সারাক্ষণ ডেস্ক
আমাল আবদেলাজিম: একটি প্রজন্মের আশা ও হতাশা
আমাল আবদেলাজিম, ২৬, সেই প্রজন্মের অংশ, যাদের সুদানকে রক্ষা করার কথা ছিল। তারা একসময় একজন একনায়ককে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল এবং তাদের জীবনের জন্য উচ্চ প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়েছিল—যতক্ষণ না ২০২৩ সালে যুদ্ধ শুরু হয়।
খার্তুমে একটি বাজারের ধ্বংসপ্রাপ্ত রাস্তায় সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর সৈন্যদের দেখা যায়। পোর্ট সুদানে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আশ্রয় বা বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র খুঁজতে জড়ো হয়েছে।
আমাল নিজেকে দুই পক্ষের মাঝে আবদ্ধ অবস্থায় অনুভব করতেন, যোদ্ধাদের চিকিৎসা করতেন এবং একই সঙ্গে তাদের দ্বারা সন্দেহভাজন হিসেবে দেখা হতো।
সংঘর্ষের মাঝে এক তরুণীর সংগ্রাম
সুদানের সংঘর্ষপূর্ণ রাজধানীতে একটি অস্থায়ী ক্লিনিকে, একজন সংকল্পবদ্ধ তরুণী যোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ উভয়ের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ ছিল না। তবে পুরনো গাড়িগুলো ক্লিনিকের দরজার বাইরে থেমে আহত ব্যক্তিদের নামিয়ে দিত, আর তিনি নিজের সাধ্যমতো তাদের চিকিৎসা করতেন—গুলি লেগে যাওয়া ক্ষত বাঁধতেন, ড্রেসিং পরিবর্তন করতেন এবং মোবাইল ফোন দিয়ে রক্তের পরীক্ষা করার চেষ্টা করতেন।
উপর দিয়ে ড্রোন উড়ে যেত। ছাদে স্নাইপাররা ছিল। ক্লিনিকটি একাধিকবার বোমা আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এমনকি আমাল নিজেও বহুবার মনে করেছিলেন যে তিনি মারা যাবেন।
একটি প্রজন্মের স্বপ্ন ও ভাঙন
২০১৯ সালে সুদানের একনায়ককে ক্ষমতাচ্যুত করার সময় একটি সাহসী আশা তাদের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আমাল তখন কলেজে পড়তেন। তিনি একটি প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন।
“আমাদের নতুন সুদানের প্রয়োজন ছিল,” তিনি বলেছিলেন।
কিন্তু পুরোনো সুদান দ্রুতই ফিরে আসে। ২০২৩ সালে সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ কেবল আফ্রিকার এই বিশাল দেশটিকে দ্বিখণ্ডিত করেনি, এটি একটি পুরো প্রজন্মকে দিশাহীন করেছে।
ক্লিনিকের জীবন
একটি পরিত্যক্ত পোশাক কারখানায় তৈরি একটি বেসরকারি ক্লিনিকে কাজ শুরু করেন আমাল। সেই ক্লিনিকটি মূলত যোদ্ধাদের জন্য অর্থের বিনিময়ে সেবা দিত এবং স্থানীয়দের জন্য বিনামূল্যে।
তিনি আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসা করতেন, ওষুধ সরবরাহ করতেন এবং তার প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে একটি ল্যাবরেটরি চালু করেন। মোবাইলের ফ্ল্যাশ ব্যবহার করে রক্ত পরীক্ষার জন্য একটি পদ্ধতি তৈরি করেন।
পরিবার ও যুদ্ধের প্রভাব
আমালের ২১ বছর বয়সী ভাই ইয়াসিন পরিবারের খরচ চালাতে অদ্ভুত কাজ করতেন। কিন্তু এতে আরএসএফ যোদ্ধারা তাকে সন্দেহ করত এবং তাকে তিনবার আটক করেছিল।
এক পর্যায়ে, ক্লিনিকটি ড্রোন হামলায় বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে, আমাল পরিবারসহ পোর্ট সুদানে পালিয়ে যান।
পোর্ট সুদানে নতুন বাস্তবতা
পোর্ট সুদান, যা যুদ্ধকালীন সময়ে সুদানের ‘কাসাব্লাংকা‘ হিসেবে পরিচিত, সেখানে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন আশ্রয় বা পালানোর চেষ্টা করতে আসে। কিন্তু আমাল ও তার পরিবার সেখানে সীমিত সম্পদের মধ্যে কঠিন জীবনযাপন করছিলেন।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে ঠাসাঠাসি করে ১,৫০০ মহিলা ও শিশুদের সঙ্গে থাকতে হয়েছিল। পরবর্তীতে, তাদের একটি তাঁবু শিবিরে স্থানান্তরিত করা হয়।
যুদ্ধ তাকে শিখিয়েছে যে, যুদ্ধের কোনো ভালো দিক নেই। উভয় পক্ষই অপরাধ করেছে। কিন্তু তিনি তাদের প্রতি ঘৃণা অনুভব করতে পারেন না।
“অবশেষে, তারা সবাই সুদানি,” তিনি বলেন। “আমি তাদের জন্য দুঃখিত।”