ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির ঘোষণা, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে উত্তেজনা
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস,
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নাটকীয় পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বড় ধরনের শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হওয়া এই সিদ্ধান্তের আওতায় কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ২৫% শুল্ক এবং চীনা পণ্যের ওপর ১০% শুল্ক বসানো হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে উৎসাহিত করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে এই শুল্ক নীতি স্বল্পমেয়াদে “সামান্য বিশৃঙ্খলা” সৃষ্টি করতে পারে, তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে এটি আমেরিকার অর্থনৈতিক শক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তার ভাষায়, এই পদক্ষেপ আমেরিকাকে “সমৃদ্ধ ও মহান” করে তুলবে।
তবে ব্যবসায়ী মহল, ভোক্তা এবং বিশেষত মার্কিন কৃষকরা এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সম্ভাব্য বিপর্যয় এবং ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, কারণ এটি বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থাকে ব্যাহত করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রশাসন অবশ্য তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে, দাবি করছে যে এই শুল্ক ব্যবস্থা তাদের বৃহত্তর অর্থনৈতিক পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া এবং এই নীতির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এখনো অনিশ্চিত।
বাণিজ্য উত্তেজনার ফলে বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা
রয়টার্স,
নতুন মার্কিন শুল্ক নীতির কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। ইউরোপের বাজারে বড় ধরনের পতন হয়েছে, যেখানে ফ্রাঙ্কফুর্ট স্টক এক্সচেঞ্জ গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ লেনদেনের দিন কাটিয়েছে, ৩.৫% হ্রাস পেয়েছে। লন্ডন ও প্যারিসেও যথাক্রমে ১.৩% ও ১.৯% পতন লক্ষ্য করা গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও স্টক মার্কেটে ব্যাপক মন্দা দেখা দিয়েছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের বিভিন্ন খাতে মূল্য হ্রাস ঘটেছে, বিশেষ করে বোয়িং ও আমেরিকান এক্সপ্রেসের মতো শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দর উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, যদি বাণিজ্য বিরোধ দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে এটি অর্থনৈতিক মন্দা এবং শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধসের কারণ হতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কড়া ভাষায় জানিয়েছে যে এই শুল্ক ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের স্থিতিশীলতা এবং সরবরাহ শৃঙ্খলকে হুমকির মুখে ফেলছে।
বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারী ও নীতিনির্ধারকরা পরিস্থিতির ওপর গভীর নজর রাখছেন এবং এর দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রভাবের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেই চীনের ‘টু সেশনস’ অধিবেশন
দ্য গার্ডিয়ান,
বেইজিংয়ে শুরু হয়েছে চীনের বার্ষিক সংসদ অধিবেশন ‘টু সেশনস’, যেখানে হাজার হাজার প্রতিনিধি কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সমবেত হয়েছেন। চীনের রাজনৈতিক ক্যালেন্ডারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ইভেন্টে চীনা গণপরামর্শ সম্মেলন এবং জাতীয় গণ কংগ্রেসের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এক চরম অনিশ্চয়তার সময়ে—বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য উত্তেজনা, মার্কিন-ইউক্রেন সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং গাজার অস্থিতিশীল যুদ্ধবিরতির মধ্যে।
অর্থনৈতিকভাবে চীন বর্তমানে মার্কিন শুল্ক নীতির প্রতিক্রিয়ায় নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। তবে সরকার উদ্ভাবন ও প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার ওপর জোর দিচ্ছে, বিশেষ করে উচ্চ-প্রযুক্তি খাতে। একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ‘ডিপসিক’ নামক এআই সংস্থা, যা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করছে।
চীনের নীতিনির্ধারকরা দেশের ভবিষ্যৎ কৌশলে প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন, যা আগামী বছরের জন্য দেশটির প্রধান অর্থনৈতিক লক্ষ্য নির্ধারণ করবে।
গাজার যুদ্ধবিরতি অনিশ্চয়তার মুখে
দ্য গার্ডিয়ান,
গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়েছিল দীর্ঘস্থায়ী শান্তি আলোচনা সহজ করার জন্য, কিন্তু এখন এটি সংকটের মুখে পড়েছে। ইসরায়েল গাজার ওপর খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে এবং নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে, যার মধ্যে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ও রয়েছে।
এই যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করছে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে ইউক্রেনকে সব ধরনের সামরিক সহায়তা স্থগিত করার ফলে মার্কিন-ইউক্রেন সম্পর্কের টানাপোড়েন বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সামগ্রিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
বিশ্ব সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগের সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, বিশেষত মানবিক সংকট ও সম্ভাব্য সংঘাতের নতুন দফা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
২০২৫ সালের জন্য চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস,
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনা সত্ত্বেও চীন ২০২৫ সালের জন্য প্রায় ৫% অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বেইজিংয়ে জাতীয় গণ কংগ্রেসে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে বড় ধরনের আর্থিক প্রণোদনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
সরকার বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি করে জিডিপির ৪% করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আগের বছরের ৩% থেকে বেড়েছে। পাশাপাশি ৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান মূল্যের বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করা হবে, যা ভোক্তা ভর্তুকি, শিল্প খাতের উন্নয়ন এবং কৌশলগত বিনিয়োগ প্রকল্পে ব্যয় করা হবে।
স্থানীয় সরকারগুলোর জন্যও বিশেষ বন্ড ইস্যুর পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে, যা আনুমানিক ৪.৫ থেকে ৪.৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ানের মধ্যে থাকবে। কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রায় ১.২ কোটি নতুন শহুরে চাকরি সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, পাশাপাশি বেকারত্বের হার ৫% এর মধ্যে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।