সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- বেক্সিমকোর পোশাক কারখানাগুলোতে বিদেশি অর্ডার কমে যাওয়ায় আর্থিক চাপে পড়ে শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হয়েছে
- বিনিয়োগের তিনটি প্রধান সম্পদ হলো বেক্সিমকোর পোশাকশিল্প, তিস্তা সোলার এবং করতোয়া সোলার
- বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যাংকঋণ প্রায় ৫০,০০০ কোটি টাকায় পৌঁছায়, যার বেশিরভাগই এখন নন-পারফর্মিং লোন (অখেলাফি ঋণ)
- আইসিবি সুকুকের আয় থেকে প্রয়োজনীয় খরচ বাদে বাকি অর্থ সিংকিং ফান্ডে জমা রেখে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করছে
বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক আল-ইস্তিসনা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকেই এই বৃহৎ কনগ্লোমারেট নানা সমস্যায় পড়েছে। সবশেষ, ১৫টি পোশাক কারখানায় ব্যাপক কর্মী ছাঁটাইয়ের খবর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আশঙ্কা তৈরি করেছে।
বিনিয়োগের তিনটি প্রধান সম্পদ
- বেক্সিমকোর পোশাকশিল্প: সুকুকের একটি অংশ এই খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
- তিস্তা সোলার: ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি) বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এখান থেকেই বিনিয়োগকারীদের আয় (সুদ/মুনাফা) দেওয়া হয়।
- করতোয়া সোলার: এখনো নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে, পুরো প্রকল্প সম্পন্ন হতে আরও প্রায় ১০ মাস সময় লাগতে পারে।
বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের কারণ
- বেক্সিমকোর পোশাক কারখানাগুলোতে বিদেশি অর্ডার কমে যাওয়ায় আর্থিক চাপে পড়ে শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হয়েছে।
- করতোয়া সোলারের কাজ দেরি হলে সুকুকের মূলধন ফেরত দেওয়া আরও ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
- ২০২১ সালে বেক্সিমকো লিমিটেড প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকার সম্পদ-সমর্থিত সুকুক ইস্যু করে, যা সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র ও টেক্সটাইল বিভাগ সম্প্রসারণে ব্যবহার হয়।
- গত বছরের আগস্টে দেশে গণবিক্ষোভের পর শেখ হাসিনার সরকার পতন হলে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে ব্যবসায়িক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
বেক্সিমকো গ্রুপের আর্থিক চ্যালেঞ্জ
- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের নভেম্বরে বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যাংকঋণ প্রায় ৫০,০০০ কোটি টাকায় পৌঁছায়, যার বেশিরভাগই এখন নন-পারফর্মিং লোন (অখেলাফি ঋণ)।
- গাজীপুরে অবস্থিত রপ্তানিমুখী পোশাক ও টেক্সটাইল কারখানাগুলো অর্ডারের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫টি কারখানায় ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়।
বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা ও ব্যাংকারদের মতামত
- অনেক বিনিয়োগকারী সন্দিহান হয়ে উঠেছেন যে শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হলে সুকুকের মূলধন ফেরত পাওয়াটা কতটা নিশ্চিত থাকবে।
- এক ব্যাংক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) মনে করেন, করতোয়া সোলারের কাজ যদি দীর্ঘায়িত হয়, সুকুকের মূলধন সময়মতো ফেরত দিতে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
সুকুকের অর্থায়নের ভাগ
- প্রায় ৮০৫.৯০ কোটি টাকা বেক্সিমকোর টেক্সটাইল বিভাগ সম্প্রসারণে ব্যয় হয়েছে।
- তিস্তা সোলার (২০০ মেগাওয়াট) ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
- করতোয়া সোলার লিমিটেড (৩০ মেগাওয়াট, তেতুলিয়া, পঞ্চগড়) এখনো উৎপাদন শুরু করেনি।
আইসিবির অবস্থান
- আইসিবি সুকুকের আয় থেকে প্রয়োজনীয় খরচ বাদে বাকি অর্থ সিংকিং ফান্ডে জমা রেখে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করছে।
- আইসিবি চেয়ারম্যান জানান, করতোয়া সোলারের নির্মাণকাজ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
- তিস্তা সোলারের উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিপিডিবি ২০ বছর মেয়াদি চুক্তিতে প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা ০.১৫ মার্কিন ডলারে কিনছে।
- বেক্সিমকো টেক্সটাইল কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলেও আইসিবি দাবি করছে সুকুকের সম্পদে বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।
সুকুকের মেয়াদ ও শেয়ার রূপান্তর
- এই সুকুকের মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
- বিনিয়োগকারীরা প্রতি বছর ২০% সুকুককে শেয়ারে রূপান্তর করতে পারেন।
- বেক্সিমকোর শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অপেক্ষাকৃত কম, তাই শেয়ার রূপান্তরও কম হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানকেই মূলধন ফেরতের প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান নিশ্চিত করতে হবে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ও সতর্কবার্তা
- কয়েকটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আইসিবিকে অনুরোধ করেছে যাতে এই বৃহত্তম সুকুক খেলাপিতে পরিণত না হয়।
- দেশের অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব এখনো কাটেনি। তবুও আইসিবি ও বেক্সিমকো উভয়েই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সচেষ্ট থাকার কথা জানিয়েছে।