সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- ১৯৮০ সালে রেগানও প্রায় একই নীতির আওতায় রাষ্ট্রপতির আসনের জন্য লড়াই করেছিলেন
- চলচ্চিত্র ও প্রচারণার মাধ্যমে সুখী ও ঐক্যবদ্ধ আমেরিকার ছবি তুলে ধরা হয়, যা মানুষের মনে আশার সঞ্চার করে
- শিল্প ও উৎপাদন খাতে মন্দা, এবং ঋণের বোঝা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে
- শীতযুদ্ধের সময় সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে মার্কিন মর্যাদা ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়
ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে আসনে অধিকার করেছেন এবং তাঁর বিখ্যাত নীতি “মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন” পুনরায় বলছেন। তবে, এই নীতির আসল উদ্ভব ট্রাম্পের নয়—১৯৮০-এর দশকে রোনাল্ড রেগানও একই উদ্দেশ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এখন প্রশ্ন, রেগান কি সত্যিই আমেরিকাকে মহান করে তুলতে পেরেছিলেন?
রেগানের প্রাসঙ্গিকতা ও তুলনা
১৯৮০ সালে রেগানও প্রায় একই নীতির আওতায় রাষ্ট্রপতির আসনের জন্য লড়াই করেছিলেন। তাঁর প্রচারে বলা হতো, “প্রেসিডেন্ট রেগানকে নির্বাচন করা হয়েছে আমেরিকাকে পুনরায় মহান করার লক্ষ্যে।” প্রথম দিকে রেগানকে একজন পুরোনো হলিউড অভিনেতা ও অপ্রচলিত প্রার্থী হিসেবে দেখা হতো, কিন্তু ১৯৮৪ সালে তাঁর আশাবাদী বার্তা ও দৃঢ় নেতৃত্ব তাকে মার্কিন রাজনীতিতে সফল করে তোলে।
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও উদ্দীপনা
রেগানের প্রথম মেয়াদে মার্কিন অর্থনীতি সংকটে ভুগছিল। ১৯৭৯ সালে মুদ্রাস্ফীতি শীর্ষে থাকায় সুদের হার বেড়ে যায় এবং রিসেশন শুরু হয়। তবে, ১৯৮৪ সালের দিকে তেলমূল্যের পতন ও নীতি পরিবর্তনের ফলে অর্থনীতি বছরে ৭.২ শতাংশের বৃদ্ধি পায়। বড় করছাড়, ক্রেডিট কার্ডের সহজলভ্যতা এবং নতুন প্রযুক্তি ও বিনোদনের প্রসারের মাধ্যমে মানুষের মাঝে নতুন উদ্দীপনা ও আশার সঞ্চার হয়। আমেরিকান অলিম্পিকে সোনার পদক জয়ের ঘটনাও এই পরিবর্তনের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
সিনেমা ও সাংস্কৃতিক প্রতিচ্ছবি
চলচ্চিত্র ‘ঘোস্টবাস্টার্স’ ও প্রচারণার বিজ্ঞাপন ‘মর্নিং এগেইন ইন আমেরিকা’ মানুষের সামনে এমন একটি সুখী, উদ্বেগমুক্ত ও ঐক্যবদ্ধ আমেরিকার ছবি উপস্থাপন করেছিল। এই চিত্রায়ন অতীতের সুখের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে এবং অনেকের জন্য আশার বাতিঘর হয়ে ওঠে।
শিল্প ও অর্থনৈতিক সমস্যা
রেগানের আশাবাদী বার্তাটি অনেকের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস ছিল, কিন্তু শিল্প ও উৎপাদন খাতে গভীর মন্দা বিরাজ করেছিল। গাড়ি ও ইস্পাত শিল্পের পতন, স্থানীয় ব্যাংক ও সেভিংস-লোন ব্যবস্থার সমস্যা এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের ঋণের বোঝা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের জনগণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। দেশের ঋণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে অর্থনৈতিক বৈষম্য স্পষ্টভাবে দেখা গেল।
ভৌগোলিক ও সামরিক কৌশল
শীতযুদ্ধের উত্তেজনা বাড়ার পরও, রেগান আন্তর্জাতিক মঞ্চে মার্কিন মর্যাদা বজায় রাখতে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করেন। পশ্চিম ইউরোপে ক্রুজ ও পার্সিং ২ ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন এবং ১৯৮৩ সালে ‘স্টার ওয়ারস’ বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি শক্তিশালী সামরিক প্রতিরক্ষা ও শান্তির প্রতীক প্রদর্শনের চেষ্টা করেছিলেন। কিছু পদক্ষেপের প্রতি হাস্যরস দেখা গেলেও, মূল উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন সামরিক সক্ষমতার প্রতিফলন।
খ্রিস্টান ডানদলের প্রতি আকর্ষণ
রেগান খ্রিস্টান নৈতিকতার বার্তা দিয়ে ডানদলের সমর্থন অর্জনে বিশেষ মনোযোগ দেন। ব্যক্তিগতভাবে ততটা ধর্মনিষ্ঠ না হলেও, তাঁর প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত—যেমন মধ্যপন্থী বিচারপতির নিয়োগ ও ধর্মীয় নেতাদের আমন্ত্রণ—এই নীতির স্পষ্ট উদাহরণ হিসেবে কাজ করেছিল।
অর্থনৈতিক নীতি ও সমাজের বৈষম্য
রেগানের প্রচারণায় একটি উজ্জ্বল অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গল্প ছিল, যা উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের জীবনে উন্নতির সম্ভাবনা দেখাত। কিন্তু বাস্তবে, ধনী জনগণের আয় বাড়লেও সাধারণ মানুষের আয় অপরিবর্তিত ছিল। করছাড় মূলত উচ্চ আয়ের জন্য প্রযোজ্য ছিল, যখন নিম্ন আয়বাজার ওপর করের বোঝা বেড়ে গিয়েছিল। এভাবে বৈষম্য ও শিল্পের পতন দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
বিশ্বাসের স্থগিতাবস্থা ও বাস্তবতার স্ফুরণ
রেগানের বার্তা অনেকের জন্য ছিল এক রকম সিনেমার মতো, যেখানে সবকিছু ঠিক আছে বলে আশ্বাস দেয়া হত। কিন্তু কোল্ড ওয়ারের অবসান ও পরবর্তী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সময় এই আশাবাদী কথা ও বাস্তবতার মধ্যে ফাঁক স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
উপসংহার
রেগানের শাসনামলে যে আমেরিকান স্বপ্নের কথা বলা হয়েছিল, তা অনেক ক্ষেত্রে পূরণ হয়নি। তবে, অতীতের সুখের স্মৃতিকে কাজে লাগিয়ে তাঁর প্রচারের কৌশল—যা আজকের ট্রাম্পের নীতির সাথে অনেক মিল রয়েছে—মার্কিন রাজনীতিতে গভীর ছাপ ফেলেছে। ট্রাম্পও একইভাবে মানুষের আশায় নবজাগরণের চেষ্টা করছেন, যা আমেরিকান নাগরিকদের আশাবাদী ভাবনায় ফেলে , কতটা পরিবর্তন সম্ভব এবং কোন পথে তা অর্জিত হবে।