সারাক্ষণ রিপোর্ট
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চারটি ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনি পরামর্শ চেয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতারণামূলক সফটওয়্যার ব্যবহার করে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
বিএসইসির জানুয়ারি মাসের শেষের দিকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, নিম্নলিখিত চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে:
- তমহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড
- বাঙ্কো সিকিউরিটিজ লিমিটেড
- ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ লিমিটেড
- শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড
এছাড়া, পিএফআই সিকিউরিটিজ-এর অনিয়ম তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। মোশিহর সিকিউরিটিজ-এর বিরুদ্ধে ১৬১ কোটি টাকা অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে, যার সমাধানে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। আরও চারটি প্রতিষ্ঠান— ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস, সাবভ্যালি সিকিউরিটিজ, ইনডিকেট সিকিউরিটিজ এবং সাদ সিকিউরিটিজ লিমিটেড—কে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রতারণার কৌশল
ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের তহবিল সংরক্ষণের জন্য কনসোলিডেটেড কাস্টমারস অ্যাকাউন্ট (সিসিএ) ব্যবহার করে। সাধারণত এই তহবিল শুধুমাত্র শেয়ার কেনাকাটা ও কমিশন পরিশোধের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো গোপনে সমান্তরাল সফটওয়্যার ব্যবহার করে:
- বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত হিসাব গোপন করেছে।
- মিথ্যে লেনদেন দেখিয়ে গ্রাহক ও নিয়ন্ত্রকদের বিভ্রান্ত করেছে।
- বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ: বিস্তারিত বিশ্লেষণ
তমহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড
- আত্মসাৎ: ১৩৯.৬৭ কোটি টাকা
- নগদ অর্থ: ৯২.৫৭ কোটি টাকা
- শেয়ার মূল্য: ৪৭ কোটি টাকা
- মোট অভিযোগ: ৭২০টি (৫২.৩৯ কোটি টাকার দাবি)
বাঙ্কো সিকিউরিটিজ লিমিটেড
- আত্মসাৎ: ৬০ কোটি টাকা
- সিসিএ ঘাটতি: ১২৮ কোটি টাকা
- নগদ: ৬৬.১১ কোটি টাকা
- শেয়ার: ৬১.৯৭ কোটি টাকা
- ২০২১ সালে ডিএসই লেনদেন স্থগিত করে
ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ লিমিটেড
- অফিস ও লেনদেন হঠাৎ বন্ধ করে
- সিসিএ ঘাটতি: ৬৫.৩০ কোটি টাকা
- নগদ: ৪৪.৯০ কোটি টাকা
- শেয়ার: ২০.৪০ কোটি টাকা
- বিইও অ্যাকাউন্ট অভিযোগ: ২১,১৮০টির মধ্যে ৬,৪৮০টি
- বিনিয়োগকারীদের দাবি: ৪৮ কোটি টাকা (ডিএসই মাত্র ১.৩২ কোটি টাকা সমন্বয় করতে পেরেছে)
শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড
- আত্মসাৎ: ১৩.৭৪ কোটি টাকা
- মোট অভিযোগ: ৪,১৮৭টি
- অপরিশোধিত বিনিয়োগকারীর দাবি: ১,০৮১টি
মোশিহর সিকিউরিটিজের জন্য রোডম্যাপ
মোশিহর সিকিউরিটিজ বিনিয়োগকারীদের অর্থ অপব্যবহার করে আসছিল।
- সিসিএ ঘাটতি (১৯ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত): ৬৮.৫৮ কোটি টাকা
- সিসিএ ঘাটতি (২ মে ২০২৪ পর্যন্ত): ৭৫ কোটি টাকা
- তদন্ত কমিটি (২৯ আগস্ট ২০২৪ গঠিত)
- মোট অপব্যবহার: ১৬১ কোটি টাকা (নগদ: ৬৮.৫৮ কোটি, শেয়ার: ৯২.৩৫ কোটি)
পিএফআই সিকিউরিটিজের জন্য তদন্ত কমিটি
- সিসিএ ঘাটতি: ২৫ কোটি টাকা → ২৮.১৮ কোটি টাকায় বৃদ্ধি (২১ আগস্ট ২০২৪)
- সম্পদ: ১,০০০ কোটি টাকার বেশি (ভূমি ও ভবনসহ)
স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ
বিএসইসি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর জন্য একটি নতুন নীতিমালা চালু করে:
- প্রতিদিনের লেনদেন শেষে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সিসিএ রিপোর্টিং বাধ্যতামূলক করা হয়।
- অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তথ্য হালনাগাদ করতে হবে।
- ব্রোকারেজ হাউসগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালু করা হয়।
উপসংহার
বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। অনিয়মকারী ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি, ভবিষ্যতে অনিয়ম প্রতিরোধে নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।