শশাঙ্ক মণ্ডল
দক্ষিণ রায়কে কেন্দ্র করে পাঁচালী, মঙ্গলকাব্য রচিত হয়েছে; ২৪ পরগনার নিমতার কবি; কৃষ্ণ রামের কাব্য রায়মঙ্গলে কবি প্রচলিত মঙ্গলকাব্যের রীতিকে অনুসরণ করলেও বেশ কিছু মৌলিকত্বের পরিচয় দিয়েছেন। দক্ষিণ রায় এবং গাজীর মধ্যে দক্ষিণ দেশের অধিকার নিয়ে বিরোধ এবং এই বিরোধে দক্ষিণ রায় গাজীর অধিকার অস্বীকার করে বলে ওঠে-
কোথাকার কেবা তুমি কিসের আমল
গায়ে নাই মানে যেন আপনি মোড়ল।
ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্যে সৃষ্টি ধ্বংসের মুখে দেবতারা প্রমাদ গুনলেন মধ্যস্থতায় এগিয়ে এলেন বিধাতা পুরুষ। অর্ধেক মুসলমান অর্ধেক হিন্দু বেশে কোরান পুরাণ হাতে নিয়ে আবির্ভূত হয়ে উভয়ের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে দিলেন। দক্ষিণ রায় সব ভাটির অধিকার পেলেন, গাজী সাধক পুরুষ হবার জন্য তাঁর ভাই কালু রায় হিজলী এলাকায় অধিকার পেল। উভয়ের রাজত্বে গাজীকে সবাই ভক্তি শ্রদ্ধা করবে বড় খাঁ মূর্তির পরিবর্তে তার প্রতীক স্তূপ থাকবে এবং লোকে তাই মান্য করবে। কৃষ্ণ রাম রায়মঙ্গল কাব্যে দক্ষিণ রায়কে অনেকটা মাটির পৃথিবীর মানুষে পরিণত করেছেন।
অপরদিকে হরিদেবের মঙ্গলকাব্যে দক্ষিণ রায়কে দেবতার অংশীভূত হিসাবে কল্পনা করা হয়েছে; দক্ষিণ রায় বাঘের দেবতা সেই সঙ্গে শস্যদেবতা হিসাবে কল্পিত হয়েছেন তিনি শস্যদেবতা ক্ষেত্রপাল, কৃষকের শস্য রক্ষার দেবতা। দক্ষিণ রায়কে গণেশ হিসাবেও তিনি চিত্রিত করেছেন; দক্ষিণ রায়ের বারা মূর্তি সম্পর্কে বলেছেন গণেশের আদি মুণ্ড বিচ্ছিন্ন হয়ে দক্ষিণ অঞ্চলে দক্ষিণ রায় এ পরিণত হয়েছে। হরিদেবের কাব্যে দক্ষিণ রায় বলেছেন-
আমি ত জঙ্গল রাজা দক্ষিণ ঈশ্বর।
(আমার) সেবক বটে হয়ে ত ধীবর।
দক্ষিণ বাংলার লৌকিক দেবদেবীদের মধ্যে সব চাইতে জনপ্রিয় দক্ষিণ রায় এবং বনবিবি। শাস্ত্রবহির্ভূত দেবতা হিসাবে গৃহের বাইরের উন্মুক্ত স্থানে গাছতলায় নদীর ধারে জঙ্গল সন্নিহিত এলাকায় সকলের আরাধ্য দেবতা হিসাবে পূজা পেয়ে আসছেন। দক্ষিণ রায়ের পূজার জন্য হাসনাবাদ থানার ভেবিয়া; দক্ষিণ ২৪ পরগনার ধবধবি, বারুইপুর, ঢোঁসা, ভাঙর, ক্যানিং এলাকার বিভিন্ন স্থানে মাটির খড়ের ছাওয়া ঘরে পূজার প্রচলন রয়েছে।