সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- আগে সার্ভিস চার্জ ৯.০৪% ছিল, যা এখন কমিয়ে ৫% করা হয়েছে
- অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদকদের মোট ১৯,৪৭৯.৭৪ কোটি বকেয়া রয়েছে
- এই পরিবর্তনের কারণে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ সংকট ও লোড শেডিংয়ের সমস্যা আরও তীব্র হতে পারে
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) হেভি ফুয়েল অয়েলের (এইচএফও) আমদানির সার্ভিস চার্জ ৯.০৪% থেকে কমিয়ে ৫% করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কারণে স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদকরা (আইপিপি) আর্থিক চাপের মুখোমুখি হতে পারে এবং ফুয়েল আমদানিতে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার ফলে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ সংকট আরও গভীর হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যেই তারা ৩,৬৬২ কোটি বকেয়া ঋণের ভার বহন করছে, যা তাদের ফুয়েল আমদানির সক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
মূল বিষয় ও বর্তমান পরিস্থিতি
- বিদ্যুৎ উৎপাদকরা বিলম্বিত পেমেন্ট,অবমূল্যায়িত টাকা ও উচ্চ করের কারণে আর্থিক চাপের সম্মুখীন।
• সার্ভিস চার্জ কমানোর ফলে অনেক উৎপাদক ফুয়েল আমদানির পরিবর্তে বিকল্পভাবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) থেকে ফুয়েল সংগ্রহের কথা ভাবছে।
• সরকার বিদ্যুৎ খাতের খরচ কমাতে সাবসিডি হ্রাসের উদ্যোগ নিচ্ছে, যাতে খাতে আর্থিক ভার হালকা হয়।
সার্ভিস চার্জ পরিবর্তনের বিশ্লেষণ
পিডিবি ১৪ ফেব্রুয়ারি পাঠানো একটি চিঠিতে ৪৮টি এইচএফও-ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টকে নতুন সার্ভিস চার্জের বিষয়ে অবহিত করেছে।
• আগে সার্ভিস চার্জ ৯.০৪% ছিল যা বিভিন্ন উপাদানে বিভক্ত – যেমন এলসি খোলার কমিশন, কনফার্মেশন চার্জ, ডিসকাউন্টিং চার্জ, কাস্টমস শুল্কের সুদ, স্টোরেজ ভাড়া, ইত্যাদি।
• পিডিবি কর্তৃক গঠিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট টেকনিক্যাল কমিটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে পূর্বের অনেক চার্জ আর প্রযোজ্য নয়, তাই তা ৫% এ কমানো উচিত।
সরকারি প্রতিক্রিয়া ও পরিকল্পনা
- সরকার বিদ্যুৎ খাতে প্রদত্ত ব্যাপক সাবসিডি কমাতে খরচ হ্রাসের পদক্ষেপ হিসেবে সার্ভিস চার্জ কমিয়েছে।
•পিডিবি-এর চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম মিডিয়াকে বলছেন, “সরকার বিদ্যুৎ খাতে প্রদত্ত সাবসিডি কমাতে খরচ কমানোর প্রয়াসে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।”
• যদি আইপিপি ফুয়েল আমদানিতে অনিচ্ছুক হয়, বিপিসি তাদের জন্য হেভি ফুয়েল সরবরাহের ব্যবস্থা করবে।
• বিদ্যুৎ বিভাগ সচিব ফরজানা মামতাজ জানান, বিপিসি অতিরিক্ত চাহিদা থাকলে সরবরাহের জন্য নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
বিপিসির স্টোরেজ ও জেটি সমস্যা
- বিপিসির মোট ফুয়েল স্টোরেজ ক্ষমতা ১.১০ লাখ থেকে ১.৭ লাখ টন হলেও,জেটির সীমিত ব্যবস্থাপনার কারণে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টন ফুয়েল কার্গো হ্যান্ডেল করা সম্ভব।
• বর্তমানে ৩-৪টি জেটি ব্যবহৃত হলেও, এই পরিমাণ যথেষ্ট না হওয়ায় কনজেশন এবং লজিস্টিক সমস্যার সম্মুখীন হওয়া দেখা যাচ্ছে।
• বিপিসি চেয়ারম্যান মোঃ আমীন উল আহসান মিডিয়াকে জানান, “জেটি ও স্টোরেজ ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা সর্বোচ্চ তিন থেকে চারটি কার্গোই আনতে পারি।”
বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া ঋণ
- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে বিদ্যুৎ খাতে বিলম্বিত পেমেন্টের সমস্যা জটিল হয়ে উঠেছে।
•অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদকদের মোট ১৯,৪৭৯.৭৪ কোটি বকেয়া রয়েছে, যার মধ্যে এইচএফও-ভিত্তিক প্ল্যান্টের ৩,৬৬২.৮৭ কোটি, গ্যাস-ভিত্তিক প্ল্যান্টের ৬,৪৫৬.৯৪ কোটি, কয়লা-ভিত্তিক প্ল্যান্ট এবং অন্যান্য উৎস অন্তর্ভুক্ত।
• সরকার মার্চ মাসে ৮,০০০ কোটি বরাদ্দ করে আইপিপির ফুয়েল আমদানির জন্য সমানভাবে বিতরণ করার পরিকল্পনা করেছে।
উপসংহার
নতুন সার্ভিস চার্জ নীতি বিদ্যুৎ খাতে খরচ কমানোর লক্ষ্যে গৃহীত হলেও, এর প্রভাব সরাসরি স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদকদের আর্থিক অবস্থায় ও ফুয়েল আমদানির সক্ষমতায় পড়তে পারে। এই পরিবর্তনের কারণে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ সংকট ও লোড শেডিংয়ের সমস্যা আরও তীব্র হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন।