শিক্ষা বিপ্লবের নতুন আহবান নিয়ে। কিন্তু চলে যাবার দিন রেখে গেল তার সাম্রাজ্যবাদী কদর্য চেহারা।

শিক্ষাসহ জীবনের মৌল সমস্যাগুলি থেকে গেল সেই তিমিরেই পরাধীন দেশে কিছু মানবপ্রেমিক মুক্তির বার্তা নিয়ে এলেও সাম্রাজ্যবাদী লোভও লালসার কাছে ভারতবাসী নিজেকে আত্মাহুতি দিয়ে ফিরে পেল হৃত স্বাধীনতা; সমকালে ভারতের শিক্ষাচিত্র অতীব ভয়াবহ ভারতের অন্যান্য প্রান্তের সংঙ্গে সঙ্গতি রেখে সুন্দরবনের একটি মহকুমার শিক্ষাচিত্র লক্ষ করলে দেখা যাবে ১৯৪৭ সালে বসিরহাট মহকুমার লোকসংখ্যা ৭ লক্ষের মতো, মাধ্যমিক স্তরে বিদ্যালয় মাত্র ১৭টি, এর মধ্যে উচ্চবালিকা বিদ্যালয় ১টি, জুনিয়র দু’টি ছেলে ও মেয়ে মিলিয়ে ৯টি উচ্চবিদ্যালয়, ও ৮টি জুনিয়র হাইস্কুল।

 

২০২৫ সালে ফিলিপাইনের ১২টি প্রধান অবকাঠামো প্রকল্প: রিয়েল এস্টেটের রূপান্তর

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১১৫)

১২:০০:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শশাঙ্ক মণ্ডল

সাহিত্য

পঞ্চম অধ্যায়

ঊনিশ শতকেই দেবহাটা, বনগাঁ, ডায়মন্ডহারবার, হরিনাভী কবঞ্জলি, বারুইপুর, কেশবপুর নলচিত্রি দৌলতপুর প্রভৃতি স্থানে বিদ্যালয় গড়ে উঠল। ইতিপূর্বে ১৮৪২ খ্রীষ্টাব্দে বরিশাল জেলাস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরবর্তীকালে বিদ্যালয়টি সরকারি বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। বিখ্যাত মনীষী রামতনু লাহিড়ী প্রধান শিক্ষক হিসাবে ১৮৬০ খ্রীষ্টাব্দে যোগদান করেন। উনিশ শতকের শেষে বরিশালের ব্রজমোহন হাইস্কুল এর বিশাল খ্যাতি ছিল।

অশ্বিনীদত্ত প্রথম থেকে বিদ্যালয়টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন; বঙ্গ ভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে স্বাদেশিকতার বীজ উপ্ত হল তার প্রভাবে বরিশাল খুলনা যশোর প্রভৃতি এলাকায় অসংখ্য শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলার প্রচেষ্টা লক্ষ করা গেল; অশ্বিনী দত্তের নেতৃত্বে অসংখ্য স্বদেশি বিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল কিন্তু পরবর্তীকালে নানারকম অসুবিধার জন্য এ-বিদ্যালয়গুলি চালানো সম্ভব হয়নি। মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বিভিন্ন প্রান্তের দেশপ্রেমিক মানুষরা এগিয়ে এলেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তীকালের কর্ণধার আশুত্রেষ মুখোপাধ্যায়ের আহ্বান প্রতিগ্রামে একজন স্নাতক; জাতীয় আন্দোলনে বেগ সৃষ্টি করেছিল। মুসলমান প্রভাবিত এলাকায় আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ বিংশশতাব্দীর তৃতীয় দশকে বিশেষ করে লক্ষ করা যায়। ইংরেজ রাজত্বের শুরু থেকে পাশ্চাত্ত্য শিক্ষা গ্রহণের প্রতি মুসলমান অভিজাতদের মধ্যে দ্বিধা ছিল কিন্তু এ সময়ে লক্ষ করা গেল অনেক মুসলমান প্রভাবিত এলাকায় ধনী স্বদেশপ্রেমিক মানুষরা স্কুল গড়ার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন।

ভারতের জাতীয় আন্দোলন ও শিক্ষা আন্দোলন পাশাপাশি হাত ধরে চলেছে- স্বাধীনতা আন্দোলনের উত্তাল মুহূর্তে শিক্ষা-আন্দোলন ঐ আন্দোলনকে পুষ্ট করেছে এবং শিক্ষা-আন্দোলন জাতীয় আন্দোলন থেকে রসদ সংগ্রহ করে নিয়েছে। অবশেষে ১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দে বহু-আকাঙ্খিত স্বাধীনতা এল। ইংরেজ আমাদের দেশে এসেছিল পাশ্চাত্তের চিত্তমুক্তির দূতহিসাবে শিক্ষা বিপ্লবের নতুন আহবান নিয়ে। কিন্তু চলে যাবার দিন রেখে গেল তার সাম্রাজ্যবাদী কদর্য চেহারা।

শিক্ষাসহ জীবনের মৌল সমস্যাগুলি থেকে গেল সেই তিমিরেই পরাধীন দেশে কিছু মানবপ্রেমিক মুক্তির বার্তা নিয়ে এলেও সাম্রাজ্যবাদী লোভও লালসার কাছে ভারতবাসী নিজেকে আত্মাহুতি দিয়ে ফিরে পেল হৃত স্বাধীনতা; সমকালে ভারতের শিক্ষাচিত্র অতীব ভয়াবহ ভারতের অন্যান্য প্রান্তের সংঙ্গে সঙ্গতি রেখে সুন্দরবনের একটি মহকুমার শিক্ষাচিত্র লক্ষ করলে দেখা যাবে ১৯৪৭ সালে বসিরহাট মহকুমার লোকসংখ্যা ৭ লক্ষের মতো, মাধ্যমিক স্তরে বিদ্যালয় মাত্র ১৭টি, এর মধ্যে উচ্চবালিকা বিদ্যালয় ১টি, জুনিয়র দু’টি ছেলে ও মেয়ে মিলিয়ে ৯টি উচ্চবিদ্যালয়, ও ৮টি জুনিয়র হাইস্কুল।