ম্যাকসিম গোর্কী
একটি চিঠি
আমার মনে হয়, ভাস্কা বুলাইয়েভের অনুসন্ধিৎসু দুরন্তপনাটা রয়েছে তাঁর মধ্যে, সেই সংগে প্রটোপ, আব্বাকামের অনমনীয় আধ্যাত্মিকতার খানিকটা। আর সর্বোপরি সব কিছুর পাশাপাশি গোপন রয়েছে শাডাইয়েভের মতো একটা সংশয়বাদ। এই আব্বাকামীয় বস্তুটা তাঁর মধ্যেকার শিল্পীকে আপনার প্রচার-দৌরাত্ম্যে দিবারাত্র ব্যস্ত বিব্রত ক’রে তোলে; শেল্পীয়র আর দান্তেকে কবলিত ক’রে ফেলে তাঁর নভগরদের বঙ্গতা; তাঁর শাডাইয়ে ভীয় বস্তুটা নিয়ত ব্যংগ বিদ্রূপ করতে থাকে তাঁর আত্মার সকল আনন্দকে।
আর সেই সংগে, সকল আর্ততাকে। তাঁর মধ্যে যে প্রাচীন রাশিয়ান মানুষটা বয়েছে, যে রাশিয়ান মানুষটা মানুষের জীবনকে আরো মানবিক করে গ’ড়ে তোলার সকল প্রচেষ্টায় ব্যর্থ-ব্যাহত হ’য়ে অরাজকবাদের নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে-সে সর্বদাই আঘাত করছে বিজ্ঞান আর রাষ্ট্রকে।
অদ্ভুত! টলস্টয়ের মধ্যেকার এই বুস্লাইয়েভী চারিত্রিক দিকটি কোনো রহস্যময় অনুভূতিশক্তির ভিতর দিয়ে ধরা পড়েছিল কার্টুনিস্ট ওলাফ গুলব্রাম্নের কাছে। তাঁর আঁকা ছবির দিকে মনোযোগের সংগে তাকালে দেখা যাবে, কী আশ্চর্য ভাবেই না সত্যিকার টলস্টয়ের মূর্তিটি ধরা পড়েছে তার মধ্যে। ওই গোপন অবগুণ্ঠিত ছাট চোখে, ওই সারা মুখে, কী দুঃসাহসী মনীষাই না উঠেছে ফুটে! এই মনীষার কাছে পুণ্য-পবিত্র ব’লে কিছু নেই। কিছুই এ বিশ্বাস করে না-“না হাঁচি, না স্বপ্ন, না পাখীর ডাক।”
আমার সম্মুখে আমি দেখছি এক বৃদ্ধ জাদুকর, বিদেশী অপরিচিত এক জাদুকর, সর্বময় সত্যের সন্ধানে চিন্তার অসংখ্য মরু প্রান্তর পার হয়ে এসেছেন এক নিঃসংগ যাত্রী। সে-সত্যের সন্ধান তাঁর মেলে নি। আমি তাঁর পানে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি। তাঁকে হারিয়ে আজ দুঃখ পেয়েছি সত্য, কিন্তু সেই সংগে অনুভব করছি, তাঁর মধ্যেকার মানুষটিকে দেখার গর্ব। এই গর্ব আমার দুঃখ যন্ত্রণার উপশম করবে।
Sarakhon Report 



















