সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- অকাল ডিম্বাশয় অকার্যকারিতা নারী স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ
- ডিম্বাণু দান (Oocyte donation) এবং হরমোন থেরাপির মাধ্যমে গর্ভধারণ সম্ভব
- এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
অকাল ডিম্বাশয় অকার্যকারিতা (Premature Ovarian Insufficiency) প্রায়ই নারীদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। সাধারণত কিশোরী বয়সে মাসিক শুরু হয়ে প্রায় ৫০ বছর পর্যন্ত তা সচল থাকে। এই সময়ে ডিম্বাশয় থেকে ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের মতো গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি হয়। কিন্তু প্রায় ২–৪ শতাংশ নারীর ডিম্বাশয় ৪০ বছরের আগেই কাজ করা বন্ধ করে দেয়—অনেক ক্ষেত্রেই কিশোরী বয়স পেরোনোর অল্প দিনের মধ্যেই।
অকাল ডিম্বাশয় অকার্যকারিতা কী
৪০ বছরের নিচে যেসব নারীর অন্তত চার মাস ধরে মাসিক বন্ধ থাকে এবং পরীক্ষায় মস্তিষ্কের একটি বিশেষ হরমোনের মাত্রা বেশি পাওয়া যায়, তাদের ‘অকাল ডিম্বাশয় অকার্যকারিতা’ আছে বলে মনে করা হয়। এর অর্থ, ডিম্বাশয় পর্যাপ্ত ডিম্বমুক্তি ঘটাতে পারছে না।
অজানা কারণ: কেন প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে
কিশোরী, ২০ বা ৩০-এর দশকে হঠাৎ করে এই অবস্থা দেখা দিলে তা গুরুতর মানসিক ও শারীরিক ধাক্কা হিসেবে আসে। মাসিক বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি গরম Flush (হট ফ্ল্যাশ), রাতের ঘাম, অনিদ্রা, ক্লান্তি, মেজাজের ওঠানামা, উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে ঠিক কী কারণে ডিম্বাশয় আগেভাগে অকার্যকর হয়, তা এখনো অজানা।
অটোইমিউন ও জেনেটিক সম্পর্ক
কিছু নারীর ক্ষেত্রে এই সমস্যার কারণ অটোইমিউন ব্যাধি, যেখানে দেহ নিজের কোষকেই ভুলবশত আক্রমণ করে। এর ফলে থাইরয়েড বা টাইপ ১ ডায়াবেটিসের মতো অন্য রোগও দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে অনেক নারীর ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণ বড় ভূমিকা রাখে। পারিবারিক ইতিহাস বা ক্রোমোজোমের বিশেষ তারতম্য (যেমন, টার্নার সিনড্রোমে দুটি এক্স-ক্রোমোজোমের বদলে একটি এক্স-ক্রোমোজোম থাকা) থেকেও এই অবস্থা তৈরি হতে পারে।
স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
ডিম্বাশয় আগেভাগে বন্ধ হয়ে গেলে ইস্ট্রোজেনসহ অন্যান্য হরমোনের অভাবে শরীরে স্বল্পমেয়াদে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব আরও গুরুতর হতে পারে—হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও হার্ট ফেলিওরের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সঠিক হরমোন চিকিৎসার মাধ্যমে এই বাড়তি ঝুঁকি কমানো যায়। একই সঙ্গে হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ায় অল্প বয়সেই ফ্র্যাকচারের আশঙ্কা থাকে। এছাড়া মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা আলঝেইমার, পার্কিনসন কিংবা বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ায়।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয় ঠিক কী কারণে অকাল ডিম্বাশয় অকার্যকারিতা ঘটে। তবে যথাযথ চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর থেকে সৃষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ইস্ট্রোজেন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা হরমোন থেরাপি নেওয়ার মাধ্যমে হৃদরোগ ও হাড়ের ক্ষয় রোধ করা যায়। নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে রোগীকে সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভধারণের সম্ভাবনা ও বাড়তি ঝুঁকি
এই অবস্থায় প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণের সম্ভাবনা খুবই কম, তবে পুরোপুরি শূন্য নয়। কারণ কখনো কখনো ডিম্বাশয় সাময়িকভাবে সক্রিয় হতে পারে। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ প্রতিরোধে সাধারণত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে বলা হয়। অন্যদিকে কেউ যদি গর্ভধারণে আগ্রহী হন, তবে ডিম্বদানের (Oocyte donation) মাধ্যমে সহায়তা নেওয়া সম্ভব। এ সময় প্রয়োজনীয় হরমোন থেরাপিও নেওয়া যেতে পারে।
উপসংহার
অকাল ডিম্বাশয় অকার্যকারিতা নারীস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এর ফলে স্বল্পমেয়াদে অস্বস্তিকর লক্ষণ এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ, হাড়ের দুর্বলতা ও স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে সঠিক ব্যবস্থাপনা, পরামর্শ ও মেডিকেল সাপোর্ট পেলে এসব জটিলতা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং নারীস্বাস্থ্য স্বাভাবিক রাখা যায়। বিশ্বের সকল নারীর স্বার্থেই এই অবস্থার কারণ খুঁজে বের করা এবং আরও উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।