সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৫% বেশি
- বীজের দাম আগের তুলনায় দ্বিগুণ হওয়ায় খরচ বেড়েছে, সার ও বীজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে
- দেশে বার্ষিক আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন, অথচ এ বছর উৎপাদন ১ কোটি ২০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে
বর্তমানে বাজারে অন্যতম সস্তা খাদ্যপণ্য হচ্ছে আলু। গত নভেম্বরে উচ্চ দামের প্রত্যাশায় কৃষকরা ব্যাপক পরিমাণে আলু চাষ করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৫% বেশি। কিন্তু অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে কৃষকরা এখন লাভের বদলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
আলুর দাম কমে যাওয়ার প্রভাব
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি অনুসারে, ঢাকায় বর্তমানে আলুর দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা। কিন্তু রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও জয়পুরহাটের কৃষকরা জানান, তারা মাত্র ১১ টাকার কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এবছর প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়েছে ১৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ১৩ টাকা।
উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে, লাভ নেই
কৃষকদের অভিযোগ, উৎপাদন খরচ তুলতে না পারায় তারা সরকারের সহায়তা আশা করছেন। বিরলের কৃষক মোহম্মদ হোসেন জানান, প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে ১৬ টাকা ৬০ পয়সা, কিন্তু বিক্রি করতে হয়েছে মাত্র ১৩ টাকায়। তার মতে, বীজের দাম আগের তুলনায় দ্বিগুণ হওয়ায় খরচ বেড়েছে।
ময়মনসিংহ এর এক চাষি আশরাফুল আলম বলেন, প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে তার খরচ পড়েছে ১৬-১৭ টাকা, কিন্তু তিনি ১১ টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি মনে করেন, সার ও বীজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
হিমাগার সংকট ও সংরক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধি
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে বার্ষিক আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন, অথচ এ বছর উৎপাদন ১ কোটি ২০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু হিমাগারের অভাবে প্রায় ৩০% আলু নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হিমাগারে সংরক্ষণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সরকারি প্রতিক্রিয়া
কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধতন কর্মকতা জানান, সরবরাহ ব্যবস্থার জটিলতা কাটাতে সরকার নীতি সহায়তা পরিকল্পনা করছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম আশা প্রকাশ করেন, অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক কোহিনুর ইসলামের মতে, কৃষকদের ক্ষতি ঠেকাতে সরকারকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।