সত্যেন্দ্রকুমার বসু
অল্প কিছুদিন পরে পথপ্রদর্শক যুবাও বিপদসংকুল পথে যেতে রাজী না হয়ে তাঁকে ছেড়ে চলে গেল। তার পর হিউএনচাঙ কুরুকটাঘ, বা শুনো পর্বতের পূর্ব অংশ, পেইশানের নুনমাটি আর পাথরের উপর দিয়ে গোবি মরুভূমিতে অগ্রসর হলেন।
এই ভয়ংকর মরুভূমিতে তাঁর পথ- প্রদর্শক ছিল শুধু মৃত যাত্রীদের অস্থি (!) আর উটের মল। আস্তে আস্তে এই পথ পরিচারণ করতে করতে তিনি একদিন দেখলেন যেন দিকচক্রবাল শত শত অস্ত্রধারী যোদ্ধায় পূর্ণ, কখনও তারা কুচকাওয়াজ করে যাচ্ছে, কখনও বা স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রত্যেকের পরিধানে চামড়ার পরিচ্ছদ। একদিকে উট আর সুসজ্জিত ঘোড়া, অন্যদিকে ঝকঝকে নিশান আর বর্শা। মুহূর্তে মুহূর্তে এই দৃশ্যের নানা রকম পরিবর্তন হচ্ছিল। পরিব্রাজক দানব ভূতপ্রেতের কারসাজি। স্থির করলেন যে, এসব নিশ্চয় দৈত্য- আবার শূন্য থেকে যেন অশরীরী বাণী উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠল-‘ভয় নেই! ভয় নেই!’
এর পর একদিন তিনি চীনের পশ্চিম সীমান্তের কাছে রক্ষীদের প্রথম পাহারা স্তম্ভের কাছে গিয়ে পড়লেন। এর কাছেই জল ছিল। কিন্তু রক্ষীদের ভয়ে তিনি দিনের বেলা জলের কাছে না গিয়ে বালির মধ্যে একটা গর্তে লুকিয়ে থাকলেন। রাত্রে ঝরনার কাছে গিয়ে জলপান করছিলেন আর জলপাত্র পূর্ণ করছিলেন, এমন সময় হঠাৎ একটার পর একটা তীর এসে তাঁর হাঁটু ঘেঁসে মাটিতে পড়ল।
তিনি বুঝতে পারলেন যে, রক্ষীরা তাঁকে দেখে ফেলেছে। যতদূর শক্তি তিনি চীৎকার ক’রে ব’লে উঠলেন, ‘তীর মেরো না; আমি রাজধানী থেকে আগত সন্ন্যাসী’- এই বলে দুর্গের নিকটে গেলেন। দুর্গাধ্যক্ষ বৌদ্ধ ছিল। সেও তাঁকে পথের বিপদের কথা বলে যাত্রা করতে বারণ করল। বলল, ‘টুনহুয়াঙে একজন ধর্মগুরু আছেন। তিনি আপনাকে দেখে খুশি হবেন। আপনি, তাঁর কাছে গিয়ে থাকুন না?’ হিউএনচাঙ উত্তর দিলেন, ‘অল্প বয়স থেকেই আমি বৌদ্ধধর্মে একান্তভাবে অনুরাগী।
চলবে