সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার পূর্বে, একটি সাময়িক ব্যবস্থাপনা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থাপনায় একজন অধ্যক্ষ প্রধান ভূমিকা পালন করবেন এবং ইউজিসির একজন প্রতিনিধি পুরো প্রক্রিয়া তদারকি করবেন। ইউজিসির প্রস্তাবের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাবিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছে।
নতুন কাঠামোর মূল বৈশিষ্ট্য
- অধ্যক্ষের নেতৃত্ব
- সাত কলেজের সকল কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব একজন অধ্যক্ষের উপর রাখা হবে।
- ইউজিসির একজন সদস্য সমগ্র প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবেন।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা
- ঢাবির বিভিন্ন বিভাগ – যেমন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ভর্তি, রেজিস্ট্রার ও হিসাব – এর প্রতিনিধিরা মিলে একটি অস্থায়ী কাঠামো গঠন করবে।
- ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম এই কাঠামোর আওতায় পরিচালিত হবে।
- অস্থায়ী কাঠামো ও ব্যাংক হিসাব
- পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত এই সাময়িক কাঠামো কার্যকর থাকবে।
- ঢাবির পৃথক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সকল লেনদেন নিয়ন্ত্রিত হবে।
- কাঠামোটি ঢাকার বাইরে বা নিযুক্ত অধ্যক্ষের অফিস থেকেও পরিচালিত হতে পারে।
- হেল্প ডেস্ক সেবা
- প্রত্যেক কলেজে ভর্তি, পরীক্ষা ও অন্যান্য বিষয়ের তথ্য আদান-প্রদানের জন্য হেল্প ডেস্ক থাকবে।
- কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই হেল্প ডেস্কের তদারকি করবেন।
- ইউজিসির অনুমোদন প্রক্রিয়া
- ইউজিসির প্রস্তাবটি ঢাবির একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের অনুমোদনের জন্য দ্রুত প্রক্রিয়াকৃত হবে।
- এ বিষয়ে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাবির উপাচার্যকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে।
পূর্বসূরি কমিটি ও প্রস্তাবনা
- গত ডিসেম্বর মাসে, ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়।
- এই কমিটি সাত কলেজের জন্য একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর খসড়া প্রস্তুত করে, যাতে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, ঢাবির সহ-উপাচার্য এবং ইউজিসির একজন সদস্যও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট পক্ষের মন্তব্য
ইউজিসি জানিয়েছেন যে, সাত কলেজ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত একটি সাময়িক কাঠামোর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
- অতীতে দেশের ডিগ্রি কলেজগুলো ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হতো।
- ১৯৯২ সালে বিএনপি সরকারের অধীনে সরকারি কলেজগুলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনা হয়।
- ২০১৪ সালের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭৯টি সরকারি কলেজকে পুরনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন।
- ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে ঢাকার সাত ঐতিহ্যবাহী সরকারি কলেজ—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনা হয়।
শিক্ষার্থী সংখ্যা ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ
- সাত কলেজে প্রায় ১,৬৭,২৩৬ শিক্ষার্থী (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) এবং আনুমানিক ১,১৪৯ শিক্ষক রয়েছেন।
- ঢাবির অধীনে এত বিশাল শিক্ষার্থীসংখ্যার পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পূর্বে জটিলতা ও বিলম্বের সম্মুখীন হয়েছিল, যা নতুন কাঠামোতে সমাধানের আশা করা হচ্ছে।
উপসংহার
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সাত কলেজের কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও গতিশীল করতে, পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের পূর্ব পর্যন্ত একটি সাময়িক কাঠামো চালু করতে যাচ্ছে। ইউজিসির প্রস্তাবে ইতিমধ্যেই মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে, এবং ঢাবির আনুষ্ঠানিক অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এই কাঠামো কার্যকর হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।