সারাক্ষণ রিপোর্ট
গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গণপিটুনিতে ১২১ জন নিহত হয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে গত বছর, যেখানে ২০২৪ সালে নিহতের সংখ্যা ছিল ১৪৬ জন, যা ২০২৩ এর ৫১ জনের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি।
উত্তরা ও টঙ্গীতে সংঘটিত ঘটনা:
গতকাল রাত দুইটি গণপিটুনি ঘটনার খবর এসেছে।
- উত্তরা:
রাত ১০টার দিকে উত্তরার হাউসবিল্ডিং এলাকার বিএনএস সেন্টারের সামনে, সন্দেহভাজন ‘ছিনতাইকারী’ ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকেরা জড়ো হয়ে দুই ব্যক্তিকে পিটে আহত করেছে।- আহত ব্যক্তিদের নাম – মো. নাজিম (৪০) ও মো. বকুল (৩০)
- তাদের পায়ের উপর দড়ি বাঁধা হয়েছে এবং পদচারী-সেতুর লোহার খুঁটির সাথে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
- ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
- টঙ্গী:
রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের স্টেশন রোড এলাকায়, ছিনতাই সন্দেহে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।- পুলিশ প্রাথমিকভাবে মৃত ব্যক্তির নাম ও ঠিকানা জানাতে পারেনি।

ভিডিও ফুটেজ:
ঘটনাস্হল থেকে ধারণকৃত ভিডিওগুলোতে স্পষ্ট দেখা যায়, কিভাবে কিছু ব্যক্তি সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে জবরদস্ত করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
পরিসংখ্যান ও পরিস্থিতি
মোট নিহতের সংখ্যা ও পরিস্থিতির বিশ্লেষণ:
- মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত গণপিটুনিতে ১২১ জন নিহত হয়েছেন।
- আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে গত বছর, যেখানে ২০২৪ সালে নিহতের সংখ্যা ছিল ১৪৬ জন, যা ২০২৩ এর ৫১ জনের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি।
আক্রমণ ও অপরাধের বৃদ্ধি:
- ছয় মাসে ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা ১,১৪৫টি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।
- জানুয়ারি ও ডিসেম্বর মাসে ডাকাতি ও দস্যুতার মামলার সংখ্যা যথাক্রমে ৬৯ শতাংশ ও ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আইনের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া

আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতিফলন:
- মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীরা বলেন, গণপিটুনির ঘটনা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও প্রশাসনিক উদাসীনতার প্রমাণ।
- দক্ষিণ এশিয়ার মানবাধিকার সংগঠনের (সাহার) বাংলাদেশ ব্যুরো সদস্য সাঈদ আহমেদ জানান, আইন প্রয়োগ ও বিচারব্যবস্থায় আস্থাহীনতার ফলে গণপিটুনি বাড়ছে।
- সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবি বলেন, প্রশাসনের দুরবস্থা, পুলিশ প্যানিকড অবস্থায় থাকায় ও অগণতান্ত্রিক পরিবেশের কারণে গণপিটুনি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।
কারণ ও পরামর্শ:
- অনেকের মতে, গণপিটুনি পরিকল্পিত উসকানি, পুলিশ নিষ্ক্রিয়তা ও সরকারের উদাসীনতার কারণে বেড়ে যাচ্ছে।
- আইন অনুযায়ী, গণপিটুনি ঘটলে হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয় এবং জড়িত ব্যক্তিদেরকে হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
উপসংহার
গণপিটুনির ঘটনা এবং তার সাথে জড়িত অপরাধের হারের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যকর আইন প্রয়োগ, সক্রিয় পুলিশি ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলার প্রয়োজন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বিগ্ন যে, বর্তমান অবস্থা পরিবর্তনে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
Sarakhon Report 



















