সামিরা হুসেইন
বিবিসি দক্ষিণ এশিয়া সংবাদদাতা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা বলেছেন, দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারানোর পর যখন তাকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়, তখন তিনি “অবাক” হয়ে গিয়েছিলেন।
“আমি কখনো ভাবিনি যে আমি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেব,” বিবিসিকে জানিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনুস। “আমি আগে কখনো প্রশাসন চালাইনি, তাই সঠিকভাবে সবকিছু সামলাতে হয়েছে।”
“একবার যখন বিষয়টি স্থিতিশীল হলো, তখন আমরা কাজ গোছানো শুরু করলাম,” বলেছেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। তিনি যোগ করেন, দেশের জন্য আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতি ঠিক করা ছিল অগ্রাধিকার।
এখনো পরিষ্কার নয় যে, ভারতে নির্বাসিত শেখ হাসিনা এবং তার দল আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, যা ইউনুস এই বছরের শেষের দিকে আয়োজন করার পরিকল্পনা করছেন। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশে মামলা রয়েছে।
“তারা [আওয়ামী লীগ] সিদ্ধান্ত নেবে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, এটা আমি নির্ধারণ করতে পারি না,” বলেছেন ইউনুস, ঢাকায় তার সরকারি বাসভবনে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে।
“নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে কে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।”
তিনি বলেন, “শান্তি ও শৃঙ্খলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এবং অর্থনীতি। এটি একটি ভেঙে পড়া অর্থনীতি, বিধ্বস্ত অর্থনীতি।
“এমন মনে হচ্ছে যেন ১৬ বছর ধরে একটি ভয়াবহ টর্নেডো চলেছে এবং আমরা এখন এর ধ্বংসাবশেষ থেকে পুনর্গঠন করছি।”
শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং কঠোর হাতে বাংলাদেশ শাসন করেন। তার আওয়ামী লীগ সরকার ভিন্নমতাবলম্বীদের কঠোরভাবে দমন করেছিল। তার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিস্তৃত অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের হত্যা ও কারাবন্দি করার ঘটনাও ঘটেছে।
একটি ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে গত আগস্টে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। আন্দোলনকারীদের দাবির পর, ইউনুস দেশে ফিরে এসে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, তার সরকার ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করবে, এই সময়ের মধ্যে তারা যে সংস্কারগুলো দরকার বলে মনে করেন, তা কার্যকর করতে পারবেন।
“যদি সংস্কার দ্রুত করা যায়, তাহলে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। যদি দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার দরকার হয়, তাহলে কয়েক মাস বেশি লাগতে পারে।”
“আমরা একেবারে বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে আসছি,” তিনি বলেন, বাংলাদেশের গত গ্রীষ্মের সহিংস আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করে। “মানুষ গুলিবিদ্ধ হচ্ছে, নিহত হচ্ছে।”
কিন্তু সাত মাস পার হলেও, ঢাকার মানুষ বলছে আইন-শৃঙ্খলা এখনো স্বাভাবিক হয়নি এবং পরিস্থিতি উন্নতির কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।
“উন্নতি আপেক্ষিক বিষয়,” তিনি বলেন। “যদি আপনি গত বছরের এই সময়ের সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে পরিস্থিতি ভালো দেখাবে।
“তবে এখন যা ঘটছে, তা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়।”
বাংলাদেশের বর্তমান সংকটের জন্য ইউনুস আগের সরকারকে দায়ী করেন।
“আমি বলছি না যে, এসব হওয়া উচিত। আমি বলছি, আপনাকে এটা বুঝতে হবে যে আমরা কোনো আদর্শ দেশ কিংবা আদর্শ শহর তৈরি করিনি। আমরা এমন একটি দেশ উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি, যা বহু বছর ধরে চলছে।”
শেখ হাসিনার কঠোর শাসনের শিকাররা এখনো ক্ষুব্ধ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাজারো বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমেছে, ছাত্র আন্দোলনের ওপর প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের জন্য তার বিচার দাবিতে।
বাংলাদেশের একটি আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, কিন্তু ভারত এখনো এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এখন ইউনুসের নেতৃত্বে, আওয়ামী লীগের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ফেব্রুয়ারিতে, আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার বাড়িঘর, যার মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও শেখ হাসিনার প্রয়াত বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িও ছিল, তা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। ওই ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই হাসিনার সমর্থকদের জানানো হয়েছিল যে, তিনি ইউটিউবে ভাষণ দেবেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সহিংসতাকে বৈধতা দিচ্ছে।
বিবিসি যখন আওয়ামী লীগের সদস্যদের দাবি নিয়ে প্রশ্ন করে যে, বাংলাদেশ এখন তাদের জন্য নিরাপদ নয়, তখন ইউনুস দ্রুত তার সরকারের পক্ষে সাফাই গাইলেন।
“আদালত আছে, আইন আছে, থানায় অভিযোগ জানান,” তিনি বলেন। “আপনারা শুধু বিবিসি সংবাদদাতার কাছে অভিযোগ জানাবেন না, থানায় গিয়ে অভিযোগ জানান এবং দেখুন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না।”
ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশি সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার এবং মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (USAID) কার্যক্রম প্রায় বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাংলাদেশসহ অনেক দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
“এটা তাদের সিদ্ধান্ত,” বলেন ইউনুস।
“তবে এটি সহায়ক হয়েছে। কারণ তারা এমন কিছু করছিল, যা আমরা করতে চেয়েছিলাম, যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা, যা আমরা তাৎক্ষণিকভাবে বহন করতে পারছিলাম না।”
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম উন্নয়ন সহায়তা প্রদানকারী দেশ। গত বছর, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছিল।
এই ঘাটতি কীভাবে পূরণ করা হবে জানতে চাইলে ইউনুস বলেন, “যখন এটি ঘটবে, তখন আমরা ব্যবস্থা নেব।”
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সাভিস এর ইংরেজি থেকে অনূদিত