০২:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

মানুষের হাতে নগদ টাকা কম, চকবাজারে তাই এখনো জমেনি ইফতারির বাজার

  • Sarakhon Report
  • ০৭:০৫:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫
  • 19

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • ১৭০২ সালে দেওয়ান মুর্শিদ কুলি খাঁ চকবাজারকে আধুনিক বাজারে রূপান্তরিত করেন, যা পরবর্তীতে ইফতার বিক্রির ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হয়।

  • চলমান মূল্যস্ফীতি ও বেতনের দেরির কারণে এবছর ইফতার বাজারের শুরুতে স্বাভাবিক ভিড়ের অভাব দেখা গেছে।

  • ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ চকবাজারের অন্যতম জনপ্রিয় ইফতার আইটেম, যার স্বাদ ও উপাদানের বৈচিত্র্য অন্য কোথাও মেলে না।


‘রোজা খোলাই’ শব্দটি পুরান ঢাকার মানুষের মাঝে পরিচিত, যেহেতু ঐতিহ্যগতভাবে ইফতার ডাকার পদ্ধতিই এই শব্দের উৎস। চকবাজারের বিখ্যাত ইফতার বাজার ঢাকা ও দেশের নানা প্রান্তের মানুষের জন্য চার শত বছরের ঐতিহ্যের সঙ্গে বৈচিত্র্য ও স্বাদের মিলনে এক অনন্য আকর্ষণ।

ঐতিহ্য ও ইতিহাস

  • ১৭০২ সালের রূপান্তর:
    ঢাকার দেওয়ান মুর্শিদ কুলি খাঁ যখন ১৭০২ সালে চকবাজারকে আধুনিক বাজারে রূপান্তরিত করেন, তখন শাহী মসজিদের সামনে এক কূপের চারপাশে চেয়ার ও টেবিল বিছিয়ে ইফতার সামগ্রী বিক্রি হতো।
  • ঐতিহ্যের প্রমাণ:
    নাজির হোসেনের ‘কিংবদন্তির ঢাকা’ অনুযায়ী, ১৮৫৭ সালের আগেই চকবাজার জমজমাট হয়ে উঠেছিল এবং রোজার সময় এখানে মোগলাই খাবার ও বিভিন্ন ইফতার আইটেম বিক্রি হতো।

বর্তমান পরিস্থিতি

  • সাধারণ ভিড়ের অভাব:
    শত বছরের ঐতিহ্য সত্ত্বেও, এই রমজানের প্রথম তিন দিনে বাজারের প্রচলিত জমজমাট ভিড়ে ফাটল দেখা গেছে। ব্যবসায়ীদের মতে, রমজানের প্রথম দিন থেকেই সাধারণত ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমায়, তবে এ বছর ভিড় এখনও তেমন দেখা যাচ্ছে না।
  • ব্যাপারটি সোজাসাপ্টা:
    প্রায় ২০ বছর ধরে হালুয়া, জরদা ও ফিরনি বিক্রির ব্যবসায়ী মো. সোহরাব হোসেন জানান, “এবার লোক কম এসেছে, যদিও তিন দিনের মধ্যে একটু করে ভিড় বাড়ছে – আগে এতটা ছিল না।”

দাম ও পণ্যের তালিকা
গত বছরের তুলনায় বেশিরভাগ ইফতার আইটেমের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও, কিছু মাংসজাত দ্রব্যের দাম সামান্য বেড়ে গেছে এবং কিছু পণ্যের আকারে ছোটফাট এসেছে।
উদাহরণস্বরূপ:

  • তন্দুরি চিকেন: ৪০০ টাকা প্রতি পিস (আগে ছিল ৩০০ টাকা)
  • কোয়েলের রোস্ট: ৮০ টাকা প্রতি পিস (আগে ছিল ৬০ টাকা)
  • পাকিস্তানি মুরগির আস্ত রোস্ট: ২৫০-৩৫০ টাকা (গত বছর ছিল ২০০-৩০০ টাকা)

অতিরিক্ত কিছু মূল্য তালিকা:

  • মুরগির রোস্ট – ৩০০ টাকা
  • কোয়েল রোস্ট – ১০০ টাকা
  • গরুর কারি – ১৬০ টাকা
  • আস্ত গ্রিল – ৭০০ টাকা
  • টিকা কাবাব – ৩০ টাকা প্রতি পিস
  • ভেজিটেবল রোল – ৩০ টাকা
  • চিকেন রোল প্যাটিস – ৪০ টাকা
  • চিকেন প্যাটিস – ৫০ টাকা
  • চিকেন শর্মা – ৭০ টাকা
  • চিকেন ললিপপ – ৪০ টাকা
  • চিকেন রেশমি কাবাব – ৫০ টাকা
  • মিনি পিজ্জা – ৭০ টাকা
  • চিকেন টিক্কা – ২০০ টাকা
  • মুরগির কাঠি – ৮০ টাকা
  • বিফ জালি কাবাব – ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি
  • চিকেন তন্দুরি – ১৫০ টাকা
  • চিকেন কারি – ১৫০ টাকা
  • শাহী পরোটা – ৮০-১২০ টাকা
  • স্পেশাল পরোটা – ১৫০ টাকা
  • টানা পরোটা – ৪০ টাকা
  • চিকেন নাগেট – ৮০ টাকা
  • চিকেন লেগ – ১০০ টাকা
  • দই বড়া – ১২০ থেকে ২৪০ টাকা
  • শাহী জিলাপি – প্রতি কেজি সাড়ে ৩০০ টাকা
  • মাঠা – প্রতি কেজি ১০০ টাকা
  • হালিম – প্রতি বক্স ১০০ থেকে ৮০০ টাকা

বাজারে চাহিদা ও প্রত্যাশা

  • মূল কারণ:
    ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশে চলমান মূল্যস্ফীতি ও মাসের শুরুতেই রমজানের আগমন—এবং অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বেতন ১০ তারিখে প্রদেয় হওয়ায়, মানুষের হাতে নগদ অর্থ কম থাকায় ভিড় জমতে দেরি হয়েছে।
  • প্রত্যাশা:
    শরবত বিক্রেতা জানান, “টাকাপয়সার অভাবে ভিড় কম হওয়াটা স্বাভাবিক, তবে বেতন পাওয়ার পর দুই-চার দিনেই ভিড় আবার বাড়বে।”
  • বাজারের প্রতিযোগিতা:
    বিক্রেতা রমজান বলেন, “এখন এই বাজারের খাবার ঢাকার প্রতিটি স্থানে পাওয়া যাচ্ছে, শুধুমাত্র কয়েকটি ইউনিক আইটেম ব্যতীত।”

বিশেষ আকর্ষণ: বড় বাপের পোলায় খায়
চকবাজারের অন্যতম জনপ্রিয় ইফতার আইটেম “বড় বাপের পোলায় খায়”।

  • প্রস্তুত প্রণালী ও মূল্য:
    এই আইটেমের প্রস্তুতিতে মাংস, সুতি কাবাব, মাংসের কিমা, ডাবলি, বুটের ডাল, ডিম, মগজ, আলু, ঘি, কাঁচা ও শুকনা মরিচসহ নানা উপকরণ ও মসলা ব্যবহৃত হয়। দোকান ও মানভেদে এর মূল্য ৮০০-১২০০ টাকা প্রতি কেজি।
  • গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া:
    “এটাই চকবাজারের বিখ্যাত আইটেম; এর স্বাদ এবং মিশ্রণ অন্য কোথাও মেলে না।”

উপসংহার
চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার, যার চার শত বছরের ইতিহাস ও সৃজনশীলতা ঢাকার মানুষের কাছে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে, সাময়িক অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে এই বছর কম ভিড় দেখে হলেও ব্যবসায়ীরা আশাবাদী যে, কিছুদিনের মধ্যেই আগের মতো প্রাণবন্ত পরিবেশ ফিরে আসবে।

২০২৫ সালে ফিলিপাইনের ১২টি প্রধান অবকাঠামো প্রকল্প: রিয়েল এস্টেটের রূপান্তর

মানুষের হাতে নগদ টাকা কম, চকবাজারে তাই এখনো জমেনি ইফতারির বাজার

০৭:০৫:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ মার্চ ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • ১৭০২ সালে দেওয়ান মুর্শিদ কুলি খাঁ চকবাজারকে আধুনিক বাজারে রূপান্তরিত করেন, যা পরবর্তীতে ইফতার বিক্রির ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হয়।

  • চলমান মূল্যস্ফীতি ও বেতনের দেরির কারণে এবছর ইফতার বাজারের শুরুতে স্বাভাবিক ভিড়ের অভাব দেখা গেছে।

  • ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ চকবাজারের অন্যতম জনপ্রিয় ইফতার আইটেম, যার স্বাদ ও উপাদানের বৈচিত্র্য অন্য কোথাও মেলে না।


‘রোজা খোলাই’ শব্দটি পুরান ঢাকার মানুষের মাঝে পরিচিত, যেহেতু ঐতিহ্যগতভাবে ইফতার ডাকার পদ্ধতিই এই শব্দের উৎস। চকবাজারের বিখ্যাত ইফতার বাজার ঢাকা ও দেশের নানা প্রান্তের মানুষের জন্য চার শত বছরের ঐতিহ্যের সঙ্গে বৈচিত্র্য ও স্বাদের মিলনে এক অনন্য আকর্ষণ।

ঐতিহ্য ও ইতিহাস

  • ১৭০২ সালের রূপান্তর:
    ঢাকার দেওয়ান মুর্শিদ কুলি খাঁ যখন ১৭০২ সালে চকবাজারকে আধুনিক বাজারে রূপান্তরিত করেন, তখন শাহী মসজিদের সামনে এক কূপের চারপাশে চেয়ার ও টেবিল বিছিয়ে ইফতার সামগ্রী বিক্রি হতো।
  • ঐতিহ্যের প্রমাণ:
    নাজির হোসেনের ‘কিংবদন্তির ঢাকা’ অনুযায়ী, ১৮৫৭ সালের আগেই চকবাজার জমজমাট হয়ে উঠেছিল এবং রোজার সময় এখানে মোগলাই খাবার ও বিভিন্ন ইফতার আইটেম বিক্রি হতো।

বর্তমান পরিস্থিতি

  • সাধারণ ভিড়ের অভাব:
    শত বছরের ঐতিহ্য সত্ত্বেও, এই রমজানের প্রথম তিন দিনে বাজারের প্রচলিত জমজমাট ভিড়ে ফাটল দেখা গেছে। ব্যবসায়ীদের মতে, রমজানের প্রথম দিন থেকেই সাধারণত ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমায়, তবে এ বছর ভিড় এখনও তেমন দেখা যাচ্ছে না।
  • ব্যাপারটি সোজাসাপ্টা:
    প্রায় ২০ বছর ধরে হালুয়া, জরদা ও ফিরনি বিক্রির ব্যবসায়ী মো. সোহরাব হোসেন জানান, “এবার লোক কম এসেছে, যদিও তিন দিনের মধ্যে একটু করে ভিড় বাড়ছে – আগে এতটা ছিল না।”

দাম ও পণ্যের তালিকা
গত বছরের তুলনায় বেশিরভাগ ইফতার আইটেমের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও, কিছু মাংসজাত দ্রব্যের দাম সামান্য বেড়ে গেছে এবং কিছু পণ্যের আকারে ছোটফাট এসেছে।
উদাহরণস্বরূপ:

  • তন্দুরি চিকেন: ৪০০ টাকা প্রতি পিস (আগে ছিল ৩০০ টাকা)
  • কোয়েলের রোস্ট: ৮০ টাকা প্রতি পিস (আগে ছিল ৬০ টাকা)
  • পাকিস্তানি মুরগির আস্ত রোস্ট: ২৫০-৩৫০ টাকা (গত বছর ছিল ২০০-৩০০ টাকা)

অতিরিক্ত কিছু মূল্য তালিকা:

  • মুরগির রোস্ট – ৩০০ টাকা
  • কোয়েল রোস্ট – ১০০ টাকা
  • গরুর কারি – ১৬০ টাকা
  • আস্ত গ্রিল – ৭০০ টাকা
  • টিকা কাবাব – ৩০ টাকা প্রতি পিস
  • ভেজিটেবল রোল – ৩০ টাকা
  • চিকেন রোল প্যাটিস – ৪০ টাকা
  • চিকেন প্যাটিস – ৫০ টাকা
  • চিকেন শর্মা – ৭০ টাকা
  • চিকেন ললিপপ – ৪০ টাকা
  • চিকেন রেশমি কাবাব – ৫০ টাকা
  • মিনি পিজ্জা – ৭০ টাকা
  • চিকেন টিক্কা – ২০০ টাকা
  • মুরগির কাঠি – ৮০ টাকা
  • বিফ জালি কাবাব – ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি
  • চিকেন তন্দুরি – ১৫০ টাকা
  • চিকেন কারি – ১৫০ টাকা
  • শাহী পরোটা – ৮০-১২০ টাকা
  • স্পেশাল পরোটা – ১৫০ টাকা
  • টানা পরোটা – ৪০ টাকা
  • চিকেন নাগেট – ৮০ টাকা
  • চিকেন লেগ – ১০০ টাকা
  • দই বড়া – ১২০ থেকে ২৪০ টাকা
  • শাহী জিলাপি – প্রতি কেজি সাড়ে ৩০০ টাকা
  • মাঠা – প্রতি কেজি ১০০ টাকা
  • হালিম – প্রতি বক্স ১০০ থেকে ৮০০ টাকা

বাজারে চাহিদা ও প্রত্যাশা

  • মূল কারণ:
    ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশে চলমান মূল্যস্ফীতি ও মাসের শুরুতেই রমজানের আগমন—এবং অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বেতন ১০ তারিখে প্রদেয় হওয়ায়, মানুষের হাতে নগদ অর্থ কম থাকায় ভিড় জমতে দেরি হয়েছে।
  • প্রত্যাশা:
    শরবত বিক্রেতা জানান, “টাকাপয়সার অভাবে ভিড় কম হওয়াটা স্বাভাবিক, তবে বেতন পাওয়ার পর দুই-চার দিনেই ভিড় আবার বাড়বে।”
  • বাজারের প্রতিযোগিতা:
    বিক্রেতা রমজান বলেন, “এখন এই বাজারের খাবার ঢাকার প্রতিটি স্থানে পাওয়া যাচ্ছে, শুধুমাত্র কয়েকটি ইউনিক আইটেম ব্যতীত।”

বিশেষ আকর্ষণ: বড় বাপের পোলায় খায়
চকবাজারের অন্যতম জনপ্রিয় ইফতার আইটেম “বড় বাপের পোলায় খায়”।

  • প্রস্তুত প্রণালী ও মূল্য:
    এই আইটেমের প্রস্তুতিতে মাংস, সুতি কাবাব, মাংসের কিমা, ডাবলি, বুটের ডাল, ডিম, মগজ, আলু, ঘি, কাঁচা ও শুকনা মরিচসহ নানা উপকরণ ও মসলা ব্যবহৃত হয়। দোকান ও মানভেদে এর মূল্য ৮০০-১২০০ টাকা প্রতি কেজি।
  • গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া:
    “এটাই চকবাজারের বিখ্যাত আইটেম; এর স্বাদ এবং মিশ্রণ অন্য কোথাও মেলে না।”

উপসংহার
চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার, যার চার শত বছরের ইতিহাস ও সৃজনশীলতা ঢাকার মানুষের কাছে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে, সাময়িক অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে এই বছর কম ভিড় দেখে হলেও ব্যবসায়ীরা আশাবাদী যে, কিছুদিনের মধ্যেই আগের মতো প্রাণবন্ত পরিবেশ ফিরে আসবে।