সারাক্ষণ ডেস্ক
ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) অবশেষে জাতীয় ও রাজ্য স্তরের পারফরম্যান্সের মধ্যে দশ বছরের ব্যবধান দূর করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৯ এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির সাতটি সংসদীয় আসনে জয়ের পর এবার দিল্লি বিধানসভায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। সংসদীয় উপস্থিতি সীমিত হলেও, দিল্লি বরাবরই জাতীয় রাজনৈতিক বিবরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। তাহলে সাম্প্রতিক ফলাফল দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কী বোঝায়? নিচের তিনটি বিশ্লেষণ এই প্রশ্নের উত্তর দেবে।
বিজেপির বিনামূল্যে সুবিধা প্রদানের কৌশল ফলপ্রসূ
২০২৫ সালের দিল্লি নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রচার ছিল যে, আম আদমি পার্টির (আপ) সমস্ত কল্যাণমূলক প্রকল্প চালু থাকবে। আপ তাদের প্রচারে বিজেপিকে মিথ্যাবাদী বলে দাবি করে। রাজনৈতিক অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
২০১৪ সালে জয়ের পর বিজেপি এমন কল্যাণমূলক প্রকল্পে বিনিয়োগ করে যা আয় সৃষ্টির চেয়ে সম্পদ সরবরাহকে অগ্রাধিকার দেয়। শৌচাগার, এলপিজি সিলিন্ডার, বাড়ি এবং পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহের মতো প্রকল্প তার উদাহরণ, যেখানে নগদ হস্তান্তর, বিদ্যুৎ ও জল ভর্তুকি বা বিনামূল্যে বাস ভ্রমণের মতো প্রকল্পগুলি আয়ের ওপর নির্ভরশীল। ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি (পিএম-কিষান) ঘোষণা করলেও, ২০২৪ সালের অন্তর্বর্তী বাজেটে বিজেপি কঠোরভাবে আর্থিক সংযম অবলম্বন করেছিল।
এর ফলে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তবে, সেই নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পুরোপুরি আয়ের স্থানান্তর কর্মসূচিকে গ্রহণ করেছে। মহিলাদের জন্য নগদ সহায়তা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি এবং তার মিত্ররা হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে সরকার রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে, যদিও কয়েক মাস আগে তারা লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফল করেছিল।
এটি প্রশ্ন তোলে যে, বিজেপি/এনডিএ ও অন্যান্য অ-বিজেপি সরকার আসন্ন রাজ্য নির্বাচনে একই প্রতিশ্রুতি দেবে কি না। যদি এটি ঘটে, তাহলে রাজ্যগুলোর মূলধন ব্যয়ের হার কেন্দ্রীয় সরকারের তুলনায় কম থাকবে। এটি এমন একটি দেশে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে যেখানে রাজ্যগুলোর সম্মিলিত ব্যয় কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয়ের তুলনায় বেশি।
কংগ্রেস বিরোধী-বিজেপি রাজনীতিতে পুনরুত্থান পাবে?
আপ যখন দিল্লিতে কংগ্রেসকে কার্যত নিশ্চিহ্ন করে, তখন এটি জাতীয় রাজনীতিতে নিজের ভূমিকা নিয়ে বৃহত্তর প্রচার তৈরি করেছিল এবং কংগ্রেসকে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে প্রতিস্থাপনের দাবি জানিয়েছিল।
আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে জোট গঠনের প্রচেষ্টা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি এবং কংগ্রেস-বিরোধী অন্যান্য দল আপকে ব্যবহার করে কংগ্রেসকে কোণঠাসা করেছিল।
কিন্তু দিল্লির নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর এবং কংগ্রেসের ভোটের হার বিজেপি ও আপের ভোটের ব্যবধানের চেয়ে বেশি হওয়ার কারণে আপের রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হবে। তবে, এই বিজয় কংগ্রেসকে অন্যান্য বিজেপি-বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে শক্তিশালী করবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন একমাত্র দুই বিরোধী মুখ্যমন্ত্রী, যারা কংগ্রেসের সঙ্গে কোনো বোঝাপড়া ছাড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়েছিলেন।
অন্যদিকে, পাঞ্জাবে (আপ) ও কেরালায় (সিপিআইএম) দু’টি অ-বিজেপি সরকার রয়েছে, যেখানে বিজেপি মূল প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। তবে, বাস্তবতা হলো যে, এই নির্বাচনী ফলাফলের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী বিজেপি।
বিজেপি তার মিত্রদের উপর প্রভাব বাড়াবে
দিল্লিতে জয়লাভের মাধ্যমে বিজেপি তার মিত্রদের কাছেও শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছে। আপকে পরাজিত করে, যা এক সময় বিজেপির জন্য কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিল, বিজেপি দেখিয়েছে যে তারা ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে খারাপ পারফরম্যান্সের পর তাদের শক্তি পুনরুদ্ধার করেছে।
এই জয় বিজেপিকে তার মিত্রদের সঙ্গে দর-কষাকষি এবং দলের অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে কঠোর অবস্থান নিতে সাহায্য করবে। সম্ভবত এর প্রভাব বিহার নির্বাচনে আসন বণ্টন এবং প্রচার কৌশলে দেখা যাবে।