সারাক্ষণ ডেস্ক
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি সোমবার ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন, গত আড়াই মাসে একাধিকবার গোপনে এবং গুরুত্ব সহকারে মতবিনিময় করেছেন।
অনেকের ধারণা, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যকার সংঘাত আরও বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এই সময়ে উভয়ের মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা শীর্ষে ছিল।
পটভূমি: ট্রাম্প-শি যোগাযোগ
ট্রাম্প এবং শি-এর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ঘটে ৭ ডিসেম্বর ২০২৪-এ, যখন ট্রাম্প প্যারিসে ছিলেন। সেখানে তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন।
তাদের আলোচনা নটর-ডেম ক্যাথেড্রালের পুনরায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ফাঁকে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনী প্রচারের সময়, ট্রাম্প বলেছিলেন যে তিনি পুনর্নির্বাচিত হলে দায়িত্ব গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধে অস্ত্রবিরতি আনতে সক্ষম হবেন।
শি-কে সংলাপে যুক্ত করার প্রচেষ্টা
ট্রাম্প চীনা পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন প্যারিসে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সময়। সূত্র মতে, ট্রাম্প শি-কে তিনি পুতিনকে বোঝাতে রাজি করানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ডিসেম্বর ১২-এ, শি এবং রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভের মধ্যে একটি অস্বাভাবিক বৈঠক হয়। সেই সময়ে চীন এবং রাশিয়ার মধ্যে তেমন কোনো জরুরি বিষয় ছিল না, তাই অনুমান করা হয় যে এই বৈঠকে ট্রাম্পের অনুরোধ নিয়েই আলোচনা হয়েছিল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শি-কে আমন্ত্রণ
ট্রাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শি-কে আমন্ত্রণ জানানো ছিল পুতিনকে বোঝানোর জন্য চীনকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করার একটি পদক্ষেপ। তবে চীন সাবধানতার সঙ্গে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে এবং শি-এর পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেংকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠায়।
ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ইউক্রেন ইস্যু শি এবং ট্রাম্পের মধ্যে আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল। ট্রাম্পের মতে, এটি উভয় দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হতে পারে। তবে, পুতিনের চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ দাবি করার শর্তে যুদ্ধবিরতি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চীন এই ইস্যুতে মধ্যস্থতা করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং এটি ট্রাম্পের সঙ্গে ভবিষ্যৎ আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হয়ে উঠেছে।
উপসংহার
ট্রাম্প এবং শি-এর সাম্প্রতিক যোগাযোগের ভিত্তিতে, ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান, টিকটকের ভাগ্য এবং আমদানি শুল্কের মতো বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সংলাপে বড় ভূমিকা পালন করবে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
যদি ট্রাম্প তার প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে চীন সফর করেন, তবে এটি চীনের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা হতে পারে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, এমন পদক্ষেপ অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
শি এবং ট্রাম্পের মধ্যকার কৌশলগত যোগাযোগ চ্যানেল উভয় দেশের মধ্যে নতুন যুগের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। তবে, এই সম্পর্ক কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নির্ভর করছে তাদের ভবিষ্যৎ আলোচনার উপর।