সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- অতিরিক্ত অগ্রিম কর ব্যবসায়ীদের মূলধন সংকট ও ব্যয় বৃদ্ধি করছে।
- রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে, কারণ আয়কর রিটার্ন জমার হার কম।
- স্বচ্ছতা, অটোমেশন ও ব্যবসাবান্ধব নীতি নিশ্চিত করা জরুরি।
অগ্রিম করের বর্তমান চিত্র
অগ্রিম কর চারটি কিস্তিতে পরিশোধ করা যায়— ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৫ ডিসেম্বর, ১৫ মার্চ ও ১৫ জুন। এছাড়া, ৫৩ ধরনের উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে, যা মূলত অগ্রিম কর হিসেবেই পরিশোধ হয়।
তবে, বর্তমানে আমদানি ও সরবরাহ পর্যায়ে অতিরিক্ত অগ্রিম আয়কর ব্যবসার ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে উদ্যোক্তাদের। এ কর ব্যবস্থা ব্যবসায়ীদের চলতি মূলধনে সংকট তৈরি করছে, যার ফলে তাদের বিকল্প উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এতে ব্যবসার ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।
অগ্রিম করের সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা
উৎসে কর দুই ধরনের— চূড়ান্ত ও সমন্বয়যোগ্য। চূড়ান্ত কর ফেরত পাওয়ার সুযোগ নেই, কিন্তু সমন্বয়যোগ্য করের ক্ষেত্রে ফেরতের ব্যবস্থা থাকলেও প্রক্রিয়াটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। ফলে ব্যবসায়ীরা অনেক সময় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এই ব্যবস্থা সহজ করার দাবি দীর্ঘদিন ধরে আসছে, কারণ এটি কর ফাঁকি রোধে সফল হয়নি বরং ব্যবসায়িক ব্যয় বৃদ্ধি করছে। বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশে এত বেশি অগ্রিম কর দিতে হয় না। বাংলাদেশেও এ ব্যবস্থা সহজ করার দাবি উঠেছে।
রাজস্ব আহরণ ও করজাল সম্প্রসারণের চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে রাজস্ব আহরণ সন্তোষজনক নয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২ লাখ ১৪ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৭ শতাংশের বেশি।
আইএমএফের শর্ত অনুসারে, বাংলাদেশকে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এই অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম— ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এটি মাত্র ৭.৩২%। মূল সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- করজাল সম্প্রসারণের ধীরগতি
- তথ্য বিনিময়ের ঘাটতি
- দক্ষ জনবলের অভাব
- আইনের দুর্বল প্রয়োগ
কর ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা
সরকারকে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর জন্য ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে হবে। রাজস্ব ঘাটতি কমাতে করজালের বিস্তৃতি অত্যন্ত জরুরি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ১ কোটি ৪ লাখ করদাতা শনাক্ত হলেও আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন মাত্র ৪৩ লাখ।
কর আদায় ব্যবস্থায় নিম্নলিখিত পরিবর্তন প্রয়োজন:
- পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো
- করদাতাদের জন্য সহজ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা
- কর প্রশাসনে অটোমেশন বৃদ্ধি
- করদাতা ও আহরণকারীর মধ্যে মিথস্ক্রিয়া বাড়ানো
রাজস্ব প্রশাসনের দুর্বলতা ও সমাধানের পথ
বর্তমানে রাজস্ব প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে করদাতাদের হয়রানি এবং বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ ওঠে।
রাজস্ব ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও প্রশাসনিক সংস্কার না হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ধীরগতি আসবে। অগ্রিম আয়কর সমন্বয়ের জটিলতা দূর না করলে ব্যবসায়ীদের অসুবিধা অব্যাহত থাকবে।
সার্বিকভাবে, রাজস্ব ব্যবস্থাকে আরও ব্যবসাবান্ধব করতে হলে কর কাঠামোর সংস্কার, করজাল সম্প্রসারণ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।