সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- সরকারি খাদ্য বিতরণ হ্রাস: চাল ও গমের বিতরণ ১১.২০% কমেছে
- নিম্ন আয়ের মানুষরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ন্যায্যমূল্যে চাল-আটা কিনতে পারছেন না
- রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি এবং সরকারি দপ্তরের কার্যক্রম শিথিল হওয়া
- সরকারি খাদ্য গুদামে মজুত কমে ১৫.১৭ লাখ টনে নেমেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৯৪ হাজার টন কম
বর্তমানে বাজারে চালের দাম বেড়েছে। মোটা চালের কেজি ৫৫ টাকা, সরু চালের দাম আরও বেশি। এরই মধ্যে সরকার চাল ও গমের বিতরণ কমিয়ে দিয়েছে, যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সংকট সৃষ্টি করছে।
সরকারি খাদ্য বিতরণের পরিসংখ্যান
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৭.৬৫ লাখ মেট্রিক টন চাল ও গম বিতরণ করা হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় ১১.২০% কম।
- চালের বিতরণ কমেছে ১.৮৫ লাখ টন।
- গম ও আটার বিতরণ কমেছে ৩৮ হাজার টন।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ হ্রাস
সরকারের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ কমেছে। বিশেষত, কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), ভিজিএফ, ভিজিডি-র মতো কর্মসূচিতে খাদ্য বিতরণ কমানো হয়েছে।
কর্মসূচি | ২০২৩-২৪ (মেট্রিক টন) | ২০২৪-২৫ (মেট্রিক টন) |
কাবিখা | ১,০৬,৬৬৯ | ১৭৯ |
ভিজিএফ | ৪৭,৩০৮ | ২৫,৫২২ |
ভিজিডি | ২,৪৯,৬৮৮ | ১,৮৬,৭৭৯ |
মোট ১৬ কর্মসূচি | ১৯,৮৭,২৫৮ | ১৭,৬৪,৫২৮ |
রাজনৈতিক পরিবর্তন ও সরকারি সিদ্ধান্ত
একজন খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি এবং সরকারি দপ্তরের কার্যক্রম শিথিল হয়েছে, যার ফলে খাদ্য বিতরণ কমে গেছে। তবে আগামী মাস থেকে ১.৫ লাখ টন চাল বিতরণ শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।
সরকারি খাদ্য মজুতের সংকট
সরকারি খাদ্য গুদামে মজুত কমে ১৫.১৭ লাখ টনে নেমেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৯৪ হাজার টন কম। বিশেষত চালের মজুত হ্রাস পেয়েছে, যা বাজারে সরবরাহ সংকটের অন্যতম কারণ।
খাদ্য আমদানি পরিস্থিতি
সরকার চাল আমদানির উদ্যোগ নিলেও বিশ্ববাজারে চালের উচ্চমূল্য ও ডলারের দরবৃদ্ধির কারণে আমদানি লাভজনক হচ্ছে না।
- বেসরকারি আমদানি: ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৪ মার্চ পর্যন্ত ২.৬৪ লাখ টন চাল আমদানি করা হয়েছে।
- সরকারি আমদানি: মিয়ানমার থেকে ১ লাখ টন, ভিয়েতনাম থেকে ১ লাখ টন, এবং পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চাল সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।
বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি
সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী,
- মোটা চালের দাম: ৫০-৫৮ টাকা কেজি, যা এক বছর আগের তুলনায় ১০% বেশি।
- সরু চালের দাম আরও বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।
দরিদ্রদের দুর্ভোগ
খাদ্য সহায়তার অভাবের কারণে ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) দোকানগুলোতে দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে।
- নিম্ন আয়ের মানুষরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ন্যায্যমূল্যে চাল-আটা কিনতে পারছেন না।
- বিতরণ কমে যাওয়ায় অনেকেই প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পাচ্ছেন না।
অর্থনীতিবিদদের উদ্বেগ
একজন প্রাক্তন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ বলেন,
- ভিজিএফ, ভিজিডি, ওএমএস কর্মসূচির সুবিধাভোগী মূলত দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
- এই কর্মসূচিগুলো সংকুচিত হলে দারিদ্র্য আরও বাড়বে এবং সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
সংক্ষেপিত বিশ্লেষণ
বাজারে চালের দাম বাড়লেও সরকারি বিতরণ কমেছে।
খাদ্য গুদামের মজুত কম থাকায় ওএমএস কর্মসূচিতে চাপ বেড়েছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিতরণ প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
খাদ্য আমদানির উচ্চমূল্য এবং ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, খাদ্য সহায়তা কমলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কষ্ট আরও বাড়বে।
উপসংহার
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সহায়তা বৃদ্ধি করা জরুরি। সরকার যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়, তবে এই সংকট কিছুটা লাঘব হতে পারে।