১০:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

পাকিস্তানের নতুন বিমানবন্দর এক রহস্য

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৪৩:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 20

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • সিপিইসি প্রকল্প বেলুচিস্তানে দশকের পর দশক ধরে চলা বিদ্রোহকে আরও জোরদার করেছে
  • পাকিস্তান সরকার চীনের বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখতে গওয়াদারে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে
  • ২০২৪ সালের অক্টোবরে নির্মাণ শেষ হলেও বিমানবন্দরটি চালুর তারিখ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা নেই
  • গওয়াদারের মানুষদের আশা, সিপিইসি সফল হবে এবং স্থানীয় যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কিন্তু বাস্তবে তা এখনও অধরাই রয়ে গেছে

যাত্রী নেই, বিমান নেই, পাকিস্তানের নতুন ও সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিমানবন্দর যেন এক রহস্যময় স্থাপনা। চীনের অর্থায়নে ২৪০ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত নিউ গওয়াদার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কবে নাগাদ চালু হবে, তা এখনও অনিশ্চিত।

সম্পূর্ণ চীনা অর্থায়ন এবং অজানা ভবিষ্যৎ

গওয়াদার শহরে অবস্থিত এবং ২০২৪ সালের অক্টোবরে নির্মাণ শেষ হলেও বিমানবন্দরটি চালুর তারিখ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা নেই। এটি ঘিরে রয়েছে দরিদ্র ও অশান্ত বেলুচিস্তান প্রদেশ, যেখানে মৌলিক সুযোগ-সুবিধার অভাব প্রকট।

সিপিইসি: রূপান্তরের আশ্বাস কিন্তু বাস্তবে তেমন পরিবর্তন নেই

গত এক দশক ধরে চীন বেলুচিস্তান ও গওয়াদারে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে, যা চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) নামে পরিচিত। এটি চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াং প্রদেশকে আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করে। তবে গওয়াদারে তেমন কোনো উন্নয়নের প্রমাণ মেলে না। শহরটি জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, বিদ্যুৎ আসে ইরান থেকে বা সৌর প্যানেলের মাধ্যমে। পানীয় জলেরও ঘাটতি রয়েছে।

বিমানবন্দর কার জন্য?

গওয়াদারের জনসংখ্যা মাত্র ৯০,০০০, যেখানে বিমানবন্দরের যাত্রী ধারণক্ষমতা ৪ লক্ষ। ইসলামাবাদের একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক নাজাম আহমদের মতে, “এই বিমানবন্দর পাকিস্তান বা গওয়াদারের জন্য নয়; এটি চীনের জন্য, যাতে তাদের নাগরিকরা নিরাপদে গওয়াদার ও বেলুচিস্তানে আসতে পারে।”

বিদ্রোহ ও সামরিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আটকে গওয়াদার

সিপিইসি প্রকল্প বেলুচিস্তানে দশকের পর দশক ধরে চলা বিদ্রোহকে আরও জোরদার করেছে। স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করে যে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের শোষণ করা হচ্ছে, অথচ তারা উন্নয়নের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পাকিস্তান সরকার চীনের বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখতে গওয়াদারে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। শহরজুড়ে চেকপয়েন্ট, কাঁটাতারের বেড়া, সশস্ত্র প্রহরী, ব্যারিকেড এবং ওয়াচটাওয়ার রয়েছে।

স্থানীয় জনগণের অসন্তোষ ও স্মৃতিচারণ

৭৬ বছর বয়সী গওয়াদার একজন অধিবাসী মি. বক্স জানান, “আগে আমাদের কে কোথায় যাচ্ছি, কী করছি, নাম কী— এসব জিজ্ঞাসা করা হতো না। আমরা নির্ভয়ে পাহাড়ে পিকনিকে যেতাম। এখন আমাদের পরিচয় প্রমাণ করতে হয়।”

বক্স আরও জানান, একসময় গওয়াদারে পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয় জল ছিল, কিন্তু এখন খরা ও অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে সেই সবকিছুই ফুরিয়ে গেছে। কর্মসংস্থানও সংকুচিত হয়েছে।

চীনের উপস্থিতি থেকে স্থানীয়দের লাভ নেই

গওয়াদারের বাসিন্দারা চীনের বিনিয়োগ থেকে খুব কমই উপকৃত হয়েছেন। সরকার দাবি করে সিপিইসি প্রকল্পে ২,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু ‘স্থানীয়’ বলতে আসলে বেলুচ জনগণ নাকি দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা পাকিস্তানিদের বোঝানো হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়।

উদ্বোধন পিছিয়ে যাওয়া এবং চাকরির সংকট

নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে বিমানবন্দরের উদ্বোধন পিছিয়ে যায়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করেন। কিন্তু প্রথম ফ্লাইটের সময় মিডিয়া ও সাধারণ জনগণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।

বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির একজন নেতা জানান, “গওয়াদারের একজন বাসিন্দাও বিমানবন্দরে চাকরি পায়নি, এমনকি প্রহরী হিসেবেও নয়।”

ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক নাজাম আহমেদ বলেন, “পাকিস্তান সরকার বেলুচ জনগণকে কিছু দিতে চায় না, আর বেলুচ জনগণও সরকারের কাছ থেকে কিছু নিতে চায় না।”

গওয়াদারের মানুষদের আশা, সিপিইসি সফল হবে এবং স্থানীয় যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কিন্তু বাস্তবে তা এখনও অধরাই রয়ে গেছে।

২০২৫ সালে ফিলিপাইনের ১২টি প্রধান অবকাঠামো প্রকল্প: রিয়েল এস্টেটের রূপান্তর

পাকিস্তানের নতুন বিমানবন্দর এক রহস্য

০৩:৪৩:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • সিপিইসি প্রকল্প বেলুচিস্তানে দশকের পর দশক ধরে চলা বিদ্রোহকে আরও জোরদার করেছে
  • পাকিস্তান সরকার চীনের বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখতে গওয়াদারে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে
  • ২০২৪ সালের অক্টোবরে নির্মাণ শেষ হলেও বিমানবন্দরটি চালুর তারিখ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা নেই
  • গওয়াদারের মানুষদের আশা, সিপিইসি সফল হবে এবং স্থানীয় যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কিন্তু বাস্তবে তা এখনও অধরাই রয়ে গেছে

যাত্রী নেই, বিমান নেই, পাকিস্তানের নতুন ও সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিমানবন্দর যেন এক রহস্যময় স্থাপনা। চীনের অর্থায়নে ২৪০ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত নিউ গওয়াদার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কবে নাগাদ চালু হবে, তা এখনও অনিশ্চিত।

সম্পূর্ণ চীনা অর্থায়ন এবং অজানা ভবিষ্যৎ

গওয়াদার শহরে অবস্থিত এবং ২০২৪ সালের অক্টোবরে নির্মাণ শেষ হলেও বিমানবন্দরটি চালুর তারিখ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা নেই। এটি ঘিরে রয়েছে দরিদ্র ও অশান্ত বেলুচিস্তান প্রদেশ, যেখানে মৌলিক সুযোগ-সুবিধার অভাব প্রকট।

সিপিইসি: রূপান্তরের আশ্বাস কিন্তু বাস্তবে তেমন পরিবর্তন নেই

গত এক দশক ধরে চীন বেলুচিস্তান ও গওয়াদারে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে, যা চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) নামে পরিচিত। এটি চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াং প্রদেশকে আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করে। তবে গওয়াদারে তেমন কোনো উন্নয়নের প্রমাণ মেলে না। শহরটি জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, বিদ্যুৎ আসে ইরান থেকে বা সৌর প্যানেলের মাধ্যমে। পানীয় জলেরও ঘাটতি রয়েছে।

বিমানবন্দর কার জন্য?

গওয়াদারের জনসংখ্যা মাত্র ৯০,০০০, যেখানে বিমানবন্দরের যাত্রী ধারণক্ষমতা ৪ লক্ষ। ইসলামাবাদের একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক নাজাম আহমদের মতে, “এই বিমানবন্দর পাকিস্তান বা গওয়াদারের জন্য নয়; এটি চীনের জন্য, যাতে তাদের নাগরিকরা নিরাপদে গওয়াদার ও বেলুচিস্তানে আসতে পারে।”

বিদ্রোহ ও সামরিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আটকে গওয়াদার

সিপিইসি প্রকল্প বেলুচিস্তানে দশকের পর দশক ধরে চলা বিদ্রোহকে আরও জোরদার করেছে। স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করে যে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের শোষণ করা হচ্ছে, অথচ তারা উন্নয়নের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পাকিস্তান সরকার চীনের বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখতে গওয়াদারে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। শহরজুড়ে চেকপয়েন্ট, কাঁটাতারের বেড়া, সশস্ত্র প্রহরী, ব্যারিকেড এবং ওয়াচটাওয়ার রয়েছে।

স্থানীয় জনগণের অসন্তোষ ও স্মৃতিচারণ

৭৬ বছর বয়সী গওয়াদার একজন অধিবাসী মি. বক্স জানান, “আগে আমাদের কে কোথায় যাচ্ছি, কী করছি, নাম কী— এসব জিজ্ঞাসা করা হতো না। আমরা নির্ভয়ে পাহাড়ে পিকনিকে যেতাম। এখন আমাদের পরিচয় প্রমাণ করতে হয়।”

বক্স আরও জানান, একসময় গওয়াদারে পর্যাপ্ত খাবার ও পানীয় জল ছিল, কিন্তু এখন খরা ও অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে সেই সবকিছুই ফুরিয়ে গেছে। কর্মসংস্থানও সংকুচিত হয়েছে।

চীনের উপস্থিতি থেকে স্থানীয়দের লাভ নেই

গওয়াদারের বাসিন্দারা চীনের বিনিয়োগ থেকে খুব কমই উপকৃত হয়েছেন। সরকার দাবি করে সিপিইসি প্রকল্পে ২,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু ‘স্থানীয়’ বলতে আসলে বেলুচ জনগণ নাকি দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা পাকিস্তানিদের বোঝানো হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়।

উদ্বোধন পিছিয়ে যাওয়া এবং চাকরির সংকট

নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে বিমানবন্দরের উদ্বোধন পিছিয়ে যায়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করেন। কিন্তু প্রথম ফ্লাইটের সময় মিডিয়া ও সাধারণ জনগণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।

বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির একজন নেতা জানান, “গওয়াদারের একজন বাসিন্দাও বিমানবন্দরে চাকরি পায়নি, এমনকি প্রহরী হিসেবেও নয়।”

ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক নাজাম আহমেদ বলেন, “পাকিস্তান সরকার বেলুচ জনগণকে কিছু দিতে চায় না, আর বেলুচ জনগণও সরকারের কাছ থেকে কিছু নিতে চায় না।”

গওয়াদারের মানুষদের আশা, সিপিইসি সফল হবে এবং স্থানীয় যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কিন্তু বাস্তবে তা এখনও অধরাই রয়ে গেছে।