সারাক্ষণ ডেস্ক
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MHA) রাজ্যগুলিকে দুটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে, যারা সেই বিদেশিদের শনাক্ত করবে যারা তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ভারতে অবস্থান করছে।
ভারতে পাসপোর্ট বা ভ্রমণ নথি ছাড়া প্রবেশের শাস্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।
অভিবাসন ও বিদেশি সংক্রান্ত বিল, ২০২৫-এর বৈশিষ্ট্য কী?
বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলো যখন বিদেশি নাগরিকদের ভর্তি করবে, তখন তাদের কী দায়িত্ব থাকবে? নকল পাসপোর্ট, ভিসা বা অন্যান্য ভ্রমণ নথি ব্যবহার বা সরবরাহ করার শাস্তি কী হবে?
বর্তমান অবস্থা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২৫ সালের অভিবাসন ও বিদেশি সংক্রান্ত বিল (Immigration and Foreigners Bill, 2025) বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে উপস্থাপন করতে চলেছে, যা ১০ মার্চ শুরু হবে। এই বিলটি বর্তমানে কার্যকর চারটি আইন বাতিল করবে—
১. পাসপোর্ট (ভারতে প্রবেশ) আইন, ১৯২০
২. বিদেশি নিবন্ধন আইন, ১৯৩৯
৩. বিদেশি আইন, ১৯৪৬
৪. অভিবাসন (পরিবহনকারীর দায়িত্ব) আইন, ২০০০
গুরুত্বপূর্ণ বিধানসমূহ
এই বিলটি ছয়টি অধ্যায় এবং ৩৫টি ধারার মাধ্যমে অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন আইনি দিককে একত্রিত করেছে। এতে অভিবাসন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব, পাসপোর্ট ও ভিসার প্রয়োজনীয়তা এবং বিদেশি নাগরিকদের নিবন্ধন সংক্রান্ত বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিদেশি নাগরিকদের নিবন্ধন
বিদেশি নাগরিকদের বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, নার্সিং হোম বা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি সংক্রান্ত দায়বদ্ধতা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে বিদেশিদের বিদেশি আঞ্চলিক নিবন্ধন অফিসে (FRRO) নিবন্ধন করতে হতো। বর্তমানে, হোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোর বিদেশি অতিথিদের পাসপোর্টের তথ্য পুলিশের সঙ্গে শেয়ার করা বাধ্যতামূলক।
বিদেশিদের নিয়ন্ত্রণ
বিলটিতে নির্দিষ্ট স্থানে বিদেশিদের চলাচল সীমিত রাখার বিধান রয়েছে এবং বিদেশিদের নিয়ন্ত্রণের জন্য বেসামরিক প্রশাসনের ক্ষমতা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
ভারতে প্রবেশ ও অবস্থানের নিয়ম
নতুন বিলটি “জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, ভারতের অখণ্ডতা এবং বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য হুমকি” – এসব কারণ উল্লেখ করে কোনো বিদেশির প্রবেশ বা অবস্থান নিষিদ্ধ করতে পারে। অভিবাসন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ও বাধ্যতামূলক হবে।
এর আগে, ১৯৪৮ সালের বিদেশি আদেশ (Foreigners Order, 1948) অনুযায়ী, একজন বিদেশিকে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হতে পারে যদি তিনি:
- জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হন,
- সংক্রামক রোগ বহন করেন বা মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হন,
- অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট/ভিসা নিয়ে প্রবেশ করেন,
- কোনো অপরাধের জন্য ফেরত পাঠানোর (extradition) প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকেন,
- অতীতে ভারতে প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে থাকেন।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
- পাসপোর্ট বা ভ্রমণ নথি ছাড়া ভারতে প্রবেশের শাস্তি: পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ₹৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
- নকল বা জাল পাসপোর্ট, ভিসা, অথবা ভ্রমণ নথি ব্যবহার বা সরবরাহের শাস্তি: ন্যূনতম দুই বছর এবং সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড এবং ₹১ লাখ থেকে ₹১০ লাখ জরিমানা।
- ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান: তিন বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ₹৩ লাখ টাকা জরিমানা।
অবৈধ অভিবাসীদের সনাক্ত ও বহিষ্কার
হ্যাঁ, এই বিল অনুযায়ী রাজ্য সরকার অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত ও বহিষ্কার করতে পারবে।
২০১৪ ও ২০১৯ সালের নির্দেশিকা অনুসারে:
- আদালতের কার্যক্রম শেষ হলে এবং যদি বিদেশির কাছে বৈধ পাসপোর্ট/ভ্রমণ নথি থাকে, তবে রাজ্য সরকার তাকে বহিষ্কার করতে পারে।
- বৈধ নথি না থাকলে, সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস বা হাইকমিশন থেকে তা সংগ্রহ করতে হবে।
আটক কেন্দ্র (Detention Centre)
বিলটিতে “ডিটেনশন সেন্টার” শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। বরং, বিদেশিদের “নির্দিষ্ট তত্ত্বাবধানে রাখা আবাসস্থলে” রাখার বিধান করা হয়েছে।
২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, “ডিটেনশন সেন্টার ম্যানুয়াল” তৈরি করা হয়, যেখানে বলা হয়:
- রাজ্য সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই আটক কেন্দ্র স্থাপন করতে পারবে।
- এটি কারাগারের বাইরে স্থাপন করতে হবে।
- বিদেশির সংখ্যা ও বহিষ্কার প্রক্রিয়ার অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্রের সংখ্যা ও আকার নির্ধারণ করবে রাজ্য সরকার।
বিদেশিদের চলাচল নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজ্য সরকারকে দুটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে যা বিদেশিদের শনাক্ত করবে—
১. যারা ১ জানুয়ারি, ২০১১-এর আগে ভারতে প্রবেশ করেছে এবং এখনও অবস্থান করছে।
২. যারা ১ জানুয়ারি, ২০১১-এর পরে বৈধভাবে প্রবেশ করলেও ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করেছে।
বিদেশিদের চিহ্নিত করার ডিজিটাল ব্যবস্থা
- e-FRRO পোর্টাল: বিদেশিদের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়, যা স্থানীয় পুলিশ ও সরকারি সংস্থাগুলোর জন্য উন্মুক্ত।
- ফরেনার্স আইডেন্টিফিকেশন পোর্টাল (Foreigners Identification Portal): অবৈধ অভিবাসীদের বায়োমেট্রিক ও অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করতে রাজ্য পুলিশ এটি ব্যবহার করতে পারে।
- আধার কার্ডের জন্য নেতিবাচক তালিকা (Negative List of Aadhaar Cards): পুলিশি তদন্তে যদি কোনো বিদেশি অবৈধভাবে আধার কার্ড সংগ্রহ করে থাকে, তবে তাদের তথ্য Unique Identification Authority of India (UIDAI)-এর মাধ্যমে ব্লক করা হবে।
উপসংহার:
নতুন অভিবাসন ও বিদেশি সংক্রান্ত বিল, ২০২৫ বর্তমান চারটি অভিবাসন আইনের পরিবর্তে একটি সমন্বিত আইন প্রণয়ন করতে চলেছে। এতে বিদেশিদের নিবন্ধন, অনুপ্রবেশের নিয়ন্ত্রণ, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং অবৈধ অভিবাসীদের সনাক্তকরণ সম্পর্কিত স্পষ্ট বিধান থাকবে।