০৮:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

নতুন দিল্লির বায়ু দূষণ কমাতে তিন বছরের পরিকল্পনা

  • Sarakhon Report
  • ০৫:৪১:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
  • 22

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • দিল্লির বায়ু দূষণ একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে
  • ২০২৮ সালের মধ্যে PM2.5 স্তরকে ৮০ µg/m³-এ আনার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে
  • নির্মাণকাজে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রোটোকল তৈরি করা এবং ধূলিকণা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাড়ানো প্রয়োজন
  • বিদ্যুৎচালিত যানবাহন (EV) বাড়ানো, পুরনো যানবাহন নিষিদ্ধকরণ এবং গণপরিবহন উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবহন খাতের দূষণ কমানো সম্ভব

নতুন দিল্লিতে বায়ু দূষণ একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে। এটি বিনিয়োগের ক্ষতি, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে বাধা এবং উৎপাদনশীলতার নিম্নগতির কারণ হচ্ছে। ২০২৪ সালে, দিল্লির বার্ষিক গড় PM2.5 স্তর ছিল ১০২ µg/m³, যা ‘দুর্বল’ মানের বাতাস হিসেবে বিবেচিত। তুলনামূলকভাবে, ২০১৩ সালে বেইজিংয়ের PM2.5 স্তর ছিল ১০০ µg/m³, যা বর্তমানে ৪০ µg/m³-এর নিচে নেমে এসেছে। সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করলে দিল্লিও ২০২৮ সালের মধ্যে PM2.5 স্তরকে ৮০ µg/m³-এ আনতে পারে

দূষণের প্রধান কারণ

দিল্লির বায়ু দূষণের প্রধান উৎসগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে:

 পরিবহন খাত – শহরের মোট দূষণের প্রায় ৫০% আসে যানবাহন থেকে, যেখানে ব্যক্তিগত গাড়ির ভূমিকা বেশি।

 জৈব পদার্থ ও কঠিন জ্বালানি দহন – বাসাবাড়ি এবং উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ও কাঠ পোড়ানো।

 বর্জ্য পোড়ানো ও নির্মাণের ধুলো – উন্মুক্ত বর্জ্য পোড়ানো এবং নির্মাণকাজ থেকে নির্গত ধুলাবালি।

 শিল্প দূষণ – দিল্লির সীমানার বাইরের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্গমনও প্রভাব ফেলে।

 শীতকালের ফসল পোড়ানো – আশপাশের রাজ্যগুলোতে ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানোর কারণে শীতকালে দূষণ বেড়ে যায়।

সম্ভাব্য সমাধান ও পদক্ষেপ

১. ব্যক্তিগত যানবাহন কমানো ও গণপরিবহন বৃদ্ধি

বিদ্যুৎচালিত যানবাহন (EV) বাড়ানো –
২০২৬ সালের মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ির ৩০% এবং ২০২৭ সালের মধ্যে ৫০% EV বিক্রয় বাধ্যতামূলক করা।

পুরনো যানবাহন নিষিদ্ধকরণ –
১০ বছরের বেশি পুরনো ডিজেল এবং ১৫ বছরের বেশি পুরনো পেট্রোল চালিত গাড়ি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা।

 গণপরিবহন উন্নয়ন –
বর্তমানে প্রতি লাখ মানুষের জন্য মাত্র ৩৩টি বাস আছে, যা ৬০টিতে উন্নীত করা হবে

রাস্তার উন্নয়ন ও হাঁটার সুবিধা বৃদ্ধি –
গণপরিবহনের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য শেষ মাইল সংযোগ উন্নত করা।

 প্রত্যাশিত ফলাফল:
এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে PM2.5 নির্গমন ৩৩% কমবে, যা বাতাসের মানে ৯ µg/m³ উন্নতি আনবে।

 বর্জ্য ও জ্বালানি পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ

বর্জ্য পোড়ানো বন্ধে নজরদারি –
মাঠ জরিপ ও জনসাধারণের অভিযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে অবৈধ বর্জ্য পোড়ানোর স্থান চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাল্ক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা –
মল, স্কুল, হোটেলসহ বাল্ক বর্জ্য উৎপাদনকারীদের বর্জ্য পুনর্ব্যবহার উৎসাহিত করা হবে।

ল্যান্ডফিল সাইটের দ্রুত পরিশোধন –
প্রধান তিনটি ল্যান্ডফিল সাইটের বায়োরেমিডিয়েশন মিশন মোডে সম্পন্ন করা হবে এবং নতুন বর্জ্য সেখানে ফেলা নিষিদ্ধ করা হবে।

শীতকালে গৃহস্থালীতে জ্বালানি পোড়ানো রোধ –
শীতকালে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে হিটার ও শীতের পোশাক সরবরাহ করা হবে।

পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার বাধ্যতামূলক –
২০২৬ সালের মধ্যে রান্নার জন্য শুধুমাত্র LPG ও বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।

প্রত্যাশিত ফলাফল:
এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে PM2.5 নির্গমন ৬০% হ্রাস পাবে, যা ৬ µg/m³ বায়ুর মান উন্নতি করবে

নির্মাণ ও রাস্তার ধুলো নিয়ন্ত্রণ

নির্মাণকাজে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রোটোকল –
৫০০ বর্গমিটারের বেশি নির্মাণস্থলে বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে।

 ধূলিকণা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা –
স্বয়ংক্রিয় ঝাড়ুদারজল ছিটানো ও অ্যান্টি-স্মগ গান ব্যবহার বাড়ানো হবে।

প্রত্যাশিত ফলাফল:
এই ব্যবস্থা কার্যকরভাবে চালু করা হলে বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধূলিকণা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে

উপসংহার

দিল্লির বায়ু দূষণ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। ২০২৮ সালের মধ্যে PM2.5 স্তরকে ‘মধ্যম’ মানে আনতে সরকার পরিবহনবর্জ্য ব্যবস্থাপনানির্মাণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহারে জোর দিচ্ছে। সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দিল্লির বায়ুর মান উন্নত করা সম্ভব, যা স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং নাগরিকদের জীবনযাত্রার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

নতুন দিল্লির বায়ু দূষণ কমাতে তিন বছরের পরিকল্পনা

০৫:৪১:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • দিল্লির বায়ু দূষণ একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে
  • ২০২৮ সালের মধ্যে PM2.5 স্তরকে ৮০ µg/m³-এ আনার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে
  • নির্মাণকাজে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রোটোকল তৈরি করা এবং ধূলিকণা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাড়ানো প্রয়োজন
  • বিদ্যুৎচালিত যানবাহন (EV) বাড়ানো, পুরনো যানবাহন নিষিদ্ধকরণ এবং গণপরিবহন উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবহন খাতের দূষণ কমানো সম্ভব

নতুন দিল্লিতে বায়ু দূষণ একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে। এটি বিনিয়োগের ক্ষতি, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে বাধা এবং উৎপাদনশীলতার নিম্নগতির কারণ হচ্ছে। ২০২৪ সালে, দিল্লির বার্ষিক গড় PM2.5 স্তর ছিল ১০২ µg/m³, যা ‘দুর্বল’ মানের বাতাস হিসেবে বিবেচিত। তুলনামূলকভাবে, ২০১৩ সালে বেইজিংয়ের PM2.5 স্তর ছিল ১০০ µg/m³, যা বর্তমানে ৪০ µg/m³-এর নিচে নেমে এসেছে। সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করলে দিল্লিও ২০২৮ সালের মধ্যে PM2.5 স্তরকে ৮০ µg/m³-এ আনতে পারে

দূষণের প্রধান কারণ

দিল্লির বায়ু দূষণের প্রধান উৎসগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে:

 পরিবহন খাত – শহরের মোট দূষণের প্রায় ৫০% আসে যানবাহন থেকে, যেখানে ব্যক্তিগত গাড়ির ভূমিকা বেশি।

 জৈব পদার্থ ও কঠিন জ্বালানি দহন – বাসাবাড়ি এবং উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ও কাঠ পোড়ানো।

 বর্জ্য পোড়ানো ও নির্মাণের ধুলো – উন্মুক্ত বর্জ্য পোড়ানো এবং নির্মাণকাজ থেকে নির্গত ধুলাবালি।

 শিল্প দূষণ – দিল্লির সীমানার বাইরের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্গমনও প্রভাব ফেলে।

 শীতকালের ফসল পোড়ানো – আশপাশের রাজ্যগুলোতে ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানোর কারণে শীতকালে দূষণ বেড়ে যায়।

সম্ভাব্য সমাধান ও পদক্ষেপ

১. ব্যক্তিগত যানবাহন কমানো ও গণপরিবহন বৃদ্ধি

বিদ্যুৎচালিত যানবাহন (EV) বাড়ানো –
২০২৬ সালের মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ির ৩০% এবং ২০২৭ সালের মধ্যে ৫০% EV বিক্রয় বাধ্যতামূলক করা।

পুরনো যানবাহন নিষিদ্ধকরণ –
১০ বছরের বেশি পুরনো ডিজেল এবং ১৫ বছরের বেশি পুরনো পেট্রোল চালিত গাড়ি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা।

 গণপরিবহন উন্নয়ন –
বর্তমানে প্রতি লাখ মানুষের জন্য মাত্র ৩৩টি বাস আছে, যা ৬০টিতে উন্নীত করা হবে

রাস্তার উন্নয়ন ও হাঁটার সুবিধা বৃদ্ধি –
গণপরিবহনের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য শেষ মাইল সংযোগ উন্নত করা।

 প্রত্যাশিত ফলাফল:
এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে PM2.5 নির্গমন ৩৩% কমবে, যা বাতাসের মানে ৯ µg/m³ উন্নতি আনবে।

 বর্জ্য ও জ্বালানি পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ

বর্জ্য পোড়ানো বন্ধে নজরদারি –
মাঠ জরিপ ও জনসাধারণের অভিযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে অবৈধ বর্জ্য পোড়ানোর স্থান চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাল্ক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা –
মল, স্কুল, হোটেলসহ বাল্ক বর্জ্য উৎপাদনকারীদের বর্জ্য পুনর্ব্যবহার উৎসাহিত করা হবে।

ল্যান্ডফিল সাইটের দ্রুত পরিশোধন –
প্রধান তিনটি ল্যান্ডফিল সাইটের বায়োরেমিডিয়েশন মিশন মোডে সম্পন্ন করা হবে এবং নতুন বর্জ্য সেখানে ফেলা নিষিদ্ধ করা হবে।

শীতকালে গৃহস্থালীতে জ্বালানি পোড়ানো রোধ –
শীতকালে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে হিটার ও শীতের পোশাক সরবরাহ করা হবে।

পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার বাধ্যতামূলক –
২০২৬ সালের মধ্যে রান্নার জন্য শুধুমাত্র LPG ও বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।

প্রত্যাশিত ফলাফল:
এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে PM2.5 নির্গমন ৬০% হ্রাস পাবে, যা ৬ µg/m³ বায়ুর মান উন্নতি করবে

নির্মাণ ও রাস্তার ধুলো নিয়ন্ত্রণ

নির্মাণকাজে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রোটোকল –
৫০০ বর্গমিটারের বেশি নির্মাণস্থলে বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে।

 ধূলিকণা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা –
স্বয়ংক্রিয় ঝাড়ুদারজল ছিটানো ও অ্যান্টি-স্মগ গান ব্যবহার বাড়ানো হবে।

প্রত্যাশিত ফলাফল:
এই ব্যবস্থা কার্যকরভাবে চালু করা হলে বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ ধূলিকণা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে

উপসংহার

দিল্লির বায়ু দূষণ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। ২০২৮ সালের মধ্যে PM2.5 স্তরকে ‘মধ্যম’ মানে আনতে সরকার পরিবহনবর্জ্য ব্যবস্থাপনানির্মাণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহারে জোর দিচ্ছে। সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দিল্লির বায়ুর মান উন্নত করা সম্ভব, যা স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং নাগরিকদের জীবনযাত্রার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।