১১:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের সংকট

  • Sarakhon Report
  • ০৪:২৩:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫
  • 15

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • মোট ব্যাংক ঋণের ২০.২% এখন খেলাপি ঋণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে
  • প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতাদের ঋণ যা আগে নিয়মিত দেখানো হতো, এখন খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হওয়া
  • গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতি এবং তৈরি পোশাক শিল্পের অস্থিরতা ঋণ পরিশোধে বাধা সৃষ্টি করেছে
  • বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের সংজ্ঞাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছে

২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ (NPL) দ্রুত বেড়ে ডিসেম্বরের মধ্যে ৩.৪৫ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। জুন মাসে এই পরিমাণ ছিল ২.১১ লাখ কোটি টাকা, যা মোট ব্যাংক ঋণের ১২.৫৬%।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মঞ্জুর জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গোপন খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ পেতে শুরু করে। বর্তমানে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ২০.২% খেলাপি ঋণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তবে এই হার আরও বেশি হতে পারে।

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ

১৫ বছরের শাসনামলে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র গোপন করেছিল। তবে নতুন প্রশাসন স্বচ্ছতা আনায় প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রকাশ পাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই ঋণ বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলো হলো:

  • ঋণ শ্রেণিকরণ নীতির পরিবর্তন
  • দীর্ঘদিনের স্বচ্ছতার অভাব
  • নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতা

ঋণ শ্রেণিকরণ নীতির পরিবর্তন

আগে ২৭০ দিন পর ঋণ খেলাপি হিসেবে গণ্য হতো, যা বর্তমানে ১৮০ দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে। এপ্রিল ২০২৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত:

  • রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ৪২% খেলাপি ঋণ
  • বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ১৫% খেলাপি ঋণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নীতির কারণে আগামী মাসগুলোতে খেলাপি ঋণের হার আরও বাড়তে পারে।

ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস ও ব্যাংক খাতের সংকট

২০২৫ সালের জানুয়ারি-জুনের আর্থিক নীতিমালায় বলা হয়েছে, জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ৩০% বা তার বেশি হতে পারে।

খেলাপি ঋণের বৃদ্ধির অন্যান্য কারণ:

  • অনিয়ন্ত্রিত ঋণ বিতরণ
  • অর্থ পাচার ও অবৈধ মূলধন স্থানান্তর
  • নতুন ঋণ বিতরণ ও নবায়ন কমে যাওয়া
  • মেয়াদি ঋণের পরিশোধের সময়সীমা কমে যাওয়া

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রত্যাবর্তন

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের সংজ্ঞাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছে। ২০২০ সালের মহামারির সময় এই কঠোর নীতিমালা শিথিল করা হয়েছিল, যা এখন আবার কার্যকর করা হয়েছে। ফলে প্রকৃত ঋণ পরিস্থিতি প্রকাশ পাচ্ছে।

এছাড়া, প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতাদের কিছু ঋণ, যা আগে নিয়মিত দেখানো হতো, এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

প্রভাবিত খাত ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি

বিভিন্ন খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু সাম্প্রতিক ঘটনাও ভূমিকা রেখেছে:

  • শিক্ষার্থী বিক্ষোভ ও ইন্টারনেট বিভ্রাট (জুলাই-আগস্ট ২০২৪): অনেক ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি।
  • ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাত: ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা বেড়েছে।
  • গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতি: কলকারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
  • তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা: ঋণ পরিশোধের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
  • টাকার অবমূল্যায়ন: আমদানি নির্ভর ব্যবসাগুলোর জন্য ঋণ পরিশোধ কঠিন হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের সংকট

০৪:২৩:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • মোট ব্যাংক ঋণের ২০.২% এখন খেলাপি ঋণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে
  • প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতাদের ঋণ যা আগে নিয়মিত দেখানো হতো, এখন খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হওয়া
  • গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতি এবং তৈরি পোশাক শিল্পের অস্থিরতা ঋণ পরিশোধে বাধা সৃষ্টি করেছে
  • বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের সংজ্ঞাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছে

২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ (NPL) দ্রুত বেড়ে ডিসেম্বরের মধ্যে ৩.৪৫ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। জুন মাসে এই পরিমাণ ছিল ২.১১ লাখ কোটি টাকা, যা মোট ব্যাংক ঋণের ১২.৫৬%।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মঞ্জুর জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গোপন খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ পেতে শুরু করে। বর্তমানে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ২০.২% খেলাপি ঋণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তবে এই হার আরও বেশি হতে পারে।

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ

১৫ বছরের শাসনামলে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র গোপন করেছিল। তবে নতুন প্রশাসন স্বচ্ছতা আনায় প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রকাশ পাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই ঋণ বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলো হলো:

  • ঋণ শ্রেণিকরণ নীতির পরিবর্তন
  • দীর্ঘদিনের স্বচ্ছতার অভাব
  • নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতা

ঋণ শ্রেণিকরণ নীতির পরিবর্তন

আগে ২৭০ দিন পর ঋণ খেলাপি হিসেবে গণ্য হতো, যা বর্তমানে ১৮০ দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে। এপ্রিল ২০২৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত:

  • রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ৪২% খেলাপি ঋণ
  • বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ১৫% খেলাপি ঋণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নীতির কারণে আগামী মাসগুলোতে খেলাপি ঋণের হার আরও বাড়তে পারে।

ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস ও ব্যাংক খাতের সংকট

২০২৫ সালের জানুয়ারি-জুনের আর্থিক নীতিমালায় বলা হয়েছে, জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ৩০% বা তার বেশি হতে পারে।

খেলাপি ঋণের বৃদ্ধির অন্যান্য কারণ:

  • অনিয়ন্ত্রিত ঋণ বিতরণ
  • অর্থ পাচার ও অবৈধ মূলধন স্থানান্তর
  • নতুন ঋণ বিতরণ ও নবায়ন কমে যাওয়া
  • মেয়াদি ঋণের পরিশোধের সময়সীমা কমে যাওয়া

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রত্যাবর্তন

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের সংজ্ঞাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছে। ২০২০ সালের মহামারির সময় এই কঠোর নীতিমালা শিথিল করা হয়েছিল, যা এখন আবার কার্যকর করা হয়েছে। ফলে প্রকৃত ঋণ পরিস্থিতি প্রকাশ পাচ্ছে।

এছাড়া, প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতাদের কিছু ঋণ, যা আগে নিয়মিত দেখানো হতো, এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

প্রভাবিত খাত ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি

বিভিন্ন খাতে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু সাম্প্রতিক ঘটনাও ভূমিকা রেখেছে:

  • শিক্ষার্থী বিক্ষোভ ও ইন্টারনেট বিভ্রাট (জুলাই-আগস্ট ২০২৪): অনেক ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি।
  • ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাত: ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা বেড়েছে।
  • গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতি: কলকারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
  • তৈরি পোশাক শিল্পে অস্থিরতা: ঋণ পরিশোধের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
  • টাকার অবমূল্যায়ন: আমদানি নির্ভর ব্যবসাগুলোর জন্য ঋণ পরিশোধ কঠিন হয়ে উঠেছে।