শ্রী নিখিলনাথ রায়
সেই সমস্ত ক্ষতির বিবরণ প্রস্তুত ও যাহাতে আবার সেই সকল জামীনতির উদ্ধার হয়, তাহার চেষ্টা করা হউক। কাউন্সিলের সদস্যগণ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পূর্ব্ব শাসন-বিবরণী অনুসন্ধান করিয়া, ডিরেক্টারদিগকে সমস্ত অবগত করাইয়া- ছিলেন। তাঁহারা আপনাদিগের মন্তব্যের একস্থলে এইরূপ প্রকাশ করেন যে, গত রাজস্বসংক্রান্ত বন্দোবস্তে এমন কোন প্রকার চুরি, ডাকাইতি দেখা যায় না, যাহা হইতে মাননীয় গবর্ণর জেনেরাল বাহাদুর বিরত থাকা সঙ্গত বিবেচনা করিয়াছিলেন। প্রতি এইরূপ তিরস্কার-বর্ষণ হওয়ায়, তিনি স্বীয় সেরূপ সুবিধা করিয়া উঠিতে পারিলেন না।
হেষ্টিংস সাহেবের প্রিয়পাত্রদিগের আর সুতরাং কান্ত বাবুর আশা দিগন্তপ্রসারিণী হইতে পারিল না। লোকনাথের নামে যে সকল বেনামী জমিদারী ও মহলাদি ছিল, তাহাতেই তাঁহার আয় আবদ্ধ হইয়া থাকিল, উত্তরোত্তর আর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইতে পারিল না। ক্রেভারিং, মন্সন ও ফ্রান্সিস সদস্যত্রয় হেষ্টিংসের ঘোরতর শত্রুতাসাধনে প্রবৃত্ত হইয়া, তাঁহাকে যে পরিমাণে অপদস্থ করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন, কান্ত বাবু প্রভৃতিরও সেই পরিমাণে ক্ষতি হইয়াছে।
যদিও হেষ্টিংস অনেক সময়ে তাঁহাদিগকে অগ্রাহ্য করিয়া, নিজের ইচ্ছা পূর্ণ করিবার জন্য প্রয়াস পাইতেন, কিন্তু পরিণামে কর্তৃপক্ষগণের নিকট তিরস্কৃত হওয়ায়, তাঁহাকে অনেক পরিমাণে শান্তভাব অবলম্বন করিতে হইয়াছিল। সুতরাং কান্ত বাবুরও লাভের ব্যাঘাত ঘটিয়াছিল; নতুবা তিনি বহুলক্ষাধীশ্বর হইয়া বঙ্গদেশে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ধনী বলিয়া পরিচিত হইতে পারিতেন।
অবিচারপূর্ব্বক কান্ত বাবুকে, জমিদারী দেওয়ায়, হেষ্টিংস সাহেব কেবল যে, ডিরেক্টারদিগের নিকট হইতে তিরস্কার লাভ করিয়া নিষ্কৃতি পাইয়াছিলেন, এমন নহে। ভারতবর্ষ পরিত্যাগের পর যখন ওয়েষ্টমিনিষ্টার-গৃহে ব্রিটিশরাজ্যের প্রতিনিধিগণের সমক্ষে তাঁহার সপ্ত- বর্ষব্যাপী বিচার হয়, তখনও তাঁহাকে ইহার জন্য অশেষ লাঞ্ছনা ভোগ করিতে হইয়াছিল। মহামতি বার্ক, শেরিডান প্রভৃতির অনলবর্ষিণী বক্তৃতায়, যখন তাঁহার অত্যাচারকাহিনী শ্রোতৃবর্গকে স্তম্ভিত করিয়া- ছিল, সেই সময়ে এই অবিচারের কথাও ইংলণ্ডের জাতীয় দরবারে উত্থিত হয়।