সারাক্ষণ রিপোর্ট
গত বছর ভালো লাভ করলেও, এবার পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পাবনা ও ফরিদপুরের কৃষকরা উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না, যা তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম হ্রাস
পাবনার পুষ্পপাড়া পাইকারি বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ব্যাপকভাবে কমেছে:
- গত সপ্তাহে: প্রতি মণ (৪০ কেজি) ১,৪০০-১,৫০০ টাকা
- সোমবার: দাম কমে ১,২০০-১,৩০০ টাকা
- বৃহস্পতিবার: আরও কমে ৮০০-১,১০০ টাকা
এছাড়া, নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লেও চাহিদা কম।
- সোমবার: বাজারে ৮০-১০০ টন পেঁয়াজ ছিল
- বৃহস্পতিবার: সরবরাহ বেড়ে ২০০ টনের বেশি হয়েছে
উৎপাদন খরচের চাপে কৃষকরা
পাবনার একটি উপজেলার কৃষক মো. ইলিয়াস জানান,
- গত বছর: প্রতি মণ পেঁয়াজ ২,৫০০-৩,০০০ টাকা দামে বিক্রি করেছিলেন।
- এবার: দাম অনেক কমে যাওয়ায় তিনি বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
- তিনি ৮০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন, যার মধ্যে ৩০ বিঘা লিজ নেওয়া।
চাষের খরচ সম্পর্কে তিনি বলেন,
- নিজের জমিতে প্রতি বিঘায় ২৫,০০০-৩০,০০০ টাকা খরচ হয়েছে।
- লিজ নেওয়া জমিতে খরচ ৫০,০০০ টাকারও বেশি পড়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান,
- বীজ, সার ও লিজ খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে ৩৮ টাকা ব্যয় হয়েছে।
- গত বছর লাভ বেশি হওয়ায় এ বছর কৃষকরা আরও বেশি জমিতে চাষ করেছেন।
- ফলে, দেশের মোট পেঁয়াজ চাষের পরিমাণ ১০% বেড়ে ২.৯৩ লাখ হেক্টরে পৌঁছেছে।
কৃষকদের ক্ষতির আশঙ্কা
বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের মন্তব্য
- গত বছর ১ লাখ টাকা লাভ করলেও এবার দামের পতনের কারণে দুশ্চিন্তায় আছেন।
- লাভ পেতে হলে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম কমপক্ষে ২,২০০ টাকা হতে হবে।
পাবনার গ্রামীন এলাকার কৃষক পবন ১০ বিঘা জমিতে ২.৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
- ঋণ: তিনি ৮০,০০০ টাকা ঋণ নিয়েছেন।
- বাকিতে কেনা সার: ৭০,০০০ টাকার সার বাকিতে কিনেছেন।
- “ঋণ শোধ করতে হলে পেঁয়াজ বিক্রি করতেই হবে, কিন্তু বর্তমান বাজারদর আমাদের জন্য উদ্বেগজনক,” তিনি বলেন।
- পাইকারি বাজারে প্রতি মণ ১,৪০০-১,৫০০ টাকায় বিক্রি হলে অন্তত ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।
বাজারে চাহিদা কম
পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লেও চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম।
ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানান,
- প্রতিদিন ১০-১২ ট্রাক পেঁয়াজ ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।
- তবে চট্টগ্রাম ও সিলেটে বিক্রি কম হচ্ছে।
- কারণ, সেখানে আমদানি করা পেঁয়াজের মজুত বেশি।
কৃষকদের জন্য পরামর্শ
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক বলেন,
- বাম্পার ফলনের কারণে সরবরাহ বেড়েছে, তাই দাম কমেছে।
- কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেন তারা আপাতত পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন।
- মৌসুম শেষে দাম বাড়তে পারে।
বর্তমানে কৃষকরা নিজ উদ্যোগে সংরক্ষণ করছেন, তবে সরকার উন্নত সংরক্ষণ সুবিধা তৈরির কাজ করছে। কারণ পাবনা দেশের অন্যতম প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল।
সারসংক্ষেপ
- নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় দাম কমে গেছে, ফলে কৃষকরা উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।
- সরবরাহ বেড়ে গেলেও চাহিদা কম থাকায় পাইকারি বাজারে দাম আরও পড়ার আশঙ্কা।
- ঋণের বোঝা ও লোকসানের আশঙ্কায় কৃষকরা দুশ্চিন্তায়।
- সরকার উন্নত সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে।