সারাক্ষণ রিপোর্ট
বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ পণ্য পরিবহন হয় সমুদ্রপথে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন চীনসহ ঐতিহ্যগত প্রতিদ্বন্দ্বী, এমনকি প্রতিবেশী ও মিত্র দেশের সাথেও বাণিজ্যিক ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। এর ফলে বিশ্ব মহাসাগরীয় শিপিং খাতে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
সম্মেলন ও প্রধান অংশগ্রহণকারী
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচে প্রতি বছর আয়োজিত এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল টিপিএম কন্টেইনার শিপিং ও সাপ্লাই চেইন সম্মেলন কন্টেইনার শিপিং খাতের চুক্তি নবায়নের সূচনা হিসেবে দেখা হয়।
- এখানে শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানি—এমএসসি, মার্স্ক, হাপাগ-লয়েড—এবং বড় ক্রেতা ও লজিস্টিকস প্রতিষ্ঠান—ওয়ালমার্ট, ডিএসভি, ডিএইচএল—উপস্থিত থাকে।
- এ সম্মেলন বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এসব প্রতিষ্ঠানের মাঝে পারস্পরিক আলোচনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শুল্ক বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য প্রভাব
- যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে এবং চীনে তৈরি জাহাজের জন্য বাড়তি পোর্ট ফি প্রস্তাব করেছে।
- মেক্সিকো থেকে আমদানি করা অ্যাভোকাডো, টাকিলা কিংবা কানাডা থেকে আমদানি করা গরুর মাংস, কাঠ, তেল—এসবের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে।
- ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত পণ্য, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপরও নতুন বা বাড়তি শুল্কের পরিকল্পনা চলছে।
শিপিং খাতে অনিশ্চয়তা
বিশ্লেষকরা বলছেন, এত ব্যাপক রক্ষণশীল বাণিজ্যনীতি আগে দেখা যায়নি। শুল্ক বেড়ে গেলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়, যা সাধারণ ক্রেতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সামগ্রিকভাবে কন্টেইনার শিপিংয়ের চাহিদা ও ভাড়ার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্ব শিপিং রেটের বর্তমান অবস্থা
- সম্ভাব্য শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কায় অনেক প্রতিষ্ঠান আগেভাগেই পণ্য আমদানি বা মজুত করছে।
- কিন্তু অতিরিক্ত শুল্ক পুরোপুরি কার্যকর হলে প্রতিশোধমূলক শুল্ক ও মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে, ফলে ভোক্তারা ব্যয় কমাতে বাধ্য হতে পারে।
- ড্রিউরি ওয়ার্ল্ড কন্টেইনার ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ৪০-ফুট কন্টেইনার পরিবহনের গড় স্পট ভাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আগের তুলনায় অনেকটাই কমে গেছে। ২০২১ সালে যা শীর্ষে ছিল, এখন তা প্রায় ৭৫ শতাংশ কমেছে।
চীনা জাহাজ সম্পর্কে মার্কিন পরিকল্পনা
- ২১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র চীনে তৈরি জাহাজের ওপর উল্লেখযোগ্য পোর্ট ফি আরোপের প্রস্তাব দেয়।
- প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত কসকো-এর মতো কোম্পানিকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ ডলার পর্যন্ত ফি দিতে হতে পারে, অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান চীনে তৈরি জাহাজ ব্যবহার করলে তাদের ফি হতে পারে ১৫ লাখ ডলার পর্যন্ত।
- এই উদ্যোগ শ্রমিক সংগঠন দ্বারা সমর্থিত, মূলত মার্কিন জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে উৎসাহিত করতেই এমন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এতে শিপিং খরচ বাড়বে এবং শেষ পর্যন্ত পণ্যের বাজারমূল্যও বৃদ্ধি পেতে পারে।
উপসংহার
শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানিগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় অঙ্কের মুনাফা করেছে। তবে আসন্ন শুল্কনীতি ও ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে তাদের চুক্তি নিয়ে দর-কষাকষিতে পূর্বের মতো শক্তিশালী অবস্থান বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল এসব বাণিজ্যিক পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে দেশটির আমদানি-রপ্তানি ও বিশ্ব বাণিজ্যের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে শিপিং ভাড়া, চুক্তি পুনর্নবায়ন ও বাজারের স্থিতিশীলতার ওপর। এখন সবার চোখ শুল্ক ও ভূরাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের দিকে—কীভাবে এটি সামনের দিনগুলোতে এগোবে, সেটাই দেখার বিষয়।