শশাঙ্ক মণ্ডল
সাহিত্য
পঞ্চম অধ্যায়
মোট মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রসংখ্যা ৩৬৯০; ১৯৪৮ সালের মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার্থী ১০৯ আর ছাত্রীর সংখ্যা ৯ জন। ব্রিটিশ রাজত্বে সরকারের শিক্ষাবিস্তারে অনাগ্রহ ও তার সীমিত আর্থিক বরাদ্দের মধ্যে স্কুলের অনুমোদন লাভ অত্যন্ত কঠিন ছিল। আর অনুমোদন পেলেও আর্থিক সাহায্য ছিল খুবই কম। বসিরহাটের নৈহাটি, বকুলতলা লোয়ার প্রাইমারি স্কুল ১জন শিক্ষক, ১৫জন ছাত্র নিয়ে বাংলা ১২৪৫ সালে শুরু হয় ১৩৪৫ সালে ১০০ বৎসর পরে স্কুলটি সরকারের অনুমোদন পায়; বসিরহাটের নলকোড়া গ্রামের করদের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এ ব্যাপারে অনেক সৌভাগ্যবান।
স্কুল প্রতিষ্ঠা হল ১২৫১ সালে, অনুমোদন পেল ১৮৬১ খ্রীষ্টাব্দে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে বসিরহাট এবং বারুইপুরের হাইস্কুল দুটি বছরে ২০০ টাকা করে সরকারি সাহায্য পেত। ১৯০৮ সালের দিকে বরিশাল খুলনার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি সাহায্য ছাড়া গ্রামবাসীরা চালাতেন। মালঙ্গপাড়া স্কুলটির তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে সরকারের সাহায্যে না পেলেও প্রতিষ্ঠাতা পঞ্চানন বক্সি মাস্টার মশাইদের বেতন দেবার ব্যবস্থা করেন।
২য় মহাযুদ্ধের সমকালে প্রধান শিক্ষক এম.এ. পাশ ৫০ টাকা, বি.এ. পাশ ৩০ টাকা হিসাবে। মহাযুদ্ধের সময় ব্যবসার ক্ষতি হওয়ায় পঞ্চানন বক্সী বেতন দিতে পারছেন না বলে এক সঙ্গে ৫ জন মাস্টারমশাই স্কুল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সরকার প্রকৃতপক্ষে চাইত না দেশের লোক শিক্ষিত হোক- ব্রিটিশ রাজত্বের শিক্ষানীতি মেকলে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, যা কিছু করণীয় তা কলকাতা ও অন্যান্য বড় শহরের দিকে তাকিয়ে করা হত।
বিশাল গ্রাম বাংলা ছিল উপেক্ষিত। সরকারের পাশাপাশি দেশীয় জমিদারেরা তাঁরাও অনেকে চাইতেন না শিক্ষার বিস্তার হোক প্রজাদের মনের অন্ধকার দূর হোক, আধুনিক জীবনের মুখোমুখি এসে তারা দাঁড়াক। প্রজাদের অশিক্ষা ছিল তাদের শোষণ ব্যবসার অন্যতম প্রধান অবলম্বন। এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় জমিদার ও প্রকৃতি চাষির মাঝে অনেকগুলি মধ্যবর্তী স্তরের মানুষ ছিল; এরা গাতিদার, হাওলাদার, চকদার প্রভৃতি এদের সংখ্যা অনেক সময় ১০/১৫।
মধ্যবর্তীস্তরের প্রাধান্য থাকায় জমিদাররা শিক্ষাক্ষেত্রে বা প্রজাদের জীবনের মানোন্নয়নের প্রশ্নে কোন ভূমিকা পালন করতেন না, আবার এইসব জমিদার তাদের আভিজাত্য কৌলিন্য প্রদর্শন বা রাজানুগ্রহ লাভের জন্য কলকাতার বিভিন্ন ব্যাপারে দান করতেন। জমিদার নগরবাসী গ্রামের প্রজাদের শিক্ষার ব্যাপারে তার কোন আগ্রহ ছিল না কারণ প্রজারা শিক্ষিত হয়ে উঠলে, তাদের সচেতনতা গড়ে উঠলে নানাধরনের বাজে আদায়, সুদের ব্যবসা থেকে শুরু করে নানারকম উৎপীড়নমূলক ব্যবস্থা চালানো যাবে না। গ্রামীণ জীবনের সাথে সংযোগ ছিল এমন সব মধ্যবর্তী স্তরের ভূ-স্বামী, গাতিদাররা স্কুল এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, সুন্দরবনের বিভিন্ন স্কুলের পিছনে ছোট ছোট জমিদার গাতিদার বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিদের অবদান রয়েছে।