সারাক্ষণ ডেস্ক
বৃদ্ধাদের জন্য শিশু যত্নের চ্যালেঞ্জ
মঙ্গোলিয়ার ৬৬ বছর বয়সী মুঙ্কতসেতসেগ সঞ্জাসুরেন প্রতিদিন সকাল ৯টায় তার দরজা খুলে তার ৬ বছর বয়সী নাতি সোদ-উন্দ্রাখকে স্বাগত জানান। নাতি বাড়িতে এসে তার হোমওয়ার্কে সাহায্য করে এবং তার জন্য লাঞ্চ তৈরি করেন, এরপর তাকে বিদ্যালয়ে পৌঁছে দেন।
মুঙ্কতসেতসেগ ২০১৩ সালে শিক্ষিকা হিসেবে অবসর গ্রহণের পর থেকে নাতি সোদ-উন্দ্রাখকে একমাত্র শিশুর মতো দেখভাল করছেন, আর এটি তার জন্য পুরোপুরি যথেষ্ট। বর্তমানে তিনি আরেকটি শিশুর জন্য সেবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এশীয় মডেল ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন
এশিয়ার বিভিন্ন দেশে, বিশেষত চীন, জাপান, এবং মঙ্গোলিয়ায়, বৃদ্ধারা তাদের নাতি-নাতনিদের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক সময়, চীনা গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে কাজ করতে আসা অভিবাসীরা তাদের সন্তানদের নানী-দাদীর কাছে রেখে যায়। মঙ্গোলিয়াতেও অনেক মায়েরা পারিবারিক কাজের চাপে কাজ ছেড়ে দিয়ে শিশুদের দেখাশোনা করতে বাধ্য হচ্ছেন, যার কারণে নানিদের সাহায্যের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাচ্ছে।
মঙ্গোলিয়ায় বৃদ্ধাদের শিশু যত্নের চাপ
এশীয় সংস্কৃতিতে সাধারণত বাচ্চাদের জন্য দাদা-দাদি বা নানীর সাহায্য পাওয়া একটি প্রচলিত বিষয়, তবে মঙ্গোলিয়ায় পরিস্থিতি পরিবর্তিত হচ্ছে। এখানকার মা-বাবারা এখন অধিকাংশ সময় শিশুদের যত্ন নেওয়ার জন্য কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন, কিন্তু বিকল্প শিশুসেবা ব্যবস্থা এখনও খুবই সীমিত। এর ফলস্বরূপ, মঙ্গোলিয়ার কর্তৃপক্ষ এই সমস্যার সমাধানে অসহায় বোধ করছে।
শিশু যত্নের অমূল্য অবদান
নারীদের অধিকার ও সমতা নিয়ে কাজ করা সংস্থা “উইমেন ফর চেঞ্জ মঙ্গোলিয়া”র পরিচালক জোলঝায়া বাতখুয়াগ এর মতে, বৃদ্ধাদের শিশু যত্ন সমাজ ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “এটি শুধু পিতামাতার জন্য উপকারী নয়, দেশের জন্যও লাভজনক।” তিনি আরও বলেন, “এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি পুরোপুরি অদৃশ্য এবং অপূরণীয়, তবে এখন থেকে আমাদের এটি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।”
শিশু যত্নের স্বাস্থ্য উপকারিতা
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের গবেষক সোহইউন কিম জানিয়েছেন, যারা তাদের নাতি-নাতনির যত্ন নেন, তারা শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপকার পান। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের যত্ন বৃদ্ধাদের মানসিক অবস্থা উন্নত করতে সাহায্য করে।
বেসরকারি এবং সরকারি শিশুসেবা সমস্যাগুলি
মঙ্গোলিয়ায়, মূলত উলানবাটরের মতো বড় শহরে সরকারি এবং বেসরকারি শিশুসেবা পরিষেবা সীমিত। দেশটির কমিউনিস্ট যুগে সরকারি childcare বেশ জনপ্রিয় ছিল, তবে ১৯৯০ সালে কমিউনিজমের অবসানের পর অনেক সেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ২০১৬ সালে, শুধুমাত্র মঙ্গোলিয়ার এক তৃতীয়াংশ শিশুই childcare প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুঙ্কহজুল সান্দুইজাভের গল্প
মঙ্গোলিয়ার একটি ম্যাগাজিন ডিজাইনার হিসেবে কাজ করা মুঙ্কহজুল সান্দুইজাভ দশ বছর আগে তার মেয়ের দুটি শিশু দেখাশোনার জন্য তার কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “মা হওয়া একটি সুন্দর ব্যাপার, তবে আমি চাইনি আমার মেয়ে তার সমস্ত শক্তি একনাগাড়ে ঘরকন্না এবং সন্তান লালন পালন করতে ব্যয় করুক।”
মঙ্গোলিয়ার আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ
মঙ্গোলিয়ার সন্তান ধারণের হার এখনও উচ্চ, তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই হার সরকারকে উদ্বিগ্ন করেছে। শিশুসেবার অভাব, নারীর কর্মসংস্থান হ্রাস এবং বৃদ্ধাদের ওপর চাপের কারণে মঙ্গোলিয়া তার অর্থনৈতিক উন্নয়ন পেতে ব্যর্থ হচ্ছে।
ভবিষ্যতে বৃদ্ধাদের শিশু যত্নের চাপ আরও বাড়বে
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে মঙ্গোলিয়ায় শিশু যত্নের জন্য বৃদ্ধাদের অবদান ১.৭ মিলিয়ন ঘণ্টা পর্যন্ত পৌঁছাবে, যা দেশের কর্মক্ষম পুরুষদের প্রায় ১৫.৪% সমান।
উপসংহার
মঙ্গোলিয়ার বর্তমান সরকার শিশু যত্ন ও নারীদের কর্মক্ষমতার জন্য নীতি গ্রহণের কথা বলেছে, তবে তারা এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সরকারকে শিগগিরই এর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।