সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- সুদ পরিশোধ ও ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে এই ব্যয় বেড়েছে
- এই অবস্থায় সরকারের আর্থিক ভারসাম্য রক্ষা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ
- সরকারের সামগ্রিক বাজেট ব্যয় আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে
পরিপ্রেক্ষিত
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সরকারের সামগ্রিক বাজেট ব্যয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে মূলত সুদ পরিশোধ ও ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া দায়ী। যদিও উন্নয়ন খাতে ব্যয় কমেছে, তবুও বর্ধিত পরিচালন ব্যয় বাজেটের উপর চাপ বাড়াচ্ছে।
বাজেট ব্যয়ের সার্বিক চিত্র
- সরকার বার্ষিক ৭,৮৮,৪২২ কোটি টাকার বাজেট থেকে জুলাই-নভেম্বর সময়কালে মোট ১,৯৪,৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
- পরিচালন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১,৭০,৪৯১ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি।
- উন্নয়ন খাতে (এডিপি) ব্যয় হয়েছে ২৪,৩০২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ কম।
সুদের পরিশোধের চাপে ব্যয় বৃদ্ধি
- দেশীয় ও বৈদেশিক ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সুদ পরিশোধ বড় দায় হয়ে উঠেছে।
- প্রথম পাঁচ মাসে সুদ পরিশোধের পরিমাণ ৭৬ শতাংশ বেড়ে ৭১,২১৩ কোটি টাকা হয়েছে।
- এর মধ্যে ৮৯ শতাংশ, অর্থাৎ ৬৩,৬২৪ কোটি টাকা, দেশীয় ঋণের সুদ পরিশোধে খরচ হয়েছে; বাকি অংশ বৈদেশিক ঋণের সুদ।
- স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় বাজারে সুদের হার বৃদ্ধির প্রভাবে সুদ পরিশোধের মোট ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।
- গত পাঁচ বছরে স্থানীয় ব্যাংক খাতে সুদের হার প্রায় ৫০০ বেসিস পয়েন্ট বেড়েছে, যার ফলে সরকারকে টেকসই মাত্রার চেয়েও বেশি সুদ দিতে হচ্ছে।
- ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত মোট রাজস্ব বাজেটের মধ্যে সুদ পরিশোধের হার ২০ শতাংশের নিচে থাকলেও ২০২১ সালে তা ২১ শতাংশ অতিক্রম করে।
- কোভিড-পরবর্তী সময়ে জরুরি বাজেট সহায়তার জন্য বড় অঙ্কের বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার কারণে সুদের বোঝা আরও জটিল হয়েছে।
- জুন ২০২৪ পর্যন্ত সরকারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৮,৩২,২৮২ কোটি টাকা, যেখানে জুন ২০২১-এ ছিল ১১,৪৪,২৯৬ কোটি টাকা।
ভর্তুকির ব্যয় বৃদ্ধি
- সাম্প্রতিক বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে সরকারকে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হয়েছে, পাশাপাশি আগের কিছু বকেয়া পরিশোধও করতে হয়েছে।
- জুলাই-নভেম্বর সময়কালে ভর্তুকি বাবদ মোট ২৭,৯৭৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
রাজস্ব সংগ্রহের দুর্বলতা
- ব্যয় বাড়লেও স্থানীয় রাজস্ব সংগ্রহের হার সেই তুলনায় বাড়েনি।
- বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৮ শতাংশ, যেখানে ভারতের ১২ শতাংশ ও নেপালের ১৭ শতাংশ।
- এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের গড় কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ১৯ শতাংশ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি প্রায় ২৫ শতাংশ—এই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে।
উন্নয়ন ব্যয়ের হ্রাস
- অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এডিপি বাবদ ২৪,০৫৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের ৩২,৭৭৩ কোটি টাকা থেকে কম।
- তবে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এডিপি ব্যয়ের হিসাব দিয়েছে ৩০,৮১৮ কোটি টাকা; অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবের সঙ্গে প্রায় ৬,৭৬০ কোটি টাকার তারতম্য রয়েছে।
- সাধারণত আইএমইডি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করে, অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকৃত ছাড়কৃত অর্থের হিসাব দেয়।
উপসংহার
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরকারের বাজেট ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। মূলত সুদের পরিশোধ ও ভর্তুকি বৃদ্ধির কারণে এই ব্যয় বাড়লেও উন্নয়ন খাতে ব্যয়ের পরিমাণ কমে গেছে। অন্যদিকে, রাজস্ব সংগ্রহের দৃশ্যমান উন্নতি না হওয়ায় সরকারের আর্থিক ভারসাম্য রক্ষা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে।