০২:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

টলস্টয়ের স্মৃতি (পর্ব- ৪৮)

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৫৫:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
  • 16

ম্যাকসিম গোর্কী

একটি চিঠি

“টলস্টয়পন্থী’দের মধ্যে লিও নিকোলাইয়েভিচকে দেখতে বড়ো অদ্ভুত লাগতো। তিনি যেন দাঁড়িয়ে থাকতেন একটি গির্জার ঘণ্টাঘর; এই ঘন্টাঘর থেকে সমগ্র পৃথিবীময় ধ্বনিত হচ্ছে ঘণ্টাধ্বনি। আর তারই চারিদিকে দুর্বল ভয়ার্ত কুকুরের দল সেই ঘণ্টার পানে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করছে, আর পরস্পরের দিকে অবিশ্বাসে আড় চোখে তাকিয়ে যেন বলছে: “কে সব চেয়ে ভালোরকম ঘেউ ঘেউ করতে পারে? কে?”

আমার কেবলই মনে হয় যে, এই মানুষগুলো ইয়াসনাইয়া পালিয়ানাস্থ বাড়ি এবং কাউন্টেস পামিনের বাড়ি, এই জায়গা দুটিকে কাপট্য, কাপুরুষতা, পণ্যবৃত্তি, স্বার্থান্ধ ক্ষুদ্রতা এবং উত্তরাধিকার সন্ধানের বিষে সংক্রামিত করে তুলেছিল। সেই সাধুরা, যারা রাশিয়ার অন্ধকার কোণ- গুলিতে ঘুরে বেড়ায়, কুকুরের হাড়কে প্রাচীন ঋষির অস্থি ব’লে চালায়, তাদের সংগেই যেন এই সব “টলস্টয়পন্থী”দের কোথায় একটা সাদৃশ্য আছে।

আমার মনে পড়ে, এই প্রচারকদের একজন একবার ইয়াসনাইয়া পলিয়ানাতে পাছে মুরগীর ওপর অবিচার হয়, এই ভয়ে ডিম খেতে অস্বীকার করেছিলেন, কিন্তু তিনি টুলা স্টেশনে এসে গোগ্রাসে মাংস গিলতে লাগলেন, বললেন: “বুড়োর যতো বাড়াবাড়ি।”

লিও নিকোলাইয়েভিচ, অবশ্য, টলস্টয়পন্থীদের স্বরূপ ভালো ক’রেই জানতেন। আর জানতো সুলারঝিজকি। টলস্টয় সুলারঝিজকিকে স্নেহ করতেন; তাঁর সম্বন্ধে কথা বলতেন যৌবনসুলভ উৎসাহের সংগে।

টলস্টয়পন্থীদের মধ্যে একজন একবার ইয়াসনাইয়া পলিয়ানাতে উচ্ছ্বসিত হ’য়ে ব্যাখ্যা ক’রে বললেন যে টলস্টয়ের কাছে দীক্ষা লাভ করার পর থেকে তাঁর জীবন সুখময় এবং আত্মা শান্তিময় হয়ে উঠেছে। লিও নিকোলাইয়েভিচ আমার দিকে ঝুঁকে প’ড়ে আমাকে চাপা গলায় বললেন, “লোকটা পাজী, আগাগোড়া মিছে কথা বলছে। তবে বলছে, আমাকে খুশী করবার জন্যে।….”

টলস্টয়ের স্মৃতি (পর্ব- ৪৮)

০৩:৫৫:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫

ম্যাকসিম গোর্কী

একটি চিঠি

“টলস্টয়পন্থী’দের মধ্যে লিও নিকোলাইয়েভিচকে দেখতে বড়ো অদ্ভুত লাগতো। তিনি যেন দাঁড়িয়ে থাকতেন একটি গির্জার ঘণ্টাঘর; এই ঘন্টাঘর থেকে সমগ্র পৃথিবীময় ধ্বনিত হচ্ছে ঘণ্টাধ্বনি। আর তারই চারিদিকে দুর্বল ভয়ার্ত কুকুরের দল সেই ঘণ্টার পানে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করছে, আর পরস্পরের দিকে অবিশ্বাসে আড় চোখে তাকিয়ে যেন বলছে: “কে সব চেয়ে ভালোরকম ঘেউ ঘেউ করতে পারে? কে?”

আমার কেবলই মনে হয় যে, এই মানুষগুলো ইয়াসনাইয়া পালিয়ানাস্থ বাড়ি এবং কাউন্টেস পামিনের বাড়ি, এই জায়গা দুটিকে কাপট্য, কাপুরুষতা, পণ্যবৃত্তি, স্বার্থান্ধ ক্ষুদ্রতা এবং উত্তরাধিকার সন্ধানের বিষে সংক্রামিত করে তুলেছিল। সেই সাধুরা, যারা রাশিয়ার অন্ধকার কোণ- গুলিতে ঘুরে বেড়ায়, কুকুরের হাড়কে প্রাচীন ঋষির অস্থি ব’লে চালায়, তাদের সংগেই যেন এই সব “টলস্টয়পন্থী”দের কোথায় একটা সাদৃশ্য আছে।

আমার মনে পড়ে, এই প্রচারকদের একজন একবার ইয়াসনাইয়া পলিয়ানাতে পাছে মুরগীর ওপর অবিচার হয়, এই ভয়ে ডিম খেতে অস্বীকার করেছিলেন, কিন্তু তিনি টুলা স্টেশনে এসে গোগ্রাসে মাংস গিলতে লাগলেন, বললেন: “বুড়োর যতো বাড়াবাড়ি।”

লিও নিকোলাইয়েভিচ, অবশ্য, টলস্টয়পন্থীদের স্বরূপ ভালো ক’রেই জানতেন। আর জানতো সুলারঝিজকি। টলস্টয় সুলারঝিজকিকে স্নেহ করতেন; তাঁর সম্বন্ধে কথা বলতেন যৌবনসুলভ উৎসাহের সংগে।

টলস্টয়পন্থীদের মধ্যে একজন একবার ইয়াসনাইয়া পলিয়ানাতে উচ্ছ্বসিত হ’য়ে ব্যাখ্যা ক’রে বললেন যে টলস্টয়ের কাছে দীক্ষা লাভ করার পর থেকে তাঁর জীবন সুখময় এবং আত্মা শান্তিময় হয়ে উঠেছে। লিও নিকোলাইয়েভিচ আমার দিকে ঝুঁকে প’ড়ে আমাকে চাপা গলায় বললেন, “লোকটা পাজী, আগাগোড়া মিছে কথা বলছে। তবে বলছে, আমাকে খুশী করবার জন্যে।….”