নিজস্ব প্রতিনিধি
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কিছু অংশ বাতিল অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে সংবিধানে গণভোটের বিধান ফিরিয়ে এনেছেন উচ্চ আদালত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর ৪ ডিসেম্বর শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়েছিল। যে কারণে এটি সংবিধানের মৌলিক ভিত্তি হয়ে গেছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করা হয়েছিল। তবে পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোপুরি বাতিল হবে না। সংবিধানের মূল কাঠামো হচ্ছে গণতন্ত্র। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই পারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। সংবিধানের সৌন্দর্য হচ্ছে জনগণের ক্ষমতায়ন, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়েছিল। যে কারণে এটি সংবিধানের মৌলিক ভিত্তি হয়ে গেছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করা হয়েছিল। তবে পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোপুরি বাতিল হবে না। পর্যবেক্ষনে আরো বলা হয় , সংবিধানের মূল কাঠামো হচ্ছে গণতন্ত্র। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই পারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। সংবিধানের সৌন্দর্য হচ্ছে জনগণের ক্ষমতায়ন, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। সংবিধানে জাতির জনক, সাতই মার্চসহ কয়েকটি ধারা সংসদের জন্য ‘রেখে দিয়েছেন’ আদালত।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫২ মিনিট থেকে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা শুরু করেন। রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব। এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন, রিটকারী সুজনের বদিউল আলমের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া । বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী। ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান, চার আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী, ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাসহ বিচার বিভাগ ধ্বংসে সাবেক দুই প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে দায়ী করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। মঙ্গলবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদসহ বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদ বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাসহ বিচার বিভাগ ধ্বংসে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের পর আরেক সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন দায়ী। রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। কারণ আজকের রায়ের মধ্যে বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাংবিধানিকভাবেই বৈধ সরকার। ১০৬ অনুচ্ছেদের প্রেক্ষাপটে মতামত নিয়ে করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ফুল বেঞ্চ মতামত দিয়েছেন, এটি
সাংবিধানিক ওপিনিয়ন। আপিল বিভাগ সাংবিধানিক মতামতে বলেছেন— রাষ্ট্রপতি ওনাদের কাছে বলেছেন, সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলে গেছেন, অন্য কাউকে ডেকে সরকার গঠন করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করতে আইনি কোনও বাধা আছে কিনা। সুপ্রিম কোর্ট গোটা প্রেক্ষাপট বিবেচনা নিয়ে বলছে— এটা বৈধ ও সাংবিধানিক সরকার হবে। এটার সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনও সাংঘর্ষিক প্রভিশন নেই।’
পরে ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ আবেদনকারীর আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার বিধান বাতিল হলো; সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ এবং সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য সংক্রান্ত ৭ ক এবং ৭ খ বাতিল হলো। মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের বিধান নিয়ে হাইকোর্টের ক্ষমতা কমানোবিষয়ক ৪৪ (২) বাতিল করা হলো; এ ছাড়া ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান বাতিল করার বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। ফলে সংবিধানের প্রস্তাবনা ও কিছু অনুচ্ছেদ সংশোধনে আজকের রায়ে গণভোটের বিধান ফিরে আসছে।
রায়টিকে ঐতিহাসিক বলে এ আইনজীবী বলেন, ৭ ক ও খ, ৪৪ (২) ও ১৪২ অনুচ্ছেদ বিষয় আজকের রায়ের ফলে বাস্তবায়িত হয়ে গেলো। তবে সংসদের মাধ্যমে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হলো- সেটির প্রতিবন্ধকতা আজকে পার হলাম। তবে বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে যে রায় (তত্ত্বাবধায়ক অবৈধ) সেটির পুনর্বিবেচনা পরিবর্তিত হতে হবে ব্যবস্থাটা ফিরে আসার জন্য। সেটি জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে শুনানি হবে। যদি রিভিউ আমাদের পক্ষে আসে, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরবে।