সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- বাংলাদেশে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে
- তিস্তা পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা সরাসরি উপকৃত হবেন
- বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে উচ্চশিক্ষা অর্জন করছে, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে
- বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য চীনের সঙ্গে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে আগ্রহী
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) যদি ক্ষমতায় আসে, তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প ( তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করবে বলে ঘোষণা করেছেন বিএনপি স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। সম্প্রতি তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-এর শানসি প্রাদেশিক কমিটির ডেপুটি সেক্রেটারি শিং শানপিং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং এ বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সাক্ষাৎকারের প্রেক্ষাপট
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বাংলাদেশ থেকে আটটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ২১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে চীন সফর করছে। ড. আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে দলটি চীনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
তিস্তা পানি ব্যবস্থাপনা চুক্তির প্রস্তাব
- ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য স্পষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন ড. মঈন খান।
- তিনি জানান, বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করতে দলটি আগ্রহী।
- তিস্তা নদী তীরবর্তী বিপুল সংখ্যক মানুষের কল্যাণে এই চুক্তিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বর্তমান সরকারের নিষ্ক্রিয়তা
- ড. মঈন খান অভিযোগ করেন যে বর্তমান সরকার অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন হিসেবে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে তেমন উদ্যোগ নেয়নি।
- তিনি আশা করেন, পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে স্থিতিশীল সরকার গঠিত হলে তিস্তা পানি ব্যবস্থাপনায় চীনের সহায়তা গ্রহণ করা সহজ হবে।
কৃষি ও সেচব্যবস্থার উন্নয়নে চীনের ভূমিকা
- ড. মঈন খানের মতামত অনুযায়ী, তিস্তা পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা সরাসরি উপকৃত হবেন।
- চীনের উন্নত প্রযুক্তি, প্রকৌশল জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক দক্ষতা বাংলাদেশের কৃষি খাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
- উদাহরণ হিসেবে তিনি হুয়াং হে নদীর কথা তুলে ধরেন, যেটি একসময় “চীনের দুঃখ” নামে পরিচিত ছিল, তবে আধুনিক সেচ ও উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেটি এখন একটি সফল মডেলে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ভিত্তি
- ড. মঈন খান মনে করিয়ে দেন যে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়ে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
- তিনি বলেন, দুই দেশের বন্ধুত্বের বুনিয়াদ হাজার বছরের পুরোনো।
- বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে উচ্চশিক্ষা অর্জন করছে, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে।
- ড. মঈন খান আরও শিক্ষার্থী বিনিময় ও বৃত্তির সুযোগ বৃদ্ধিতে চীনের প্রতি আহ্বান জানান।
ব্যবসা-বাণিজ্য ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা
- বাংলাদেশে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ড. মঈন খান মত প্রকাশ করেন।
- চীনা নেতা শিং শানপিং জোর দিয়ে বলেন যে বাংলাদেশ চীনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ অংশীদার।
- কৃষি, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রতিনিধিদলের সদস্যরা
- সফরকারী দলের মধ্যে ছিলেন:
- বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল
- জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম
- যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নায়ন
- স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান
- ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন
- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক
- জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা
- গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান মো. শহিদুল ইসলাম রুবেল
- ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান এজেডএম ফারিদুজ্জামান
- ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ
- গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাশেদ খান
- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমী
- এছাড়া দলে ছিলেন:
- ড. মঈন খানের স্ত্রী অ্যাডভোকেট রোকসানা খন্দকার
- বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এর গবেষক মো. নাহিয়ান সাজ্জাদ খান
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন
শিয়ান জিয়াওতং ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন
- সফরের অংশ হিসেবে দলটি শানসি প্রদেশের শিয়ান জিয়াওতং ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করে।
- সেখানে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
- ড. মঈন খান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার প্রশংসা করেন।
- ভবিষ্যতে শিক্ষা ও গবেষণায় বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
উপসংহার
ড. আবদুল মঈন খানের বক্তব্য অনুযায়ী, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের কৃষিখাত এবং তিস্তা নদীর আধুনিক সেচব্যবস্থা গড়ে তুলতে চীনের সহায়তা গ্রহণে উৎসাহী। অন্যদিকে চীনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নয়নের সহযোগিতা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুত্ব, শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও সার্বিক পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও দৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।