সারাক্ষণ ডেস্ক
সাম্প্রতিক কূটনৈতিক পরিবর্তনের অংশ হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া সরাসরি আলোচনা শুরু করেছে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে, যেখানে ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা হয়নি।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ যুদ্ধের অবসান এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করার বিষয়ে সম্মত হন। তবে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের বাইরে রেখে এই আলোচনা চালানোর ফলে তাদের উদ্বেগ বেড়েছে যে, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো তাদের সম্পৃক্ততা ছাড়াই গৃহীত হতে পারে।
ইউক্রেন ও ইউরোপকে বাইরে রাখার বিতর্ক
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কিয়েভকে আলোচনার বাইরে রাখার কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, ইউক্রেনের অংশগ্রহণ ছাড়া করা কোনো চুক্তি দেশটি মেনে নেবে না।
ইউরোপীয় নেতারাও এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন, কারণ তারা মনে করেন, ইউরোপের নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থগুলো এই আলোচনায় সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে না। তবে, মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পৃথক আলোচনাও চলবে।
ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর পরিকল্পনা
ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের ধারণা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার একে সমর্থন জানিয়েছেন, তবে শর্ত দিয়েছেন যে এটি একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তির আওতায় হতে হবে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করেছেন যে, ইউক্রেনে বিদেশি সেনা মোতায়েন সংঘাত আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং এটি ব্যাপক সংঘর্ষের দিকে নিয়ে যেতে পারে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন, যুদ্ধ চলমান থাকা অবস্থায় এই ধরনের আলোচনা “অসময়োপযোগী” বলে মন্তব্য করেছেন।
ট্রাম্পের অবস্থান ও ন্যাটোর ভবিষ্যৎ
ট্রাম্প পরামর্শ দিয়েছেন যে, ইউক্রেনের বর্তমান সরকারকে শান্তিচুক্তির আগে নতুন নির্বাচন আয়োজন করতে হবে, যা কিয়েভের রাজনৈতিক কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
এছাড়া, তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর ফ্রন্টলাইন থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, যা ইউরোপীয় নিরাপত্তার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। তার এই অবস্থান ন্যাটো মিত্রদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং ইউরোপের ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে নতুন আলোচনা উত্থাপন করেছে।
মার্কিন-রাশিয়া আলোচনার ভবিষ্যৎ
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার আলোচনাগুলো ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের সম্পৃক্ত না করেই এই আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।