সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- বাজারের ওঠাপড়ার কারণে অনেক ফান্ড ম্যানেজার নিয়মিত লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারেনি
- বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের তাদের টাকা ফেরতের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে
- জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন করেছে
- প্রতিবেশী ভারতের মোট পরিচালিত আ্যাসেট ৫৪ ট্রিলিয়নেরও বেশি, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের চেয়ে বেশি
বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রকৃত নেট এ্যাসেট মূল্য ১১ টাকারও বেশি থাকলেও, বাজারে ফান্ডের ইউনিট মাত্র ৩ টাকায় কেনা যাচ্ছে। এভাবে বিনিয়োগকারীরা আনুমানিক ৭২% বিশাল ছাড় পাচ্ছেন, তবে তবুও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম।
২. ফান্ড ম্যানেজারদের কর্মকাণ্ড ও বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা
কিছু ফান্ড ম্যানেজার তালিকাভুক্ত না হওয়া কোম্পানির শেয়ার অতিরিক্ত মূল্যে ক্রয় করে, যার ফলে তাদের আর্থিক বিবরণীগুলো প্রকৃত আ্যাসেটের সঠিক মূল্য প্রকাশ করতে ব্যর্থ। এ ব্যাপারে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন করেছে।
৩. বন্ধ মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি
২০১০-১১ সালের বাজার দুর্যোগের পর তরলীকরণের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলার জন্য সিকিউরিটিজ কমিশন হঠাৎ করে বন্ধ মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছর বাড়িয়ে দেয়। ফলে বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের টাকা তুলে নিতে পারেন না এবং অতিরিক্ত ম্যানেজমেন্ট ফি দিতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাদের আস্থা হ্রাস করছে।
৪. লভ্যাংশ বিতরণে অনিয়ম ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা
বাজারের ওঠাপড়ার কারণে অনেক ফান্ড ম্যানেজার নিয়মিত লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারেনি। পাশাপাশি, সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর অনেক এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে লাইসেন্স প্রদান করার দায়িত্ব চাপানো হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও কমিয়ে দিয়েছে।
৫. আন্তর্জাতিক তুলনা ও রাজনৈতিক প্রভাব
বিশ্বব্যাপী পেশাদার ব্যবস্থাপিত পুলড ফান্ড বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিবেশী ভারতের মোট পরিচালিত আ্যাসেট ৫৪ ট্রিলিয়নেরও বেশি, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের চেয়ে বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৬৭টি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি থাকা সত্ত্বেও কোন ভালো ফল দেখা যাচ্ছে না।
৬. আদালতের আপিল ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
সিটি অফ লন্ডন ম্যানেজমেন্ট কর্পোরেশান (সিএলআইএমসি) এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে যে, ফান্ডের আ্যাসেট বিনিয়োগকারীদের, ফান্ড ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি বা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নয়। সিএল্আইএমসি উচ্চ আদালতে আপিল জানালেও আদালত তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশিত মুনাফা অর্জনে ও সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে মূলধন লাভে ব্যর্থ হচ্ছে।
৭. উপসংহার
বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের তাদের টাকা ফেরতের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। পূর্বে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের কষ্ট নতুন বিনিয়োগকারীদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করছে। বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ফান্ড ম্যানেজারদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নজরদারি ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় শৃঙ্খলা আনা অত্যন্ত জরুরি।