সারাক্ষণ রিপোর্ট
রমজানের আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার বাজারে কিছুটা ভিন্নতা দেখা গেছে। গত বছরের তুলনায় বেশ কিছু পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি, আবার কিছু পণ্যের দাম সামান্য কমেছে। তবে এই মূল্যহ্রাসের সুবিধা ইফতারির বাজারে তেমনভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। বেশিরভাগ ইফতার সামগ্রী এখনও গত বছরের দামে বিক্রি হচ্ছে। কিছু কিছু আইটেমের দাম আগের চেয়ে কিছুটা বেশি।
ইফতার পণ্যের দাম অপরিবর্তিত, ক্রেতাদের অস্বস্তি
- অনেক ক্রেতা অভিযোগ করছেন, যে সব কাঁচা পণ্য (যেমন শশা, লেবু, বেগুন) রমজান সামনে রেখে হঠাৎ দাম বেড়ে গেছে।
- ফলের বাজারেও দাম কিছুটা বেশি। আপেল, মাল্টা, আঙ্গুর ও কমলার ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
- ক্রেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, রমজান উপলক্ষে কোনো কোনো অসাধু চক্র বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে।
- বিক্রেতাদের মতে, রমজানে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জোগান কম থাকলে দাম স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে।
স্টার কাবাব অ্যান্ড বেকারির ইফতার সামগ্রী
স্টার কাবাব অ্যান্ড বেকারির বিক্রেতা মো. সোহাগ জানিয়েছেন, গত বছরের মতোই সবকিছু বিক্রি করা হচ্ছে। কোনো আইটেমের দাম বাড়ানো হয়নি। প্রথম দিনে বিক্রি অপেক্ষাকৃত কম হলেও সামনে বাড়বে বলে আশা তাদের।
বিক্রিত ইফতার সামগ্রীর দাম (প্রতি পিস/কেজি):
- পনির সমুচা: ২৫ টাকা
- কিমা সমুচা: ২০ টাকা
- চিকেন সাসলিক: ৬০ টাকা
- চিকেন কাটলেট: ৬০ টাকা
- চিকেন নাগেট: ১০০ টাকা
- চিকেন কারাজি: ১০০ টাকা
- চিকেন উইংস: ৩০ টাকা
- চিকেন ললিপপ: ৬০ টাকা
- চিকেন অনথর: ২৫ টাকা
- চিকেন ক্রামচিজ বল: ৩০ টাকা
- চিকেন তাওয়া ফ্রাই: ৮০ টাকা
- জালি কাবাব: ২৫ টাকা
- চিকেন স্প্রিং রোল: ৩৫ টাকা
- ড্রাম স্টিক: ২৫ টাকা
- চিকেন ফ্রাই: ৮০ টাকা
- চিকেন ক্রাম ফ্রাই: ১৫০ টাকা
- ভেজিটেবল রোল: ২৫ টাকা
- বাটার পরোটা: ৬৫ টাকা
- টানা পরোটা: ৩৫ টাকা
- কিমা পরোটা: ৬৫ টাকা
- চিকেন টিক্কা (প্রতি পিস): ১২০ টাকা
- বিফ শিক কাবাব: ১৩০ টাকা
- চিকেন বটি কাবাব: ১২৫ টাকা
- বিফ আদানা কাবাব: ১৪০ টাকা
- বিফ বটি কাবাব: ১৬০ টাকা
- চিকেন কাশমেরী কাবাব: ১২০ টাকা
- মাটন বটি কাবাব: ১৫৫ টাকা
অন্য পণ্যের দাম
- জিলাপি: ২৪০ টাকা কেজি
- বুরিন্দা: ২২০ টাকা কেজি
- ছোলা: ১৮০ টাকা কেজি
- বড় আকারের চপ (প্রতি পিস): ২০ টাকা
- আঙ্গুর: ৩৮০ টাকা কেজি
- আপেল (আকার ভেদে): ৩২০-৩৮০ টাকা কেজি
- তরমুজ (প্রতি কেজি): ৪০-৬০ টাকা
- মেশিনে ভাজা খোলা মুড়ি: ১০০ টাকা কেজি (আগে ছিল ৮০ টাকা)
- হাতে ভাজা মুড়ি: ১৫০ টাকা কেজি (এক মাস আগে ছিল ১৩০ টাকা)
- প্যাকেট মুড়ি (বিভিন্ন কোম্পানি): ১৫০-১৬০ টাকা কেজি (৫-১০ টাকা বেড়েছে)
শরবত ও জুসের উপকরণ
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শরবত তৈরির উপকরণ (যেমন ট্যাং, রুহ আফজা, ফস্টার ক্লার্ক, গ্লুকোজ, ফ্রুট স্যালাইন, ইসবগুল ইত্যাদি) বাজারে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এগুলোর দামও কিছুটা বেশি।
- ট্যাং ও নিউট্রি-সি (ওজন ভেদে): ৩০০ থেকে ১,৬০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
- রুহ আফজা (হামদর্দ ফুড প্রোডাক্ট): ৩০০ মিলি বোতল ৩০০ টাকা এবং ৭৫০ মিলি বোতল ৫৫০ টাকা।
খেজুরের বাজারে স্বস্তি
রমজান সামনে রেখে খেজুরের আমদানি দ্বিগুণ হওয়ায় খেজুরের দাম কিছুটা কমেছে। ঢাকায় সর্বনিম্ন মানের খেজুর ২৫০ টাকা কেজি থেকে শুরু করে উন্নতমানের খেজুর ১,৬০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতাদের পর্যবেক্ষণ
পশ্চিম তেজতুরী বাজারের ইফতার বিক্রেতা আরিফ রহমান জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বাজারের পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয়। দাম বাড়ার প্রবণতা খুব একটা দেখা যায়নি বলে তিনি মনে করেন। প্রথম দিন চাহিদা কম থাকলেও পরবর্তী দিনগুলোতে চাহিদা বাড়লে উৎপাদনও বাড়ানো হবে।
ফলের দাম বৃদ্ধি
রমজানে ইফতারের অন্যতম প্রধান উপাদান ফল। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে দাম বাড়িয়ে ফেলেছেন বলে ক্রেতারা অভিযোগ করছেন। বিশেষ করে মাল্টা, কমলা ও আপেলের দাম কেজিতে ২০-৪০ টাকা বেড়েছে।
- মাল্টা: ৩০০-৩২০ টাকা/কেজি
- কমলা: ২৭০-২৮০ টাকা/কেজি
- চায়না (মোটা) কমলা: ৩০০-৩২০ টাকা/কেজি
- ফুজি আপেল: ৩১০-৩২০ টাকা/কেজি
- গ্রিন ও গালা আপেল: ৪২০-৪৫০ টাকা/কেজি
ক্রেতাদের বক্তব্য, রমজান এলেই কোনো কোনো ব্যবসায়ী দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, বিদেশি ফলের ওপর শুল্ককর বৃদ্ধি ও আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে দাম বেশি রাখা হচ্ছে।
ক্রেতাদের মতামত
কাওরান বাজারে ইফতার কিনতে আসা একজন ক্রেতা মহিউদ্দিন জানান, গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে সামগ্রিকভাবে দাম কাছাকাছি। তবে আকার বা মান ভেদে কিছু পণ্যের মূল্য ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।
সংক্ষেপে
- রমজানের আগে কিছু পণ্যের দাম নামলেও ইফতার সামগ্রীর বাজারে সেভাবে প্রভাব পড়েনি।
- ফল ও কিছু কাঁচা পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে।
- খেজুরের বাজারে দাম তুলনামূলক কম থাকায় ক্রেতারা স্বস্তি পাচ্ছেন।
- ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা বাড়লে দাম সামান্য বাড়াই স্বাভাবিক।
- ক্রেতারা বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রশাসনের নজরদারির দাবি জানিয়েছেন।