১০:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্পের ইউক্রেন থেকে সরে আসা  নীতি: এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তর প্রভাবের পথ সৃষ্টি করছে

  • Sarakhon Report
  • ০৭:০০:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 19

সারাক্ষণ রিপোর্ট

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন থেকে সরে আসার সম্ভাবনা দেখালে, ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্কের এই পরিবর্তন শুধু ইউরোপেই নয়, প্রশান্ত মহাসাগরের এশিয়ার দেশগুলিকেও উদ্বেগের মধ্যে নিয়ে এসেছে। হোনলুলু প্রতিরক্ষা ফোরামে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও জেনারেলরা এশিয়ার মিত্রদেশগুলিকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন। আমেরিকা- রাশিয়া বন্ধুত্ব মূলত চীনের সামরিক শক্তিকে কমানোর চেষ্টা। এছাড়া আমেরিকার বর্তমান নীতি ভারতের বৃহত্তর প্রভার বিস্তারের সুযোগ উম্মুক্ত করছে।

ট্রাম্পের ইউরোপমুখী নীতির প্রভাব

ট্রাম্পের ইউরোপের প্রতি ঝোঁক বৃদ্ধির ফলে এশিয়ার দেশগুলি আশাবাদী হলেও কিছু দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কিছু দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধির মতে, আমেরিকা রাশিয়ার সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে চীনের সামরিক শক্তিকে প্রতিহত করার চেষ্টা করতে পারে।

এশিয়ার প্রত্যাশা ও আশঙ্কা

এশিয়ার অনেক সরকার ইউরোপের কষ্টের দিকে ততটা মনোযোগ দিচ্ছে না এবং তারা বিশ্বাস করে যে, ট্রাম্প তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখবেন। তবে, চীনের সামরিক হুমকির মুখোমুখি দেশগুলো উদ্বিগ্ন যে, রাশিয়ার বিজয় চীনের আগ্রাসন আরও বাড়িয়ে তুলবে।

তাইওয়ান ও চীনের উদ্বেগ

তাইওয়ানের বিরুদ্ধে চীনের সম্ভাব্য আক্রমণের আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন যে, ইউক্রেনে রাশিয়ার বিজয় আটকানো আসলে চীনের স্বশাসিত দ্বীপে আক্রমণ প্রতিরোধের একটি অপরিহার্য কৌশল। “আজ ইউক্রেন, কাল তাইওয়ান” ধারণাটি এ সময় আরও ভীতিকর রূপ নিচ্ছে। কিছু সংবাদপত্র সতর্ক করে যে, তাইওয়ান একটি “পরিত্যক্ত দাবা” হয়ে উঠতে পারে।

ভারতের বহুমুখী কূটনীতি

ভারত তার কূটনৈতিক নীতিতে পরিবর্তন এনে, পূর্বে আমেরিকার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে রাশিয়া ও চীনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে ও উন্নয়নের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশ্বব্যবস্থার এই পরিবর্তিত বিন্যাসে, ভারতের জন্য রাশিয়ার তেল আমদানির সুবিধা এবং বৃহত্তর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ উন্মুক্ত হচ্ছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট দেশগুলো ধীরে ধীরে চীনের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ঙ এং হেন বলেছেন, আমেরিকা এখন “নৈতিক বৈধতা প্রদানকারী” থেকে “ভাড়াটে” শক্তিতে পরিণত হচ্ছে।

মার্কিন সামরিক প্রস্তুতি ও উদ্বেগ

ইন্ডো-প্যাসিফিক কমান্ডের প্রধান অ্যাডমিরাল স্যামুয়েল পাপারো সতর্ক করে দেন যে, চীনের তাইওয়ানের চারপাশে পরিচালিত যুদ্ধাভ্যাস আসলে দ্বীপ আক্রমণের পূর্বাভাস। তিনি আরও জানান, আমেরিকার অস্ত্রাগার—বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, সামুদ্রিক ও মহাকাশ প্ল্যাটফর্ম—ধীরে ধীরে বার্ধক্য হয়ে যাচ্ছে। চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার যৌথ উদ্যোগ একটি “ত্রিভুজ সমস্যা” তৈরি করছে, যা অঞ্চলের “স্বাধীন ও উন্মুক্ত” পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলছে।

এশিয়া ও ইউরোপের মিলন বিন্দু

হোনলুলুতে চীন-বিরোধী মতবাদীরা ট্রাম্প প্রশাসনের ইউরোপমুখী নীতির প্রতিক্রিয়ায় বিভক্ত অবস্থায় রয়েছেন। কেউ বলছেন, “এক জায়গায় দুর্বলতা সার্বিক দুর্বলতা সৃষ্টি করে,” যা নির্দেশ করে যে, ইউরোপে আমেরিকার সমর্থন হ্রাস পেলে এশিয়াতেও প্রভাব পড়বে। কেউ মনে করেন, ইউরোপে কম সমর্থন থাকলে এশিয়ায় আমেরিকা আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারে; আবার কেউ আশঙ্কা করেন, সামগ্রিকভাবে আমেরিকার ভূমিকা হ্রাস পাবে।

উপসংহার

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদিও ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতার সম্ভাবনা থাকলেও সামরিক ভারসাম্য ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। ইউরোপকে সমর্থনের কারণে এশিয়ায় অস্ত্রাগারের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। অ্যাডমিরাল পাপারো স্পষ্ট করে বলছেন, কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখন আমেরিকার অগ্রাধিকারের কেন্দ্রবিন্দু ইন্ডো-প্যাসিফিক অঞ্চল। একশ বছর আগে বিশ্বব্যবস্থার কেন্দ্র ছিল পূর্ব-মধ্য ইউরোপ; আজ তা স্পষ্টতই ইন্ডো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছে।

ট্রাম্পের ইউক্রেন থেকে সরে আসা  নীতি: এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তর প্রভাবের পথ সৃষ্টি করছে

০৭:০০:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন থেকে সরে আসার সম্ভাবনা দেখালে, ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্কের এই পরিবর্তন শুধু ইউরোপেই নয়, প্রশান্ত মহাসাগরের এশিয়ার দেশগুলিকেও উদ্বেগের মধ্যে নিয়ে এসেছে। হোনলুলু প্রতিরক্ষা ফোরামে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও জেনারেলরা এশিয়ার মিত্রদেশগুলিকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন। আমেরিকা- রাশিয়া বন্ধুত্ব মূলত চীনের সামরিক শক্তিকে কমানোর চেষ্টা। এছাড়া আমেরিকার বর্তমান নীতি ভারতের বৃহত্তর প্রভার বিস্তারের সুযোগ উম্মুক্ত করছে।

ট্রাম্পের ইউরোপমুখী নীতির প্রভাব

ট্রাম্পের ইউরোপের প্রতি ঝোঁক বৃদ্ধির ফলে এশিয়ার দেশগুলি আশাবাদী হলেও কিছু দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কিছু দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধির মতে, আমেরিকা রাশিয়ার সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে চীনের সামরিক শক্তিকে প্রতিহত করার চেষ্টা করতে পারে।

এশিয়ার প্রত্যাশা ও আশঙ্কা

এশিয়ার অনেক সরকার ইউরোপের কষ্টের দিকে ততটা মনোযোগ দিচ্ছে না এবং তারা বিশ্বাস করে যে, ট্রাম্প তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখবেন। তবে, চীনের সামরিক হুমকির মুখোমুখি দেশগুলো উদ্বিগ্ন যে, রাশিয়ার বিজয় চীনের আগ্রাসন আরও বাড়িয়ে তুলবে।

তাইওয়ান ও চীনের উদ্বেগ

তাইওয়ানের বিরুদ্ধে চীনের সম্ভাব্য আক্রমণের আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন যে, ইউক্রেনে রাশিয়ার বিজয় আটকানো আসলে চীনের স্বশাসিত দ্বীপে আক্রমণ প্রতিরোধের একটি অপরিহার্য কৌশল। “আজ ইউক্রেন, কাল তাইওয়ান” ধারণাটি এ সময় আরও ভীতিকর রূপ নিচ্ছে। কিছু সংবাদপত্র সতর্ক করে যে, তাইওয়ান একটি “পরিত্যক্ত দাবা” হয়ে উঠতে পারে।

ভারতের বহুমুখী কূটনীতি

ভারত তার কূটনৈতিক নীতিতে পরিবর্তন এনে, পূর্বে আমেরিকার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে রাশিয়া ও চীনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে ও উন্নয়নের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশ্বব্যবস্থার এই পরিবর্তিত বিন্যাসে, ভারতের জন্য রাশিয়ার তেল আমদানির সুবিধা এবং বৃহত্তর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ উন্মুক্ত হচ্ছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট দেশগুলো ধীরে ধীরে চীনের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ঙ এং হেন বলেছেন, আমেরিকা এখন “নৈতিক বৈধতা প্রদানকারী” থেকে “ভাড়াটে” শক্তিতে পরিণত হচ্ছে।

মার্কিন সামরিক প্রস্তুতি ও উদ্বেগ

ইন্ডো-প্যাসিফিক কমান্ডের প্রধান অ্যাডমিরাল স্যামুয়েল পাপারো সতর্ক করে দেন যে, চীনের তাইওয়ানের চারপাশে পরিচালিত যুদ্ধাভ্যাস আসলে দ্বীপ আক্রমণের পূর্বাভাস। তিনি আরও জানান, আমেরিকার অস্ত্রাগার—বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, সামুদ্রিক ও মহাকাশ প্ল্যাটফর্ম—ধীরে ধীরে বার্ধক্য হয়ে যাচ্ছে। চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার যৌথ উদ্যোগ একটি “ত্রিভুজ সমস্যা” তৈরি করছে, যা অঞ্চলের “স্বাধীন ও উন্মুক্ত” পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলছে।

এশিয়া ও ইউরোপের মিলন বিন্দু

হোনলুলুতে চীন-বিরোধী মতবাদীরা ট্রাম্প প্রশাসনের ইউরোপমুখী নীতির প্রতিক্রিয়ায় বিভক্ত অবস্থায় রয়েছেন। কেউ বলছেন, “এক জায়গায় দুর্বলতা সার্বিক দুর্বলতা সৃষ্টি করে,” যা নির্দেশ করে যে, ইউরোপে আমেরিকার সমর্থন হ্রাস পেলে এশিয়াতেও প্রভাব পড়বে। কেউ মনে করেন, ইউরোপে কম সমর্থন থাকলে এশিয়ায় আমেরিকা আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারে; আবার কেউ আশঙ্কা করেন, সামগ্রিকভাবে আমেরিকার ভূমিকা হ্রাস পাবে।

উপসংহার

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদিও ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতার সম্ভাবনা থাকলেও সামরিক ভারসাম্য ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। ইউরোপকে সমর্থনের কারণে এশিয়ায় অস্ত্রাগারের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। অ্যাডমিরাল পাপারো স্পষ্ট করে বলছেন, কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখন আমেরিকার অগ্রাধিকারের কেন্দ্রবিন্দু ইন্ডো-প্যাসিফিক অঞ্চল। একশ বছর আগে বিশ্বব্যবস্থার কেন্দ্র ছিল পূর্ব-মধ্য ইউরোপ; আজ তা স্পষ্টতই ইন্ডো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছে।