সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- বাংলাদেশ সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার
- সব পাবলিক প্লেসে বিনামূল্যে নিরাপদ পানি সরবরাহের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হবে
- পানির উৎস শুকিয়ে যাওয়া, অনিরাপদ বা দূষিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে
- এই রায় বাস্তবায়িত হলে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে এবং পানিবাহিত রোগ থেকে মানুষ রক্ষা পাবে
হাইকোর্ট দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নিরাপদ খাবার এবং ব্যবহারযোগ্য পানিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার এই রায় প্রদান করেন।
পাবলিক প্লেসে বিনামূল্যে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা
হাইকোর্ট রেল স্টেশন, হাসপাতাল এবং অন্যান্য সব পাবলিক প্লেসে বিনামূল্যে নিরাপদ পানযোগ্য পানির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছে।
রায়ের পেছনের প্রক্রিয়া ও আইনি উপস্থাপনা
- আদালতের বন্ধু হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন:
- সিনিয়র অ্যাডভোকেট মঞ্জিল মোর্শেদ
- ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমাযুন কবির পল্লব
- মানবাধিকার সংগঠন বেলার পক্ষে মিনহাজুল ইসলাম
- রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন:
- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মঞ্জুর আলম
- সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. ওবায়দুর রহমান (তারেক), সোয়েব মাহমুদ ও আবুল হাসান
ঐতিহাসিক রায়ের তাৎপর্য
ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমাযুন কবির পল্লব এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, রায়টি বাস্তবায়িত হলে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে এবং পানিবাহিত রোগ থেকে মানুষ রক্ষা পাবে।
সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ: মৌলিক অধিকার হিসেবে পানি
হাইকোর্ট স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে, বাংলাদেশ সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নিরাপদ এবং বিশুদ্ধ পানযোগ্য পানি পাওয়া একটি মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্রের দায়িত্ব এই অধিকার নিশ্চিত করা।
রুল জারি ও রায়ের প্রক্রিয়া
- ২০২০ সালে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে জানতে চায়:
- রাষ্ট্রের দায়িত্ব কি প্রতিটি নাগরিককে নিরাপদ পানযোগ্য পানি সরবরাহ করা?
- কেন এই অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হবে না?
- চূড়ান্ত শুনানি ও রায়:
- গত বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট এই রায় ঘোষণা করে।
নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা
গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পানি সরবরাহ
- আগামী ১ বছরের মধ্যে:
- আদালত, ধর্মীয় উপাসনালয়, হাসপাতাল, রেল স্টেশন, হাট-বাজার, এয়ারপোর্টসহ সব পাবলিক প্লেসে নিরাপদ পানযোগ্য পানি নিশ্চিত করতে হবে।
- আগামী ১০ বছরের মধ্যে:
- প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপদ এবং পানযোগ্য পানি সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
- ২০২৬ সালের মধ্যে:
- সব পাবলিক প্লেসে বিনামূল্যে নিরাপদ পানি সরবরাহের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হবে।
চলমান আদেশ ও পরিবেশ সংরক্ষণ
- চলমান আদেশ:
- এই রায় একটি চলমান আদেশ হিসেবে থাকবে এবং হাইকোর্টের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রায়ের নির্দেশনাগুলির অন্তর্ভুক্ত হবে।
- পানির উৎস সংরক্ষণ:
- পানির উৎস যাতে শুকিয়ে না যায়, অনিরাপদ বা দূষিত না হয়, সেজন্য সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পানির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
- পিপিআরসি এবং ওয়াটার এইডের গবেষণা:
- ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশের কেবল ৫৯% মানুষ নিরাপদ পানি পান।
- প্রত্যাশিত প্রভাব:
- রায় বাস্তবায়িত হলে পানিবাহিত রোগ কমে আসবে এবং জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে।
এই রায় দেশের পানির অধিকার সুরক্ষায় একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং এটি জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।