শশাঙ্ক মণ্ডল
অসহায় নারীর অসহ্য যন্ত্রণা এভাবে প্রকাশিত হয়-
কাউকে ডেকে বলছ মাঝি
আমার নায়ে আয়
আমায় দেখে বলছো তোমার
নায়ে তো জায়গা নাইরে। ও তুমি রঙিলা নায়ের মাঝি বৈঠা চালাও রে ও মাঝি কার বা পানে চাও।
বার বার প্রত্যাখ্যাত হয়ে রূপভান জোর করে রহিমকে তাজোলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আসে। ঘরে গিয়ে রহিম রূপভানের ওপর নানা রকম অত্যাচার করে। রূপভান মনের দুঃখ এভাবে প্রকাশ করে।
আগে যদি জানতাম ছোকড়ারে ও তোরে দিতাম বাঘের মুখেরে। ও মোর ছোকড়া বন্ধুরে।।
রহিমের মনে ভাবান্তর জাগে, সে বলে ওঠে, দিদি তুমি এই গান গাইছ কেন? রূপভান গল্পের আকারে তার অতীত জীবনের কথা বলে চলে। রহিম কথাটা বুঝতে পারে না কিন্তু তার অবাক লাগে। রহিম প্রশ্ন করে তোমার সিঁথিতে সিন্দুর, তোমার হাতে কাঁকন, তোমার স্বামী কে? রূপভান তার হাতের নখ খুঁটতে খুঁটতে বলে- ‘দাদা আমার স্বামীর নাম বানান করতে যে কয়টি অক্ষর লাগে তোমার নামের বানানেও সেই কয়টি অক্ষর এভাবে ধাঁধার ছলে সে বোঝাতে চায় কিন্তু রহিম কথাটা বোঝে না।
সে পুনরায় বলে, ‘দিদি, আমার দুলা ভাই যদি এত বড়লোক তবে সে তোমাকে এত গরিবের বেশে রেখেছে কেন? তুমি অনুমতি দাও, দুলাভাইকে কান ধরে টেনে নিয়ে আসি। নাটকীয়তা সৃষ্টিতে অশিক্ষিত পল্লীকবিদের দক্ষতা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
কথার উত্তরে রূপভান উত্তর দেয়- ভাই তার সময় এখনও হয়নি।
কিছু দিন পরে শাহেদ বাদশা বনে শিকারে এসে রূপভানকে দেখে মুগ্ধ হয় এবং প্রস্তাব দেয় হারেমে আসতে। রূপভানের সতীত্বের পরীক্ষা শুরু হয়। বাদশাহী প্রাসাদের তুলনায় তার বনের কুটির অনেক সুখের। বাদশা জব্দ করার জন্য রহিমকে কারাগারে পাঠায়- এই সংবাদে উন্মাদিনী, হয়ে সেখানে উপস্থিত হয়; শাহেদ বাদশা জোর করে রূপভানকে ধরতে এগিয়ে এল। রূপভান খোদাকে স্মরণ করতেই তাজোল এসে পিতাকে বাধা দেয়। তাজোলের সাথে তার পিতার যুদ্ধ হল এবং এই যুদ্ধে তার পিতা মারা গেল।