সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- সরকার উদ্যোগ নিলে সাত দিনের মধ্যেই সংকট সমাধান হতো, কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
- সরকার আমদানি খরচ বৃদ্ধির পরও তেলের মূল্য বৃদ্ধির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করায় সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে
- বোতলজাত সোয়াবিন তেলের দাম বর্তমানে ১৭৫-১৭৬ টাকা প্রতি লিটার, যা গত মাসে ১% এবং গত বছরে ২.৩৩% বেড়েছে
- রমজান সামনে রেখে সোয়াবিন তেলের এই সংকট চলছে,সরবরাহ কম থাকায় ক্রেতারা ভোগান্তিতে পড়েছেন
রমজান মাসের আগে ভোজ্য তেলের বাজারে সরবরাহের সমস্যা এখনো কাটেনি। ভোক্তারা অভিযোগ করছেন, বোতলজাত সোয়াবিন তেলের সরবরাহ তেমন উন্নত হয়নি। বাজারের ব্যবসায়ীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, যদিও এই সময়ে তেলের চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে থাকে।
সরবরাহের বর্তমান অবস্থা
১০ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য উপদেষ্টা এস কে বশির উদ্দিন আশ্বস্ত করেছিলেন যে এক সপ্তাহের মধ্যে ভোজ্য তেলের বাজার স্বাভাবিক হবে। তবে ছয় দিন পর ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সরবরাহ বরং কমে গেছে।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ বাজারের এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, সরবরাহ অপরিবর্তিত থাকলেও রাজধানীর মৌলভীবাজারের এক ব্যবসায়ী সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা বলেছেন।
ভোক্তাদের অভিজ্ঞতা
রাজধানীর জিগাতলার এক বাসিন্দা জানান, তিনি প্রথম দুটি দোকানে বোতলজাত তেল পাননি। তৃতীয় দোকানে তেল পেলেও পাঁচ লিটারের বোতল মেলেনি, শুধু দুই লিটারের বোতল পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, খিলগায়ের বাসিন্দা মমিনুর রহমান বলেন, চারটি দোকানে খোঁজার পর অবশেষে পাঁচ লিটারের একটি বোতল কিনতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকার বলছে সংকট কৃত্রিম, কিন্তু সমাধান হচ্ছে না।”
সরবরাহ হ্রাসের কারণ
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের মতে, সরকার আমদানি খরচ বৃদ্ধির পরও তেলের মূল্য বৃদ্ধির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করায় সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। ফলে ভোক্তারা দোকান থেকে দোকানে তেল খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাংলাদেশ বছরে ২৪ লাখ টন ভোজ্য তেল আমদানি করে, যা অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ।
মূল্য বৃদ্ধি
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বোতলজাত সোয়াবিন তেলের দাম বর্তমানে ১৭৫-১৭৬ টাকা প্রতি লিটার, যা গত মাসে ১% এবং গত বছরে ২.৩৩% বেড়েছে।
খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের মতামত
- মালিবাগের খুচরা বিক্রেতা আলম আহমদ জানান, “৮ ফেব্রুয়ারি দোকানের চাহিদার মাত্র ১০% তেল পেয়েছি। ১৬ ফেব্রুয়ারিতেও পরিস্থিতি একই রকম।”
- কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা নাম প্রকাশে একটু ভয় পান, তাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আগে চাহিদার এক-চতুর্থাংশ তেল পেতাম, এখন তাও পাচ্ছি না।”
- মৌলভীবাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, তার চাহিদার ২৫% থেকে ৫০% সরবরাহ হয়েছে, তবে উপদেষ্টার আশ্বাস অনুযায়ী এখনও স্বাভাবিক অবস্থা ফেরেনি।
- চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ী বলেন, “বাজারে সরবরাহের কোনো উন্নতি হয়নি, বরং আগের মতোই সংকট চলছে।”
ভবিষ্যৎ সরবরাহের পূর্বাভাস
মেঘনা গ্রুপের এক কর্মকর্তা জানান, ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে একটি আমদানিবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। ফলে ৫-৬ মার্চের মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে।
অন্য বেশ কয়েকটি বড় গ্রুপের প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা প্রতিক্রিয়া দেননি।
সরকারি উদ্যোগ
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি) বাজার স্থিতিশীল রাখতে একটি স্টেকহোল্ডার সভা করেছে।
বাংলাদেশ ভোক্তা অধিকার সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, “সরকার উদ্যোগ নিলে সাত দিনের মধ্যেই সংকট সমাধান হতো, কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
বর্তমান বাস্তবতা
রমজান সামনে রেখে সোয়াবিন তেলের এই সংকট চলছে। সরবরাহ কম থাকায় ক্রেতারা ভোগান্তিতে পড়েছেন, যদিও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি উদ্যোগ এবং আমদানি জাহাজের আগমনের মাধ্যমে সংকট কমার আশা থাকলেও এখনো সুস্পষ্ট সমাধানের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।