সাধারণ পাঠকদের যোগদানের সংখ্যা বিচার করলে বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলাগুলোর একটি হল কলকাতা বইমেলা – বইয়ের সুঘ্রাণ, ধুলোর অ্যালার্জি, লিটল ম্যাগাজিন কেনার জন্য ঝুলোঝুলি, মাছভাজার স্টল আর ক্যান্ডিফ্লস নিয়ে যা ওই শহরে শীতকালেরও এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ।
গত ২৮শে জানুয়ারি শুরু হয়ে এ বছর যে মেলা আজ রোববারেই শেষ হচ্ছে।
ফ্রাঙ্কফুর্ট আর লন্ডন বুক ফেয়ারের পরে এত বড় বইয়ের সমাহারও বিশ্বের আর কোথায়ওই হয় না বললে চলে!
কলকাতায় প্রায় অর্ধশতাব্দীর ঐতিহ্যমন্ডিত এই বইমেলাতে সেই ১৯৯৬ সাল থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়ে আসছে বাংলাদেশ, বহুবার তারা মেলার ‘থিম কান্ট্রি’ হিসেবেও মনোনীত হয়েছে।
‘৯৬ সালের আগেও অবশ্য বাংলাদেশের দুটো কী তিনটে স্টল প্রায় প্রতিবারই কলকাতা বইমেলায় থাকত।
বাংলাদেশের বইপত্র, সে দেশের লেখক-কবিরাও ক্রমশ এই মেলার অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছিলেন।
কিন্তু গত অগাস্টে সে দেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর এবারের কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ অনুপস্থিত ছিল – মেলার আয়োজকদের কথাবার্তা থেকেও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কারণেই বাংলাদেশের যোগদান সম্ভব হয়নি।
বস্তুত গত বেশ কয়েক মাস ধরেই ভারত সরকার মেডিক্যাল ও ইমার্জেন্সি কেস ছাড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দেওয়াই বন্ধ রেখেছে।
ফলে এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রকাশক-লেখকরা চাইলেও তাদের কলকাতা বইমেলায় আসা সম্ভবই ছিল না।
২০২২ সালের কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’
ফলে প্রায় তিন দশকের পরম্পরা ভেঙে এবারে কলকাতা বইমেলায় ছিল না বাংলাদেশের বইয়ের সম্ভার, গরহাজির ছিলেন সে দেশের লেখক, প্রকাশক বা কবিরাও।
যে ‘বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন’ কলকাতা বইমেলার একটা বড় আকর্ষণ হয়ে উঠেছিল সেটাও এবারে মেলা প্রাঙ্গণে ছিল না – তার জায়গায় অনেকটা জায়গা নিয়ে রয়েছিল ‘থিম কান্ট্রি’ জার্মানির প্যাভিলিয়ন।
কিন্তু ঘরের পাশে প্রতিবেশী দেশের সাহিত্য সম্ভার যে এই বইমেলায় থাকল না, তাদের সেই না থাকাটাকে কী চোখে দেখছেন কলকাতার পাঠক-লেখক-প্রকাশকরা?
তারা কি শহরের বইমেলাতে বাংলাদেশকে আদৌ মিস করেছেন? না কী এই না-থাকাটায় তাদের কিছুই আসে যায় না?
এই সরেজমিন প্রতিবেদনে তারই সুলুকসন্ধান করেছে বিবিসি বাংলা।
কলকাতা বইমেলায় ভাষানগর ‘কবিতার গাড়ি’
‘বাংলাদেশকে দেখতে না পাওয়াটা যন্ত্রণার’
বাংলাদেশকে ছাড়া এই আয়োজন যে অসম্পূর্ণ, বলতে কোনও দ্বিধা নেই পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ লেখকদেরও। তাদেরই একজন নন্দিত লেখক ও গদ্যকার, সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত লেখক স্বপ্নময় চক্রবর্তী।
প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে কলকাতা বইমেলা যখন শুরু হয়, তখন থেকেই প্রতি বছর মেলায় আসছেন তিনি।
মেলায় ‘একটাও বাংলাদেশের স্টল নেই, পদ্মাপারের কোনও বই নেই’ – এটা তার কাছে নতুন ও যন্ত্রণাদায়ক একটা অভিজ্ঞতা!
বিবিসি বাংলাকে স্বপ্নময় চক্রবর্তী বলছিলেন, “এই যে পরিবেশনটা – বইমেলা যদি একটা পুরো প্লেট হয়, আট কোর্সের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন নুনটা কম আছে! একটু নুন-কম, নুন-কম লাগছে … বাংলাদেশটা এখানে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”
“আসলে ভাবনা, চিন্তা, দর্শন এগুলোর তো পাসপোর্ট-ভিসা লাগে না … এগুলো আপনি কর্ডনিং করে আটকাতে পারবেন না, বিএসএফ দিয়ে কী ফোর্স বা মিলিটারি বা তারকাঁটা দিয়েও পারবেন না। ভাবনাচিন্তা আসলে আটকানো সহজ নয়, এগুলো প্রোপ্যাগেট করে।”
“বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন এখানে দেখতে পাব না, এটা আমার পক্ষে খুবই বেদনাদায়ক!”
বিবিসির সঙ্গে কথা বলছেন লেখক স্বপ্নময় চক্রবর্তী
সেই নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকার আজিজ মার্কেটে নিজের বই বিক্রি হতে দেখাটা স্বপ্নময় চক্রবর্তীর কাছে ছিল স্বর্গীয় অভিজ্ঞতার মতো, এবং কলকাতার বহু লেখক-কবির কাছেই বাংলাদেশ আজও যেন দ্বিতীয় ঘরবাড়ি।
স্বপ্নময় চক্রবর্তী আরও বলছিলেন, “যে করেই হোক আমাদের এদিকের বই কিন্তু বাংলাদেশে পৌঁছে যেত, ওরা উৎসাহ নিয়ে পড়তেনও। বরং ক’জন লেখককে বাদ দিলে আমরাই যে খুব নাচানাচি করে বাংলাদেশের বই পড়েছি, তা বলা যাবে না।”
“ঢাকার একুশে বইমেলাতেও হয়তো সরকারিভাবে পশ্চিমবঙ্গ আমন্ত্রিত হয় না, তা সত্ত্বেও বলব বাংলাদেশকে কলকাতা বইমেলার খুবই প্রয়োজন ছিল”, পরিষ্কার জানাচ্ছেন তিনি।
বইমেলার আয়োজকেরা কী বলছেন?
বইমেলার আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের বক্তব্য, তারা শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত চেয়েছিলেন বাংলাদেশ মেলাতে আসুক।
মেলার উদ্বোধনের দিনকয়েক আগে দিল্লিতে এসে গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় ব্যাখ্যা করেছিলেন কেন এবারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব থাকছে না।
গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায়
দিল্লিতে জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “এটা ঠিকই যে ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশ কলকাতা বইমেলাতে আসছিল। এবারে যে ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি চলছে, সেই বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করা উচিত নয়। কিন্তু আমরা সবাই জানি কী চলছে।”
“সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা বইমেলার পবিত্রতা, নিরাপত্তা এবং অন্য কোনও স্তর যাতে বিপদগ্রস্ত না হয় সেই জন্যই আমরা এবারে বাংলাদেশকে রাখতে পারছি না। যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।”
“সাহিত্যের কোনও সীমান্ত হয় না। কাঁটাতারের বেড়া হয় না। বাংলাদেশ থেকে যারা আসতে চেয়েছিলেন আমরা তাদের বলেছি আপনারা ভারত সরকারের মাধ্যমে আসুন”, সে দিন আরও বলেন তিনি।
গিল্ড সভাপতির কথায় পরিষ্কার ইঙ্গিত ছিল, তারা আমন্ত্রণ জানাতে অপারগ হলেও বাংলাদেশের কোনও প্রকাশক যদি ভারত সরকারের কাছ থেকে সরাসরি অনুমতি নিয়ে মেলায় আসতে চান, তাহলে তাদের কোনও আপত্তি থাকবে না।
কিন্তু সহজবোধ্য কারণেই বাস্তবে সেটা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
এবারের কলকাতা বইমেলায় গিল্ডের কার্যালয়
গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ও দে’জ পাবলিশার্সের কর্ণধার সুধাংশু শেখর দে-ও বিবিসিকে বলছিলেন, বাংলাদেশের বন্ধুরা মেলায় এলে তারা সত্যিই খুব খুশি হতেন।
“দেখুন, বাংলাদেশকে মিস আমরা সত্যি সত্যি সবাই করছি। বাংলাদেশে বহু প্রকাশক আছেন, বন্ধুবান্ধব আছেন, বহু লেখক আছেন যাদের সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক … অথচ আজকে সেখানেও আমি যেতে পারছি না।”
“বাংলাদেশের প্রকাশক, পুস্তকবিক্রেতা বা লেখক তারাও কেউ এখানে আসতে পারলেন না! এলেনই না এবারে! এই কষ্টটা তো আমরা নিশ্চয়ই প্রচন্ডভাবে অনুভব করি, বাংলাদেশে আমার বন্ধুবান্ধব যারা তারাও করেন।”
“যে পরিস্থিতিতেই হোক তারা আসতে পারেননি, কিন্তু বই তো কোনও অপরাধ করেনি … বইয়ের তো কোনও সীমানা নেই, সীমারেখাও নেই!”
“বইয়ের আদানপ্রদান, বই যেখানে যাওয়ার সেখানে যেতে দেওয়াটা খুব দরকার … বইকে বাধা দেওয়া বা আটকে রাখা হোক আমরা কখনও চাই না, চাই না বই একটা ব্যারিকেড হয়ে যাক,” রীতিমতো হতাশার সুরেই প্রায় এক নি:শ্বাসে বলে যান সুধাংশু শেখর দে।
বিবিসির সঙ্গে আলাপচারিতায় সুধাংশু শেখর দে
কলকাতার পাঠকদের কী রায়?
অথচ সীমান্তপারের সেই বই-ই এবারে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বাধার দেওয়ালের মুখে পড়েছে। কিন্তু কলকাতার পাঠকসমাজ কি তাতে হতাশ?
বাংলাদেশের বইয়ের অনুরাগী ও প্রবীণ পাঠক অশোক মজুমদার বলছিলেন, “মিস তো করছেই! ভালো ভালো গল্প আছে, কবিতা আছে ওদের অনেক… যদিও দাম বেশি বাংলাদেশের বইগুলোর, কিন্তু আমার পছন্দ।”
“মানে একটু যেটাকে বলা যায় আর কী, মাটির ছোঁয়া থাকে ওর মধ্যে অনেকটা। মাঠঘাটের ছোঁয়াটা অনেকটা বেশি থাকে।”
মাটির গন্ধ খুঁজে পান বলেই ‘একটু বেশি দাম’ দিয়ে প্রতিবার বাংলাদেশের বই কেনেন তিনি।
তবে, এবারে সে সুযোগও হয়নি।
কলকাতার তরুণী পাঠক অনিন্দিতা রায় আবার একটু দ্বিধাণ্বিত মনে হল, বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহের পটভূমিতে সে দেশের বইপত্র মিস করাটা কতটা ঠিক হচ্ছে!
বাংলাদেশের বইয়ের অনুরাগী অশোক মজুমদার, সস্ত্রীক
“না এবারে যে ঘটনাটা ওখানে ঘটেছে সেটা অত্যন্তই দু:খজনক ঘটনা। সেটা আমরা সবাই দেখেছি এবং জেনেছি।”
“কিন্তু এ বছর একটু তো মিস আমরা করছিই … সেটা ঠিক, কিন্তু পুরোপুরি যে মিস করছি এরকমও নয়। ঠিক আছে, পরের বারও আমরা আশা রাখব যদি বাংলাদেশকে রাখা হয় … সেটা নেক্সট বার আমরা একটু দেখব”, বিবিসিকে বলছিলেন তিনি।
বইমেলাতে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন নেই, সে দেশের লেখক-কবি-শিল্পীরা নেই – তাতে একটা শূন্যতার বোধ আছে আরও অনেকেরই!
গ্রন্থপ্রেমী মৌলি মিশ্রর কথায়, “সারা বছরই আমি অপেক্ষা করে থাকি যে কবে যাব বইমেলাতে, ওই একটা দিন! বছরে একবারই, ফলে অপেক্ষা করে থাকি। আর হ্যাঁ, বাংলাদেশের যতজন লেখক আছেন তাদের লেখা যথেষ্ঠ ভালো, আর আমার ভালোও লাগে ওদের বই পড়তে।”
“কিন্তু এখন যেহেতু তারা নেই, তাই একটা গ্যাপ বা ব্যবধান তো অবশ্যই আছে। একটা গ্যাপ থেকেই যায়, আর কিছুটা হলেও প্রভাব তো পড়েই!”
কলকাতার পাঠিকা অনিন্দিতা রায়
বাংলাদেশের ‘ব্যান্ড সঙ্গীতে’র ভক্ত কৌস্তভ তিওয়ারি আবার বলছিলেন, “এখনকার দিনে পড়াশোনা, মানে বই পড়া ব্যাপারটা বেশ কমে গেছে, এটা তো ঠিক!”
“এখন আমি যদি আমার দৃষ্টিভঙ্গীটা আপনাকে বলি, আমি কিন্তু খুব গান শুনি, আর বাংলাদেশি গান ভালবাসি। পিঁপড়ে, কুঁড়েঘর, শিরোনামহীন – এই সব ব্যান্ড আমি শুনি, মন থেকে ভালবাসি তাদের। এইটুকুই! বাংলাদেশের এখানে না থাকাটা আমি খুব মিস করছি অন্তত!”
আসছে বছর আবার হবে?
তবে আগামী দিনে কলকাতা বইমেলাতে আবার বাংলাদেশকে দেখা যাবে, এই আশাতেও বুক বাঁধতে রাজি অনেকেই।
পশ্চিমবঙ্গের তরুণ লেখক অরুণাভ রাহারায় যেমন বলছিলেন, “পরিস্থিতি একটু জটিল হয়ে আছে। চারদিকে খবর পড়ছি, আপনারা সব জানেন। আমি আশা করব যে আস্তে আস্তে এই পরিস্থিতি আমরা কাটিয়ে উঠব।”
“বাংলাদেশ থেকে আমাদের লেখক বন্ধুরা, সিনিয়র লেখকরা আবার আসবেন। আমরা আবার একসঙ্গে চা খাব।”
অরুণাভ রাহারায়
“আমরাও কিন্তু আগে একই রকমভাবে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় গিয়েছি, সেই যাতায়াতও এখন বন্ধ! আমি আশা করব যে সেই যাতায়াতও খুব দ্রুতই আমরা শুরু করতে পারব”, এখনই হাল ছাড়তে রাজি নন অরুণাভ।
সুদূর আমেরিকার বস্টন থেকে কলকাতা বইমেলায় যোগ দিতে এসেছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশি শিল্পী ও গায়ক মহীতোষ তালুকদার তাপস। তিনিও কিন্তু স্বপ্ন দেখেন, অচিরেই আবার ‘হাতে হাত রাখবে’ ঢাকা ও কলকাতা।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, “বইমেলা মিস করতেসে কি না জানি না, কিন্তু অনেক লোকজন ও দর্শক-শ্রোতা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বললেন যে, বাংলাদেশটা থাকলে একটু ভালো হইত। দুই দেশের সম্প্রীতিটা আসলে খুব দরকার।”
“আমি গত বছরও বইমেলায় এসেছি, সমাপ্তি অনুষ্ঠানে চারশো ছেলেমেয়েকে নিয়ে সমবেত কণ্ঠে গানও গাইলাম আমরা … সলিল চৌধুরীর গান, রুমা গুহঠাকুরতার গান। তো এবারও প্রথমে কথা ছিল আমরা আসব, কিন্তু পরে রাজনৈতিক কারণে সেটা আর হয়নি।”
মহীতোষ তালুকদার তাপস
“আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশকে এখানে খুবই মিস করতেসি। আশা করি সামনের বছর আমাদের দুই দেশের অবস্থাটা আরও পোক্ত হবে, সম্প্রীতিটা আরও বাড়বে।”
“আশা করি সামনের বছর আবার এখানে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন থাকবে”, নিশ্চিত প্রত্যয়ে বলেন মহীতোষ তালুকদার তাপস।
‘প্যারিসের কবিরাও মরক্কোর লেখালেখির খোঁজ রাখেন’
বাংলাদেশের পাঠক কলকাতায় কম হতে পারে, তবু বইমেলায় তাদের অবশ্যই দরকার – মনে করিয়ে দেন শহরের কবিতার এক উজ্জ্বল কন্ঠস্বর।
পশ্চিমবঙ্গের বর্ষীয়ান কবি সুবোধ সরকার বিবিসিকে বলছিলেন, “নিজেদের মধ্যে আলোচনায়, কবি-লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবীরা সকলেই বলছেন যে খুব দুর্ভাগ্যজনক!
কিন্তু এ কথাটা মানতে হবে যে বাংলাদেশের সাহিত্য, বাংলা ভাষাতে লেখা হলেও তার পাঠক কলকাতায় কম।”
বিবিসির সঙ্গে কথা বলছেন কবি সুবোধ সরকার
“খুব বিশিষ্ট পাঠক ছাড়া পাঠক নেই। ধরুন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখা, বা শামসুর রহমানের কবিতা – এগুলো যারা খুব বিশিষ্টজন তারাই পড়েন। এখন বাংলাদেশের সাহিত্য কলেজ স্ট্রীটে ঢালাও বিক্রি হচ্ছে এরকম কোনওদিন শোনা যায়নি।”
“কিন্তু বাংলাদেশের লেখালেখির পাঠক পশ্চিমবঙ্গে কম, এই সত্যিটা মেনে নিয়েও আমি বলব বাংলাদেশের বই আমাদের এখানে আসা উচিত!”
আন্তর্জাতিক একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে সুবোধ সরকার জানাচ্ছেন, প্যারিসের কবি-লেখকরাও দু’বেলা খোঁজ রাখেন মরক্কোতে কী লেখালেখি হচ্ছে।
“মরক্কো এক সময় ফ্রান্সের কলোনি ছিল বলেই শুধু নয়, একই ভাষায় বিভিন্ন দেশে কী ধরনের লেখালেখি হচ্ছে – সেটা জানাটা বা ক্যাফেতে বসে তা নিয়ে চর্চা করাটা লেখকদের আসলে খুবই দরকার।”
বইমেলার একটি স্টলে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা বইয়ের সম্ভার
সেই কারণেই তিনি মনে করেন, “বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন কী হচ্ছে না হচ্ছে সেটা অনেক পরের কথা।
কিন্তু বাংলাদেশের বই যদি আমাদের এখানে না পৌঁছয়, তাহলে কিন্তু বাংলা ভাষা আর একটি দেশে – যে দেশটি আমাদের প্রায় নিজেদের শরীরে ও অবচেতনে রয়ে গেছে – সেই দেশে কী সাহিত্যচর্চা হচ্ছে, বাংলা ভাষাতেই হচ্ছে – সেটা কিন্তু আমরা জানতে পারব না।”
“এটা যদি জানতে না পারি, এটা কিন্তু আমাদেরও ক্ষতি!”
“আবার আমাদের বইপত্র সেখানে না পৌঁছলে তাদেরও ক্ষতি”, বলছিলেন এই প্রবীণ কবি।
দুই দেশের সাহিত্যচর্চার মধ্যেও সীমান্তের দেওয়াল খাড়া করলে ক্ষতি যে উভয়েরই, পারস্পরিক এই উপলব্ধি শেষ পর্যন্ত কলকাতা ও ঢাকার বইমেলাকে মেলাতে পারে কি না, এটাই এখন দেখার!
বিবিসি নিউজ বাংলা