সারাক্ষণ ডেস্ক
ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিরক্ষা দপ্তরে কর্মরত প্রবেশনারি কর্মীদের তালিকা চেয়েছে, এবং সম্ভবত এই সপ্তাহেই তাদের ছাঁটাইয়ের নির্দেশনা আসতে পারে। পাঁচজন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বরাতে এমনটাই জানা গেছে। গত বছর পেন্টাগনের একটি ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই প্রত্যাশা করা হচ্ছিল যে বহিরাগত কর্তৃপক্ষ থেকে পেন্টাগনে কিছু পরিবর্তন আসবে। এবার ইলন মাস্কের DOGE অফিসিয়ালদের পেন্টাগনে উপস্থিতি সেই আলোচনাকে আরও জোর দিয়েছে।
প্রবেশনারি কর্মীদের তালিকা জমা দিতে নির্দেশ
- সময়সীমা: ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলোকে মঙ্গলবারের মধ্যে তালিকা জমা দিতে হবে।
- বলা হচ্ছে: অনেক প্রবেশনারি কর্মীকেই সপ্তাহের মধ্যে ছাঁটাই করা হতে পারে।
- কোনো ছাড় নেই: এখনো স্পষ্ট নয় যে কিছু প্রবেশনারি কর্মী এই ছাঁটাই পরিকল্পনা থেকে অব্যাহতি পাবেন কি না। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, বেশিরভাগই ছাঁটাইয়ের শিকার হতে পারেন।
ইলন মাস্ক ও DOGE-এর সম্পৃক্ততা
- DOGE সংস্থা: ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই অন্য ফেডারেল সংস্থায় হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের তদারকি করেছে এবং USAID বন্ধের সমন্বয় করেছে।
- স্বার্থের সংঘাতের শঙ্কা: মাস্কের বেশ কিছু কোম্পানি মার্কিন সরকারের কাছ থেকে বহু বিলিয়ন ডলারের চুক্তি পেয়েছে, যার মধ্যে প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গেও উল্লেখযোগ্য চুক্তি রয়েছে।
- চুক্তির উদাহরণ: ২০২১ সালে স্পেসএক্স (SpaceX) ন্যাশনাল রিকনেসেন্স অফিস (NRO)-এর সঙ্গে ১.৮ বিলিয়ন ডলারের গুপ্তচর উপগ্রহ নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ পায় এবং পেন্টাগন Starlink পরিষেবার জন্যও অর্থ দেয়।
পেন্টাগনের অবস্থান
- বৃহত্তম বাজেট: প্রায় ৮৪০ বিলিয়ন ডলারের বাজেট নিয়ে পেন্টাগন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সবচেয়ে বড় সংস্থা।
- বেসামরিক কর্মী: প্রায় ৯৫০,০০০ বেসামরিক কর্মচারী কাজ করেন, যাদের মধ্যে বহু প্রবীণ সামরিক ব্যক্তিত্বও আছেন।
- সামরিক সদস্য: পেন্টাগন ১.৩ মিলিয়ন সক্রিয়-ডিউটি সেনা সদস্য ও ৮০০,০০০ ন্যাশনাল গার্ড এবং রিজার্ভ সদস্যের তত্ত্বাবধান করে। তাদেরকে এই ছাঁটাই প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে।
- প্রবেশনারি সময়কাল: সাধারণত এক বছরের জন্য পর্যবেক্ষণ করা হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত বাড়তে পারে।
প্রতিরক্ষা সচিবের মন্তব্য
- উক্তি: প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ বলেছেন, “হেডকোয়ার্টারে অপচয়, অতিরিক্ততা এবং জনবল রয়েছে যা সমাধান করা দরকার। এতে কোনো সন্দেহ নেই।”
- DOGE আগমন: হেগসেথ জানান, পেন্টাগনে DOGE কর্মকর্তাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত তিনি এবং ইলন মাস্ককে “একজন মহান দেশপ্রেমিক” বলে অভিহিত করেন।
- খরচ-কাটছাঁট: প্রতিরক্ষা বিভাগের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত গবেষণায় কাটছাঁট হতে পারে, তবে সচিবের ভাষায়, এটি সামরিক কার্যক্রমকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে না।
ভুল সিদ্ধান্ত ও বিভ্রান্তি
- অন্যান্য সংস্থায় অভিজ্ঞতা: DOGE কর্মকর্তারা বিভিন্ন দপ্তরে কর্মীদের ভূমিকা সঠিকভাবে না বুঝে ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
- জ্বালানি দপ্তরে ঘটনার উদাহরণ: জ্বালানি বিভাগে (Energy Department) কিছু কর্মী ছাঁটাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হলেও পরে নিউক্লিয়ার প্রতিরক্ষা কর্মসূচির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় সেটি স্থগিত করা হয়।
- পেন্টাগনের সচেতনতা: গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের তালিকা তৈরি করে ছাঁটাই থেকে বাদ রাখার চেষ্টা করা হলেও OPM (পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট অফিস) সেগুলি অনুমোদন করবে কি না, তা অনিশ্চিত।
সামরিক গোয়েন্দা ও সাইবার কমান্ডের উদ্বেগ
- গোপন প্রকল্প: অনেক প্রবেশনারি কর্মী অতি গোপন (classified) প্রকল্পে কাজ করেন। তাদের বরখাস্ত করতে হলে বিশেষ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন, যেমন ব্যাজ ফেরত নেওয়া ও নিরাপত্তা ডিব্রিফিং করা।
- উদ্বিগ্ন কর্মকর্তা: এক সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তার অফিসে পাঁচজন গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশনারি কর্মী আছেন, যাদের কাজ জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। তারা ছাঁটাইয়ের আওতায় পড়লে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
- মনোবল নিয়ে প্রশ্ন: একজন সাইবার কমান্ড কর্মকর্তা বলেছেন, “মনোবল খুব একটা ভালো নেই। কেউই নিশ্চিত নয় যে তারা পুরো ব্যবস্থাটিকে ধ্বংস করবে না।”
শেষ কথা
এই ছাঁটাই প্রক্রিয়া যদি ব্যাপকভাবে বাস্তবায়িত হয়, পেন্টাগনের হাজার হাজার কর্মী চাকরি হারাতে পারেন। ইতিমধ্যেই পেন্টাগনের কর্মকর্তারা প্রতিটি পদ খতিয়ে দেখছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের তালিকা পাঠাচ্ছেন। তবে এ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে, কারণ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত DOGE ও OPM-এর ওপর নির্ভর করছে।