শশাঙ্ক মণ্ডল
পূজা উপলক্ষে পাঁচালী গান করা হয়। বনবিবির জহুরীনামা জাতীয় পাঁচালী গান। বনবিবিকে বাঘের দেবতা হিসাবে কখনও বনের সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষাকারী দেবতা হিসাবে কল্পনা করা হয়। বনে প্রবেশের পূর্বে অনেক বাউলিয়া বনবিবির পূজা করে বাঘের মুখ বন্ধ করার মন্ত্র উচ্চারণ করে নির্ভয়ে বনে প্রবেশ করে; এ সময়ে দেবীর উদ্দেশ্যে মুরগি ছেড়ে দেওয়া হয়। সুন্দরবনের আরণ্যক সমাজের মানুষ হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে বনবিবির পূজার প্রচলন করেছে এবং এর উৎপত্তি ৪/৫ শত বছরের বেশি নয়। আদিতে বনবিবি বনদেবী হিসাবে পূজিত হতেন।
ইসলাম ধর্ম বিজয়ের যুগে পীর গাজীদের সঙ্গে সহাবস্থানের সূত্রে হিন্দু মুসলমানের সম্মিলিত দেবী হিসাবে বনবিবির আবির্ভাব ঘটেছে। অর্থনৈতিক কারণে বনে এলে ভাই ভাই-শাস্ত্র কোরান তাদের মিলনে বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি।
বনবিবির সঙ্গে দক্ষিণ রায়ের বিরোধ এবং মিলনের কাহিনী রচনা করেছেন মুনসি বায়নন্দী বনবিবির জশ্বরী নামা। ধনা মনা মৌলের কাহিনী অবলম্বনে সুন্দরবনের দক্ষিণাংশে পল্লীবাসীদের মধ্যে সে যুগে দুখে যাত্রা পালা অভিনীত হত। এ সব কাহিনীতে দক্ষিণ রায়ের সঙ্গে বনবিবির বিরোধ বড় খাঁ গাজীর মধ্যস্থতায় মীমাংসা হয়ে যায়। দক্ষিণ রায় বনবিবির সামনে প্রতিজ্ঞা করেন বনবিবির ভক্তদের তিনি বাধা দেবেন না-
আঠারো ভাটির মাঝে আমি সবার মা
মা বলি ডাকিলে কার বিপদ থাকে না।
বিপদে পড়ি যেবা মা বলি ডাকিবে
কভু তারে হিংসা না করিবে।
হাসনাবাদ থানায় ভুরকুন্ডা গ্রামের বনবিবি থানকে খুব প্রাচীন বলে অনেকে মনে করেন। এখনও বৎসরের নির্দিষ্ট সময়ে অসংখ্য ভক্তের উপস্থিতিতে বনবিবির পূজা অনুষ্ঠিত হয়, সেই উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকার বনবিবির পাঁচালী গায়কেরা এখানে সমবেত হয়। বনবিবির সাথে দক্ষিণ রায় অত্যন্ত গভীর ভাবে সম্পৃক্ত, দক্ষিণ রায় সম্পর্কে বহু অনুসন্ধান হয়েছে; অনেক গবেষক এ ব্যাপারে তাদের উল্লেখযোগ্য মতামত প্রকাশ করেছেন প্রাক্ ঐতিহাসিক যুগে মিশরের শাসকরা বাংলাদেশ শাসন করতেন। তাদের প্রতিনিধি হিসাবে বাংলার দক্ষিণ এলাকার শাসক বলে দক্ষিণ রায় এই মত থেকে শুরু করে নানাভাবে দক্ষিণ রায়কে বোঝার চেষ্টা হয়েছে কিন্তু নানা মুনির নানা মতে বিষয়টা কুহেলি কুয়াশায় আজও আবৃত।
Sarakhon Report 



















