০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

আইএমএফ এর অর্থের প্রয়োজন নেই: গভর্নর

  • Sarakhon Report
  • ০২:৫৫:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
  • 14

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • ব্যাংকিং খাতে জমা বৃদ্ধির হার মন্থর এবং নন-প্রফর্মিং লোন (NPL) একটি বড় চ্যালেঞ্জ
  • মুদ্রা বিনিময় হার দেশের আর্থ-সামাজিক চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে
  • অবৈধ সম্পদের পুনরুদ্ধার এবং দেশের অভ্যন্তরে সম্পদ সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হবে
  • এই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উদাহরণ অনুসরণ করা হবে এবং ভবিষ্যৎ সরকারও এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে

ভূমিকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ. মানসুরের বক্তব্যে বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঠিকভাবে পরিচালনার মাধ্যমে আইএমএফ তহবিলের প্রয়োজন এড়ানো যাবে। বিদেশি তহবিলের জন্য ভিক্ষা না করে সঠিক নীতিমালা গ্রহণ করা অতি জরুরি।

প্রধান আর্থিক অবস্থা ও বক্তব্য

  • সবল আর্থিক অবস্থা:
    গভর্নর মানসুর জানান, বাংলাদেশ আর্থিক দিক থেকে শক্তিশালী। শুধু রাজস্ব সংগ্রহে কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে, যা রাজস্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাধান করা যাবে।

  • আয় উৎস:
    চলতি অর্থ বছরে প্রায় ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স ও ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আনা হয়েছে, মোট আয় প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে লেটার অব ক্রেডিট কেটে হলেও দেশের হাতে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার থাকে।
  • অর্থের জন্য ভিক্ষা কেন?
    তাঁর প্রশ্ন, “আমাকে কেন অর্থের জন্য ভিক্ষা করতে হবে?” ইঙ্গিত দেয় যে, সঠিক নীতিমালা থাকলে দেশের নিজস্ব সম্পদ থেকেই উন্নয়ন সম্ভব।

ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ

  • সঠিক নীতিমালা:
    গভর্নর বলেন, “আমাদের আইএমএফ-এর টাকা দরকার নেই, সঠিক নীতিমালা দরকার।” সঠিক নীতিমালা থাকলে বিদেশি তহবিলের উপর নির্ভরতা কমবে।

  • জমা বৃদ্ধি ও শাসন:
    বর্তমান উচ্চ সুদের পরও ব্যাংকে জমা বৃদ্ধির হার মন্থর। জমা বৃদ্ধি ও সুসংগঠিত শাসনের অভাব নন-প্রফর্মিং লোন (NPL) মোকাবেলায় বাধা সৃষ্টি করছে।
  • পরিচালকদের যোগ্যতা:
    শীঘ্রই ব্যাংক ডিরেক্টরদের জন্য ফিট এন্ড প্রপার পরীক্ষা শুরু হবে। অযোগ্য ব্যক্তিদের পদত্যাগের আহ্বান জানানো হবে, এবং অভিজ্ঞতা ছাড়া পরিবারের সদস্যদের বোর্ডে বসানোর বিরুদ্ধে কঠোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
  • স্বাধীন ডিরেক্টর প্যানেল:
    ব্যাংকগুলো তাদের বোর্ডে যোগদান করানোর জন্য একটি স্বাধীন ডিরেক্টর প্যানেল গঠন করবে। সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকারদের সমিতি (ABB) থেকে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নিয়ে পরামর্শ নিয়েছে।

মুদ্রা বিনিময় ও আর্থিক নীতি

  • নির্দিষ্ট বিনিময় হার:
    “আমরা দেশের মুদ্রা বিনিময় হারকে বহিরাগত বাজার যেমন দুবাই দ্বারা নির্ধারিত হতে দেব না,” বলেছেন গভর্নর।
  • বাস্তবসম্মত মূল্য নির্ধারণ:
    দেশের আর্থ-সামাজিক চাহিদা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় বিনিময় হার নির্ধারণ করা হবে। প্রয়োজনে, সুশৃঙ্খলভাবে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা যেতে পারে।

এজেন্ট ব্যাংকিং ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি

  • প্রসারিত এজেন্ট ব্যাংকিং:
    এজেন্ট ব্যাংকিং দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। লক্ষ্য করা হয়েছে, এজেন্টদের ৫০ শতাংশ নারী করা হবে।
  • নতুন নির্দেশিকা:
    শীঘ্রই এজেন্ট ব্যাংকিং সম্পর্কিত নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করা হবে, যা প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেমকে ছাড়িয়ে যেতে সহায়ক হবে।
  • QR কোড পেমেন্ট:
    QR কোড পেমেন্টের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অবৈধ সম্পদের পুনরুদ্ধার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

  • সম্পদের সুরক্ষা:
    অপরিষ্কার বা অবৈধ সম্পদের পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে, দেশের অভ্যন্তরে সম্পদ সুরক্ষিত রাখা এবং বিদেশে সংযুক্ত সম্পদের মাধ্যমে সম্পদ প্রেরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • আন্তর্জাতিক উদাহরণ:
    নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া ও অ্যাঙ্গোলার মতো দেশগুলো এই ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে, যদিও এই কাজটি সময়সাপেক্ষ।
  • ভবিষ্যত উদ্যোগ:
    আগামী রাজনৈতিক সরকারও এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে এবং নাগরিক সমাজকে রাজনৈতিক দলগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

উপসংহার

বাংলাদেশের আর্থিক শক্তি দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল। সঠিক নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে বিদেশি তহবিলের প্রয়োজন হবে না। ব্যাংকিং খাতের উন্নতি, জমা বৃদ্ধির মাধ্যমে নন-প্রফর্মিং লোন মোকাবেলা এবং সুসংগঠিত শাসনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব। চলমান সংস্কার ও দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি বাংলাদেশের আর্থিক ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করবে।

আইএমএফ এর অর্থের প্রয়োজন নেই: গভর্নর

০২:৫৫:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • ব্যাংকিং খাতে জমা বৃদ্ধির হার মন্থর এবং নন-প্রফর্মিং লোন (NPL) একটি বড় চ্যালেঞ্জ
  • মুদ্রা বিনিময় হার দেশের আর্থ-সামাজিক চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে
  • অবৈধ সম্পদের পুনরুদ্ধার এবং দেশের অভ্যন্তরে সম্পদ সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হবে
  • এই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উদাহরণ অনুসরণ করা হবে এবং ভবিষ্যৎ সরকারও এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে

ভূমিকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ. মানসুরের বক্তব্যে বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঠিকভাবে পরিচালনার মাধ্যমে আইএমএফ তহবিলের প্রয়োজন এড়ানো যাবে। বিদেশি তহবিলের জন্য ভিক্ষা না করে সঠিক নীতিমালা গ্রহণ করা অতি জরুরি।

প্রধান আর্থিক অবস্থা ও বক্তব্য

  • সবল আর্থিক অবস্থা:
    গভর্নর মানসুর জানান, বাংলাদেশ আর্থিক দিক থেকে শক্তিশালী। শুধু রাজস্ব সংগ্রহে কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে, যা রাজস্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাধান করা যাবে।

  • আয় উৎস:
    চলতি অর্থ বছরে প্রায় ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স ও ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আনা হয়েছে, মোট আয় প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে লেটার অব ক্রেডিট কেটে হলেও দেশের হাতে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার থাকে।
  • অর্থের জন্য ভিক্ষা কেন?
    তাঁর প্রশ্ন, “আমাকে কেন অর্থের জন্য ভিক্ষা করতে হবে?” ইঙ্গিত দেয় যে, সঠিক নীতিমালা থাকলে দেশের নিজস্ব সম্পদ থেকেই উন্নয়ন সম্ভব।

ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ

  • সঠিক নীতিমালা:
    গভর্নর বলেন, “আমাদের আইএমএফ-এর টাকা দরকার নেই, সঠিক নীতিমালা দরকার।” সঠিক নীতিমালা থাকলে বিদেশি তহবিলের উপর নির্ভরতা কমবে।

  • জমা বৃদ্ধি ও শাসন:
    বর্তমান উচ্চ সুদের পরও ব্যাংকে জমা বৃদ্ধির হার মন্থর। জমা বৃদ্ধি ও সুসংগঠিত শাসনের অভাব নন-প্রফর্মিং লোন (NPL) মোকাবেলায় বাধা সৃষ্টি করছে।
  • পরিচালকদের যোগ্যতা:
    শীঘ্রই ব্যাংক ডিরেক্টরদের জন্য ফিট এন্ড প্রপার পরীক্ষা শুরু হবে। অযোগ্য ব্যক্তিদের পদত্যাগের আহ্বান জানানো হবে, এবং অভিজ্ঞতা ছাড়া পরিবারের সদস্যদের বোর্ডে বসানোর বিরুদ্ধে কঠোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
  • স্বাধীন ডিরেক্টর প্যানেল:
    ব্যাংকগুলো তাদের বোর্ডে যোগদান করানোর জন্য একটি স্বাধীন ডিরেক্টর প্যানেল গঠন করবে। সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকারদের সমিতি (ABB) থেকে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নিয়ে পরামর্শ নিয়েছে।

মুদ্রা বিনিময় ও আর্থিক নীতি

  • নির্দিষ্ট বিনিময় হার:
    “আমরা দেশের মুদ্রা বিনিময় হারকে বহিরাগত বাজার যেমন দুবাই দ্বারা নির্ধারিত হতে দেব না,” বলেছেন গভর্নর।
  • বাস্তবসম্মত মূল্য নির্ধারণ:
    দেশের আর্থ-সামাজিক চাহিদা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় বিনিময় হার নির্ধারণ করা হবে। প্রয়োজনে, সুশৃঙ্খলভাবে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা যেতে পারে।

এজেন্ট ব্যাংকিং ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি

  • প্রসারিত এজেন্ট ব্যাংকিং:
    এজেন্ট ব্যাংকিং দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। লক্ষ্য করা হয়েছে, এজেন্টদের ৫০ শতাংশ নারী করা হবে।
  • নতুন নির্দেশিকা:
    শীঘ্রই এজেন্ট ব্যাংকিং সম্পর্কিত নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করা হবে, যা প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেমকে ছাড়িয়ে যেতে সহায়ক হবে।
  • QR কোড পেমেন্ট:
    QR কোড পেমেন্টের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অবৈধ সম্পদের পুনরুদ্ধার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

  • সম্পদের সুরক্ষা:
    অপরিষ্কার বা অবৈধ সম্পদের পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে, দেশের অভ্যন্তরে সম্পদ সুরক্ষিত রাখা এবং বিদেশে সংযুক্ত সম্পদের মাধ্যমে সম্পদ প্রেরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • আন্তর্জাতিক উদাহরণ:
    নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া ও অ্যাঙ্গোলার মতো দেশগুলো এই ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে, যদিও এই কাজটি সময়সাপেক্ষ।
  • ভবিষ্যত উদ্যোগ:
    আগামী রাজনৈতিক সরকারও এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে এবং নাগরিক সমাজকে রাজনৈতিক দলগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

উপসংহার

বাংলাদেশের আর্থিক শক্তি দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল। সঠিক নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে বিদেশি তহবিলের প্রয়োজন হবে না। ব্যাংকিং খাতের উন্নতি, জমা বৃদ্ধির মাধ্যমে নন-প্রফর্মিং লোন মোকাবেলা এবং সুসংগঠিত শাসনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব। চলমান সংস্কার ও দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি বাংলাদেশের আর্থিক ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করবে।